লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল বর্তমানে তিনি কুয়েতে মানবপাচার ও মানিলন্ডারিংয়ের মামলায় গ্রেফতার। জানা গেছে, স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এমপি পাপুল। কুয়েতে মানবপাচার এবং প্রবাসীদের উপার্জনের টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন জালিয়াতি ও ভিসা ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে পাপুল ও তার পরিবার।
শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর সঙ্গে পাপুলের ছিল গোপন ব্যাবসায়িক কারবার। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের পর মীর কাসেমের ব্যাবসায়িক কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করেন পাপুল। প্রাথমিক তদন্তে পাপুল, তার স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ও শ্যালিকার নামে সম্পদের একাধিক তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধান দল।
এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে লেনদেনের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগেনিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান দল।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার সকালে পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনার নির্বাচনী হলফনামা পেতে নির্বাচন কমিশনে তাগিদপত্র দিয়েছে দুদক। ওই দিনই অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে এনবিআরের কাছে পাপুল দম্পতি ও তাঁর শ্যালিকার আয়করের নথিপত্র চেয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে জামশেদ কবীর বাকি বিল্লাহ, নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, সালাহউদ্দিন টিপু ও আরিফ নামে পাপুল দম্পতির চার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সম্পদের হিসাব পেতে সাবরেজিস্ট্রার অফিসে চিঠি দিয়েছে দুদক।
গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পাপুলকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে দেশটিতে মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারের পর পাপুলকে আদালতে হাজির করা হলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।
কুয়েতের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মানব, অর্থপাচারসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে জড়িত এমন কয়েক শ ব্যক্তির তালিকা করেছে কুয়েত সরকার। সেই তালিকা ধরেই সম্প্রতি বিতর্কিত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে দেশটির গোয়েন্দা বিভাগ। সেই অভিযানেই গ্রেফতার হন বাংলাদেশের এমপি পাপুল।
কুয়েত টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়েতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল-সালেহ বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী পাপুলকে মানবপাচার, মুদ্রাপাচার ও শ্রমিক নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেফতারের তথ্য জানাতে গিয়ে মানবপাচারের বিরুদ্ধে কুয়েত সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরেন।
কুয়েত টাইমস জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে পাপুল কুয়েতের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়াসহ তাদের সঙ্গে যোগসাজশের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি মানবপাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে আরব টাইমস পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাপুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তার কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকারী কুয়েতি দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কুয়েতের প্রসিকিউশন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। পাপুলকে গত বুধবার টানা ৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে কুয়েতের আইন অনুযায়ী পাপুলের পাঁচ থেকে ১৫ বছরের জেল এবং জরিমানা হতে পারে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে কুয়েতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, তদন্তকারীরা এমপি পাপুলের প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষকসহ অন্তত ২০ জন কর্মীকে তলব করেছিলেন। তারা তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন।