করোনা: নতুন শঙ্কায় আতঙ্কিত দেশবাসী

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাবে সারাদেশে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির মূল উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে ঘরে বা যার যার বাসস্থানে অবস্থান করানো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার সবকিছু পুনরায় খুলে দিয়ে স্বাভাবিক জীবন ও অর্থনীতি সচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গণপরিবহন ব্যবহারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) শারীরিক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম-নির্দেশনা দিয়েছে। দৈনন্দিন প্রয়োজনে বা অফিসে যেতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিরাপদ যানবাহন এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন।

অফিস-আদালত খুলে দেয়ার পর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নতুন স্বাস্থ্য নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্রমণের সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং করোনাভাইরাস যেন নতুন করে না ছড়ায় তাই কিছুক্ষণ পরপর স্যানিটাইজেশন নিশ্চিত করার বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।

বাংলাদেশি ডাক্তার ও ভাইরোলজিস্টদের বিশেষ উদ্বেগ এই যে, বাংলাদেশিরা বিশেষ ঝুঁকির মুখে পড়বে যদি না যাত্রীরা গণপরিবহনে যাতায়তের সময় পরস্পর থেকে প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখতে না পারে। করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি এমনকি নিঃশ্বাস ত্যাগের মাধ্যমেও ওই ব্যক্তির মুখ থেকে ভাইরাসের ছোট ছোট বিন্দু বা অনুকোষ আশেপাশে ছড়ায়। এই বিন্দুগুলো প্রত্যক্ষভাবে একজন থেকে আরেকজনের শরীরের ছড়ায় চোখ, নাক, মুখ বা সরাসরি কাউকে স্পর্শের মাধ্যমে, যা ঝুঁকি বাড়ায় অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর।

গণপরিবহনে যাত্রীদের নতুন ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে:

স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য পরিবহন মালিকেরা স্বাভাবিকের চেয়ে যাত্রীদের ভাড়া ৬০% বৃদ্ধি করেছে। ফলে বর্তমানে এই আর্থিক সঙ্কটের সময়ে এই অতিরিক্ত খরচের বিষয়টা সাধারণ জনগণের জন্য বিশেষ ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক যাত্রীরা এই সময়ে এমন ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লিখছেন।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, সরকার নির্দেশিত নতুন নিয়ম অনুযায়ী পাবলিক বাসে যাত্রীদের মধ্যে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা খুবই কঠিন হবে। তাছাড়া এই আর্থিক সঙ্কটের সময়ে প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করাও পথযাত্রীদের সামর্থ্যের বাইরে। এই বিষয় নিয়ে পুনরায় বিবেচনা করতে হবে যে, কিভাবে দৈনিক যাতায়তের জন্য বিকল্প, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী খরচে যানবাহনের ব্যবস্থা করা যায়।

গণপরিবহন চালু হওয়ার পর প্রথম দিন জনগনের যাতায়তের আসল দৃশ্য কী?

গণপরিবহনে যাতায়তের সময় অনেকেই নির্ধারিত শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছে না। ইতিমধ্যেই নাগরিকদের মধ্যে গণপরিবহনে স্বাধ্যবিধি অমান্য করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তারাও স্টাফ বাসগুলোতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়ত করছে না।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, “এটি সংক্রমণের প্রকোপ আরও তীব্র করতে পারে, একই পরিবহনে ভ্রমণকারী কোনো সংক্রমিত ব্যক্তি যদি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে তাহলে তার একার সংস্পর্শেই পরিবহনের আরও অনেকেই নতুন করে সংক্রমিত হতে পারে”।

সাধারণ ছুটি বন্ধ ঘোষণা করে সবকিছু পুনরায় চালু করায় বিরাট সংখ্যায় নতুন সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে স্পেন, চীন এবং ইতালির বিশেষ জাতীয় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং এতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি।

ভাইরোলজিস্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু এই রোগটি ছোঁয়াচে এবং ব্যক্তি হতে ব্যক্তির শরীরে ছড়ায় তাই এটি আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ার উচ্চমাত্রার সম্ভাবনা আছে। যাতায়ত বা ভ্রমণের বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে আমাদের নতুন করে চিন্তা করা উচিত।

নতুন বাধা: নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী খরচে বিকল্প পরিবহন মাধ্যমগুলো কি?

সকল বাধা পেরিয়ে সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা চীন ও কোরিয়ার মতো অনেক দেশের উদাহরণ দিয়েছেন। যেখানে যাতায়তের সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়।

মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলের মতো ব্যক্তিগত ও সুরক্ষিত বাহন ব্যবহার করা হয় অথবা পায়ে হেঁটে যাত্রা নির্ধারণ করা হয় এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে।

ইংল্যান্ড স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে নিষেধাজ্ঞাগুলো সহজ করেছে, ভ্রমণের সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজে ফিরে আসতে সকলকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। ইংরেজ সরকারের মতে গণপরিবহন পরিহার করে তাদের পায়ে হেঁটে, মোটরসাইকেলে, বাইসাইকেলে বা নিজে গাড়ি চালিয়ে যাতায়ত করা উচিত।

যাত্রীদের ব্যক্তিগত সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি মোটরসাইকেল, স্কুটার, বাইসাইকেল এবং ব্যক্তিগত বাহনের প্রতি নির্ভরশীল হওয়া জন্য। ক্রমবর্ধমান ভাড়া এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসাব করে এই জাতীয় বাহন তুলনামূলক বেশি সুরক্ষিত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ভাইরোলজিস্ট এবং পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
:বিবিসি রিপোর্ট

Scroll to Top