বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যামামলার রিমান্ডে থাকা আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তিন সদস্যের মধ্যে কনস্টেবল আবদুল্লাহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, তিনি বলেন, ‘সব কিছু ঘটে যায় মাত্র কয়েক মিনিটে। তবে ওই রাতে পরিদর্শক লিয়াকত আলী স্যারের আচরণ পেশাদার ছিল না। তখন তাকে ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল তিনি কিছু খুঁজছেন। চেকপোস্টে আমাদের কোনো কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। জ্যেষ্ঠতার প্রটোকল মেনে চেকপোস্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন লিয়াকত স্যার।’
কনস্টেবল আবদুল্লাহকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব আদালতে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ আদালতের খাসকামরায় ১৬৪ ধারায় ১৭ পৃষ্ঠার জবানবন্দি দেন তিনি। এর পর রাতেই তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তবে এপিবিএন সদস্য কী জবানবন্দি দিয়েছেন, এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো এপিবিএনের তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড নিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল র্যাব। এই তিন সদস্যকে গত ১৮ আগস্ট গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে ৭ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গত গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
মামলায় লিয়াকতসহ আসামি সাত জন
কক্সবাজারের টেকনাফে মেজর (অব) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যামামলায় সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, অপর দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে চট্টগ্রামের একটি আদালতে। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে অভিযোগ জমা দিয়ে মামলা হিসাবে গ্রহণের আবেদন জানানো হয়। আদালত তা আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনারকে (উত্তর) নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী এসএম জসিম উদ্দিন নগরীর পতেঙ্গা থানার নাসিরনগর এলাকার বাসিন্দা নেকবার হোসেনের ছেলে।
মামলায় ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় ও পরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ আনা হয়। একই মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ আরও ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হলেও আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেননি। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক এসআই লিয়াকত আলী এবং কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাবেক এসআই নজরুল ও হান্নান। এ ছাড়া এসএম সাহাবুদ্দিন, বিষ্ণুপদ পালিত, কাজল কান্তি বৈদ্য ও জিয়াউর রহমান নামে আরও চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে লিয়াকত আলী কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক থাকাবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যায় সম্প্রতি বরখাস্ত হয়েছেন।
জানা গেছে, মামলার বাদী এসএম জসিম উদ্দিন নগরীর সাগরিকা বিসিক শিল্প এলাকার একটি কারখানার মালিক। ২০১৩ সালে তার কারখানায় চুরির ঘটনায় আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডিবির তৎকালীন এসআই লিয়াকত আলী। তবে মামলা সঠিকভাবে তদন্তের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন তিনি। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৪ জুন বাদীকে নিজের অফিসে ডেকে নিয়ে উল্টো আসামিপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার জন্য চাপ দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয় জসিম উদ্দিনকে। চোখ খোলার পর দেখেন তিনি পতেঙ্গা থানায়। সেখানে কয়েকজন পুলিশ মিলে তাকে মারধর ও ইলেকট্রিকের শক দেন। এমনকি ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে আড়াই লাখ টাকা দেন।
মামলার বাদী জসিমের দাবি, টাকা দেওয়ার পরও কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার একটি ভুয়া পরোয়ানার মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় ছয় মাস জেল খেটে জামিনে বের হন তিনি। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের সবাই তাকে নির্যাতন, ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে টাকা আদায় এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত। মামলার আরজিতে বাদী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ১২০(খ), ১৬১, ১৬৬, ২২০, ৩০৭, ৩২৩, ৩২৫, ৩৬৪, ৩৭৯, ৪৬৬, ৪৬৯, ৪৭১, ১৪৯, ৫০৬ ধারায় অভিযোগ এনেছেন।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী জুয়েল দাশ বলেন, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত সাতজনের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাকি ছয়জনের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা প্রতিবেদনে যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাদের অভিযোগ আদালত আমলে নেননি তারা হলেন- ডিবির সাবেক এসআই সন্তোষ কুমার, পতেঙ্গা থানার সাবেক এসআই কামরুল, সদরঘাট থানার সাবেক এসআই তালাত মাহমুদ, পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে নগরীর খুলশী থানার ওসি) প্রণব চৌধুরী, সদরঘাট থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া থানার ওসি) মর্জিনা বেগম এবং ডিবির সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (পরে চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া) বাবুল আক্তার।
এপিবিএন সদস্যের জবানবন্দি
কক্সবাজার থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রিমান্ডে থাকা আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তিন সদস্যদের মধ্যে কনস্টেবল আবদুল্লাহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব আদালতে নিয়ে আসে তাকে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ আদালতের খাসকামরায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।
জবানবন্দি দেওয়ার পর রাতেই কনস্টেবল আবদুল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। আদালতে এ এপিবিএন সদস্য কী জবানবন্দি দিয়েছেন এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো এপিবিএনের তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড নিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল র্যাব। এই তিন সদস্যকে গত ১৮ আগস্ট গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে ৭ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।