মহামারী করোনাকালীন সময়ে শ্রম গ্রহণকারী দেশগুলো অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তনে বাধ্য করাসহ তাদের প্রাপ্য মজুরি এবং অন্যান্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেছে। ফেরত আসা অভিবাসীদের পাওনার পরিমান ৯ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। যেখানে গড়ে এক একজনের এক লাখ ৭৫০০০ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সোমবার (২২ জুন) ‘বিশ্বায়নের অন্যরুপ’-বাধ্য হয়ে ফিরে আসা বাংলাদেশি শ্রমিক ও তাদের বকেয়া শীর্ষক জুমিনারে এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। গত তিনমাসে ফিরে আসা ৫০ জন অসহায় অভিবাসীর ওপর রামরু একটি গবেষণা পরিচালনা করে।
রামরু-র নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সি আর আবরারের পরিচালনায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী। জুমিনারে সংসদ সদস্য শিরিন আকতার, আরোমা দত্ত, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এবং মাইগ্রেশন ফোরাম ইন এশিয়ার সমন্বয়কারী উইলিয়াম গয়েজ জুমিনারে অংশ নেন।
জুমিনারে মূল আলোচক ও যুক্ত বক্তারা রামরু-র গবেষণার এই প্রাপ্তিকে বিশেষভাবে বিবেচনায় রেখে সবার সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার দিকে গুরুত্ব দেন। তারা মনে করেন ইতিপূর্বেও গন্তব্য দেশে অভিবাসীর প্রতি মজুরি চুরিসহ যেসব অন্যায় হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারিতে তার মাত্রা বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে। অবিলম্বে এটি বন্ধে সরকার, সিভিল সমাজ এর পাশাপাশি দাতাগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সমূহের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
বক্তরা বলেন, এ পর্যন্ত ১৯টি দেশে এক হাজার ১০৬ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছে। তাই শ্রম গ্রহণকারী দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরে আসা অভিবাসীদের ডাটাবেইজ, প্রাপ্য নিশ্চিতসহ ভবিষ্যতে যেন আবার যেতে পারে সেক্ষেত্রে মিশনগুলোর দায়িত্বের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
রামরুর গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত কেসের তিন চতুর্থাংশ অভিবাসীকেই রাস্তাঘাট, দোকান ইত্যাদি এলাকা থেকে পুলিশ তুলে জেলে/ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রেরণ করেছে, এক দশমাংশ স্ব-ইচ্ছায় ফিরে এসেছে এবং বাকিরা ছুটিতে এসেছে। সাক্ষাৎকারীদের ২৬ শতাংশের ওই দেশে কোনো দেনা-পাওনা নেই। কিন্তু ৭৮ শতাংশের কিছু না কিছু পাওনা রয়ে গেছে। এগুলো মূলত তাদের পাওনা বেতন একইসঙ্গে কিছু স্থানীয় বন্ধুদের বিপদে ধার দেওয়া, ভিসা রিনিউ করার জন্য দেওয়া টাকা।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের সময় এইসব দেশগুলো একটা কারণ দেখিয়েছিল, জেলে থাকা অভিবাসীদের কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ রাখার জন্যই তাদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। অথচ এই কেসগুলো প্রমাণ করে, তাদের সবাই আগে জেলে/ডিটেনশন ক্যাম্পে ছিল না, তাদের কোভিডের সময় জেলে নেওয়া হয়েছে। এক একজন ২০-২৮ দিনের মতো এক কাপড়ে জেলে ছিলেন, কেউ কেউ সেলোফিনের প্যাকেট পড়ে গোছল করে আবার পুরোনো কাপড় পড়েছেন।
রামরুর গবেষণায় অভিবাসীদের সুরক্ষায় ১৯৯০ কনভেনশনকে আবারও সামনে আনার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
মাইগ্রেশন ফোরাম এশিয়ার সমন্বয়কারী উইলিয়ম গয়েজ বলেন, যেকোনো দেশ থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে লোক ফেরত আনার আগে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা ওইসব অভিবাসীদের ওই দেশে বেতন বা অন্য কোনো পাওনা থাকলে সেটা জেনে অভিবাসীদের কাছ থেকে তা আদায়ের জন্য পাওয়ার অব এ্যাটর্নি নিয়ে নিতে পারে এবং পরে দেশে তাকে টাকা ফেরত এনে নিতে পারে।