মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দুই মাস লকডাউন পরিস্থিতিতে থাকার পর সরকারের নির্দেশনায় খুলেছে সব ধরনের যান চলাচলের পথ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনাও দিয়েছে সরকার। কিন্তু শুধু আসনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া অন্য কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না রাজধানীর গণপরিবহনগুলো। ফলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন গণপরিবহনের যাত্রীরা। আবার এ থেকে ছড়াতে পারে সর্বত্র।
বুধবার (০৩ জুন) সকালে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, বাসে ওঠার সময় যাত্রীর তাপমাত্রা পরীক্ষা করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ গাড়িই তা করছে না। বাসে ওঠার সময় জীবাণুনাশক স্প্রেও করা হচ্ছে না। এছাড়া বাসের হেলপার প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থেকে গায়ে হাত দিয়ে দিয়ে যাত্রী তুলছেন। এতে উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার।
যাত্রীরা বলছেন, বাসের হেলপার প্রবেশপথে না দাঁড়িয়ে দরজার সামনে প্রথম সিটে বসতে হবে। সেখানে বসে ওঠার সময় যাত্রীর তাপমাত্রা পরীক্ষা করলে করোনার ঝুঁকি কমবে। শারীরিক দূরত্বও তৈরি হবে। কিন্তু হেলপার তো প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে স্পর্শ করছেন। এভাবে চললে গণপরিবহনের মাধ্যমেই করোনার ব্যাপক বিস্তার ঘটবে।
রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ গণপরিবহনেই তাপমাত্রা পরীক্ষার থার্মাল স্ক্যানার নেই। ওঠার সময় যাত্রীদের স্প্রে করারও কোনো ব্যবস্থা নেই। যদিও সরকার গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধিতে সেসব শর্ত দিয়েছিল। কিন্তু এক আসন ফাঁকা রেখে বসা ছাড়া অন্য কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না পরিবহনগুলো। অবশ্য কিছু কিছু পরিবহনে দেখা গেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ কিছু বিধি মানতে।
নূর, বিহঙ্গ, রাইদা, আবাবিল, তুরাগ, বলাকা, প্রচেষ্টা, ৯নং মতিঝিল ও এয়ারপোর্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিবহনে দেখা যায়, শুধু আসনে বসার সময় শারীরিক দূরত্ব মানা ছাড়া অন্য কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। তাড়াহুড়ো করে যাত্রী তোলার সময় গায়ে হাত দিচ্ছেন হেলপার। তবে অধিকাংশ যাত্রী মাস্ক পরেই যাত্রা করছেন।
উইনার পরিবহনের সহকারী মাখন মিয়া বলেন, বাসে যাত্রী তোলার সময় থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করে তুললে করোনা ভাইরাস ঝুঁকি কমতো। কিন্তু সেই ব্যবস্থা আমাদের নেই। এছাড়াও যাত্রী তোলার সময় সবাই তাড়াহুড়ো করেন। পরীক্ষা করে তোলার সময় কই!
প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে গায়ে হাত দিয়ে যাত্রী তুললে করোনার ঝুঁকি আপনারও রয়েছে, সামনের আসনে বসে যাত্রী তুলেন না কেন, জানতে চাইলে বসুমতি পরিবহনের সহকারী রাজীব বলেন, আসলে এটা আমরা চিন্তা করিনি। এছাড়া এমনিতেই অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আমরা চলাচল করছি। এরমধ্যে এক আসন আমি দখল করে বসলে কেমন হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তো মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতকিছু চিন্তা করে লাভ নেই।
আকিক পরিবহনের যাত্রী কৌশিক বলেন, বাসে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। করোনার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, হেলপার দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তুলছেন। হেলপার সামনের আসনে বসে যাত্রী তুললে সেই ঝুঁকিটা অনেক কমে যাবে। পল্লবী পরিবহনের যাত্রী নায়লা বলেন, গণপরিবহন চলাচলে সরকারকে তদারকি করা উচিত। এরা অনেক কিছুই মানছে না।