বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা। এসব আলোচনার বেশিরভাগই চলছে সিনহা ও টেকনাফ পুলিশকে কেন্দ্র করে।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক কোন দিকে গড়ায় সেদিকেও নজর রয়েছে অনেকের। যদিও দুই বাহিনীর প্রধান এরই মধ্যে পরিষ্কার করে দিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা নিহত হওয়ার বিষয়টি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
এসব আলোচনার ভিড়ে অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে নিহত সিনহা রাশেদের সাথে থাকা তিন শিক্ষার্থীর কথা।
সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গে কক্সবাজারে ডকুমেন্টারি নির্মাণের সময় যে তিনজন সঙ্গে ছিলেন তাঁদের মুক্তির দাবিতে সহপাঠীরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন।
তিন শিক্ষার্থীর কী অবস্থা?
এই তিনজন বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী। এঁরা হলেন শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং তাহসিন রিফাত নূর। এঁদের মধ্যে তাহসিন রিফাত নূরকে তাঁর অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুইজন শিপ্রা দেবনাথ এবং সাহেদুল ইসলাম সিফাত এখনও কক্সবাজার কারাগারে।
সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
পুলিশের গুলিতে যখন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হন তখন সেখানে ছিলেন সাহেদুল ইসলাম সিফাত। সিফাতের বিরুদ্ধে একটি মামলা হচ্ছে, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করার জন্য তাক করা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের সঙ্গে যোগসাজশে সিফাত এ কাজ করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা আরেকটি মামলা মাদকদ্রব্য আইনে। সে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবৈধ মাদক জাতীয় ইয়াবা এবং গাঁজা যানবাহনে নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধ।
অন্যদিকে, শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি বিদেশি মদ, দেশি চোলাই মদ ও গাঁজা নিজ হেফাজতে রেখেছেন।
পুলিশের ভাষ্যমতে, আত্মরক্ষার জন্য মেজর রাশেদ খানকে গুলি করার পর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্টে তাঁদের অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এরপর সেটি খুঁজতে পুলিশ রিসোর্টে যায়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সে রিসোর্টে গিয়ে একটি কক্ষে শিপ্রা দেবনাথ এবং আরেকটি কক্ষে তাহসিন রিফাত নূরকে পাওয়া যায়। এজাহারে পুলিশ উল্লেখ করেছে, শিপ্রা দেবনাথের কক্ষ তল্লাশি করে সেখানে বিদেশি মদ, দেশি চোলাই মদ এবং গাঁজা পাওয়া যায়।
পরিবার কী বলছে?
শিপ্রা দেবনাথের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায়। তাঁর বাবা-মা সেখানেই বসবাস করেন। ঢাকার রামপুরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন শিপ্রা দেবনাথ। তাঁর মা পূর্ণিমা দেবনাথ টেলিফোনে জানান, গ্রেপ্তারের পর থেকে মেয়ের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ হয়নি।
কক্সবাজারে অবস্থানরত তাঁদের পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে সেখানে একজন আইনজীবী ঠিক করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটি করা হয়েছে কি-না, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই শিপ্রা দেবনাথের মায়ের।
শিপ্রা দেবনাথের একমাত্র ভাই প্রান্ত দেবনাথ বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে টেলিফোনে তিনি জানান, বছর খানেক আগে কোনো এক বন্ধুর মাধ্যমে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সঙ্গে পরিচয় হয় শিপ্রা দেবনাথের। দুজনেরই আগ্রহের ক্ষেত্র ছিল ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ডকুমেন্টারি নির্মাণ করা।
অন্যদিকে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলায়। ঢাকার মধুবাগ এলাকায় খালার বাসায় বসবাস করতেন তিনি। তাঁর মা লন্ডনে বসবাস করেন। বাংলাদেশে তাঁর নিকটাত্মীয় বলতে খালা এবং মামা।
সিফাতের খালু মাসুম বিল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাঁকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে সিফাতের মানসিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁর খালু। জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের পর একবার টেলিফোনে কথা বলা সম্ভব হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন মাসুম বিল্লাহ। মাসুম বিল্লাহ বলেন, \’দেখুন ওর সামনেই গুলির ঘটনা ঘটেছে। ও প্রচণ্ড ট্রমার মধ্যে আছে।\’
শিপ্রা দেবনাথ এবং সাহেদুল ইসলাম সিফাত উভয়ের জন্য একজন আইনজীবী ঠিক করা হয়েছে কক্সবাজারে। আইনজীবী আবুল কালাম আজাদের অফিস থেকে জানানো হয়েছে উভয়ের জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) অথবা রবিবার (৯ আগস্ট) জামিনের শুনানি হতে পারে।
সূত্র : বিসিসি বাংলা