বাংলাদেশের চাহিদার বেশির ভাগ পিঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি হয় হিলি বন্দর দিয়ে। প্রতিবছর চাহিদার কথা মাথায় রেখে ও বাজার স্বাভাবিক রাখতে ২ লাখ মেট্রিক টন পিঁয়াজ আমদানি করে থাকেন হিলির আমদানিকারকরা। চলতি বছরের ৬ জুন থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৩ মাসে পিঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৫৭ হাজার মেট্রিক টন।
পিঁয়াজ আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও বন্যা ও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে হঠাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। রপ্তানি বন্ধের পর ভারতের অভ্যন্তরে টানা ৫ দিন দাঁড়িয়ে থাকে দুই শতাধিক পিঁয়াজ বোঝাই ট্রাক। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১১ ট্রাকে ২৪৬ মেট্রিক টন পিঁয়াজ আমদানি হয়। আর এসব পিঁয়াজ অতিরিক্ত গরমে বেশির ভাগ পচে গেছে। পচা পিঁয়াজ রাখা হয়েছে হিলির বিভিন্ন আড়তের সামনে। এতে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারী ও এলাকাবাসী।
এদিকে আড়াই হাজার টাকা দামের পিঁয়াজের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১শ টাকা দরে। এরপরেও কিনছেন না অনেকে। কেউ কেউ ফেলে দিচ্ছেন বস্তাসহ পিঁয়াজ। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আড়ৎগুলোতে দেখা যায়, শনিবার ভারত থেকে আমদানিকৃত পিঁয়াজগুলোর বেশির ভাগ গরমে পচে গিয়ে পানি ঝরছে। দুর্গন্ধ ছড়ানোয় রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে পথচারীদের। অন্যদিকে লোড-আনলোড এর কাজ করতেও অনিহা প্রকাশ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। আর পচা পিঁয়াজ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১শ টাকা দরে। যার স্বাভাবিক বাজার মূল্য আড়াই হাজারের বেশি।
এদিকে, পিঁয়াজ আসার পর হিলি স্থলবন্দরের খুচরা ও পাইকারী বাজারে কমলেও দিনাজপুরের বাজারে এলসি পিঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা এবং দেশী পিঁয়াজ ৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কষ্টের সাথে কয়েকজন আমদানিকারক বলেন, \’চাইলাম পিঁয়াজ দিলো পানি।\’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার বন্যার কারণে উৎপাদন সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে করে টেন্ডারসহ এলসিকৃত পিঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ৫ দিন পিঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকার পর শনিবার ভারত সরকার টেন্ডার হওয়া ১১টি ট্রাকে মোট ২৪৬ মেট্রিকটন পিঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেন এবং তা হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করে। তবে যে সব পিঁয়াজ হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে তার ৫০ শতাংশ পিঁয়াজ অতিরিক্ত গরমে পচে গেছে। এসব পিঁয়াজ প্রতি বস্তা ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবং একটু ভালো মানের পিঁয়াজ প্রকার ভেদে ২৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন জানান, আমদানি করা পিঁয়াজে আমদানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। শনিবার পিঁয়াজ আসা ১১ ট্রাকের মালামালে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ক্ষতি হবে আমদানীকারকদের। ভারত সরকারের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আর পিঁয়াজের ট্রাক আসবে না বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, এখনও অনেক পিঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান করছে। সেই সব পিঁয়াজ নিয়ে আমদানিকারকরা দুশ্চিন্তায় আছেন