জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের বিরোধিতা করে আবারও তিনি নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়েছেন। আজ বুধবার কমিশনের বৈঠকে তিনি এই নোট অব ডিসেন্ট দেন। পরে নির্বাচন ভবনে নিজের দফতরে তিনি সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান।
মাহবুব তালুকদার বলেন, \’আজকের কমিশন বৈঠকে কার্যপত্রে বলা হয়েছে— নির্বাচন কমিশনের ৬৩তম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন, ২০২০’ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়। এই আইন সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনায় নির্বাচন কমিশনে নানা রূপ মতদ্বৈধতা ছিল। আইনটি মতামত যাচাইয়ের পূর্বে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনে আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল।\’
তিনি বলেন, \’সমঝোতার পথ খুঁজে পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি। ভিন্নমত অবশ্যই প্রকাশিত হতে হবে। ভিন্নমত যদি প্রকাশিত না হয় তাহলে সেটা ভিন্নমত হতে পারে না। আমি যতবার নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি, তা বাধ্য হয়েই দিয়েছি। আমি সমঝোতার কোনো পথ খুঁজে পাইনি। এখানে কিছু বিষয় রয়েছে যাতে কোনো সমঝোতা হয় না। আমি এখানে বলেছি, আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই। তারপরও আমার কথাটা তো কেউ মেনে নিচ্ছে না। যার রেকর্ড রাখার জন্য আমি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি।\’
সিইসির কাছে দেওয়া নোট অব ডিসেন্টে এই জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর ‘চ্যাপ্টার সিক্স এ’-এর বিভিন্ন আর্টিকেল কর্তন করে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন, ২০২০ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমি এই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। আরপিও বা ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর অংশবিশেষ নিয়ে পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন হটকারী সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, আমি পূর্বেও বলেছি, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ একটি ঐতিহাসিক আইনগত দলিল, যা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার অনন্য স্মারক। নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব গৃহীত হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অঙ্গহানি ঘটবে, যাতে একে বিকলাঙ্গ মনে হবে।
মাহবুব তালুকদার বলেন, প্রস্তাবিত ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন, ২০২০’-এর প্রারম্ভিক অংশে ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রয়োগ ও প্রবর্তন ইত্যাদি পরিবর্তন বিষয়ে আমি একমত নই। এতে সজ্ঞা পরিবর্তন করে নতুন যে পদ-পদবি প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আমার কাছে অনাবশ্যক মনে হয়।
\’রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত যে ৫০টি মতামত পাওয়া গেছে, তাতে এসব পদ-পদবি পরিবর্তনের বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। কী কারণে বা কোন যুক্তিতে এই পরিবর্তন প্রয়োজন, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ‘আরপিও, ৭২’-এর সংশোধন করা যেতে পারে, যা পূর্বেও করা হয়েছে। আমি মনে করি, আইনের পরিবর্তন আইন কমিশনের কাছে ন্যস্ত থাকাই সমীচীন।\’
গত সোমবারও মাহবুব তালুকদার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন পরিচালনা আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট দেন।