প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। প্রায় দুইমাস ধরে নিজ এলাকায় অবস্থান করে এই দুর্যোগে নেতাকর্মীদের মানবসেবায় এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন।
করোনা দুর্যোগে কর্মহীন মানুষদের সরকারি ও ব্যক্তিগত অর্থ, খাদ্য, কৃষি যন্ত্রপাতি সহায়তা ছাড়াও করোনা শনাক্ত করণের আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন নিশ্চিত করেছেন তিনি।
জাতীয় সংসদে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে ৩০ বছর ধরে প্রতিনিধিত্ব করছেন মির্জা আজম। সংসদ সদস্য হিসেবে তার এই দীর্ঘ এই সময়ে জামালপুরের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করলেও একটানা দু’ মাস নিজ এলাকায় অবস্থান করার সুযোগ হয়নি।
সম্প্রতি করোনাভাইরাসের এই মহাদুর্যোগে নিজ এলাকার মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে গত ৪ এপ্রিল থেকে জামালপুরে অবস্থান করছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। এই সময়ে নিজের নির্বাচনী এলাকা মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কর্মহীন ৫০ হাজার পরিবারের মাঝে সরকারি ১ হাজার টন চালের সাথে ব্যক্তিগত ৪০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে ডাল, তেল, আলু, পিয়াজ, সাবান বিতরণ করেছেন।
নিজের মায়ের নামে গঠিত নুরুন্নাহার মির্জা কাশেম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট্রের মাধ্যমে ইতিমধ্যে মাদারগঞ্জ উপজেলার ৫০০ দুস্থ পরিবারের মাঝে নগদ ৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছেন এবং আরও দুস্থ পরিবারকে সহায়তার করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন। করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে রমজানে মসজিদে সীমিত সংখ্যক মুসল্লি হওয়ার কারণে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও আলেমরা অর্থ সংকটে পড়েন।
ব্যক্তিগত অর্থায়নে মাদারগঞ্জ উপজেলার ৬০৮ এবং মেলান্দহ উপজেলার ৬০৫টি মসজিদের ৩ হাজার ইমাম, মুয়াজ্জিন ও আলেমদের মাঝে ঈদ উপহার হিসেবে চাল, ডাল, চিনি, লবণ, সেমাই, সাবানসহ খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন। এছাড়াও একইদিন ঈদ উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো ৫ হাজার টাকা করে চেক প্রতিটি মসজিদে বিতরণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা পরবর্তী সময়ে যাতে দেশে কোন খাদ্য সংকট তৈরি না হয়, সেই লক্ষ্যে কৃষকদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি নিজের নির্বাচনী এলাকা মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় সরকারের অর্ধেক ভর্তুকিমূল্যে ৭টি বড় এবং ১২টি ছোট কমবাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করেছেন। এসময় মির্জা আজম খাদ্য খাটতি রোধে এক ইঞ্চি কৃষি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানান কৃষকদের প্রতি।
মির্জা আজম শুধু নিজের নির্বাচনী এলাকার মধ্যেই তার দায়িত্ব সীমাবন্ধ না রেখে আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে জেলার প্রতিটি উপজেলায় দলীয়ভাবে দুস্থ মানুষদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করেছেন। করোনার এই দুর্যোগে শুধু সরকারের প্রতি চেয়ে না থেকে নিজের দায়িত্ববোধ থেকেও দুস্থ মানুষদের সেবায় এগিয়ে আসতে জেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনুপ্রানিত করে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে এক লাখ পরিবারের মাঝে ত্রাণ হিসেবে খাদ্য সহায়তা এবং এক কোটি টাকা নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন। এসব ত্রাণ সহায়তা প্রতিটি দুস্থ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করতে করোনা ঝুঁকি নিয়ে নিজেই উপস্থিত থেকে বিতরণ করেছেন। ত্রাণ সহায়তার পশাপাশি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
করোনা দুর্যোগের শুরুর দিকে স্বাস্থ্য বিভাগে পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব দেখা দিলে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক হাজার পিস পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক জেলা প্রশাকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগকে বিতরণ করেন। তবে করোনার এই দুর্যোগে জামালপুরবাসীর জন্য সবচেয়ে মূল্যবান যে কাজছি করেছেন মির্জা আজম তা হচ্ছে নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে দিয়েছেন।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আইডিসিআর থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হলে জামালপুরসহ অন্তত ৫টি জেলার করোনার নমুনা পরীক্ষা হতো সেখানে। যার ফলে জামালপুর জেলার ৫০০ থেকে ৭০০ নমুনা ময়মনসিংহের পিসিআর ল্যাবে আটকে থাকতো এবং নমুনার পরীরক্ষার রিপোর্ট পেতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লেগে যেতো। তাই করোনা পজেটিভ রোগীদের সেবা আওতায় আনা বিলম্ব হয়ে যেত। আর এই সময়ের মধ্যে নমুনা দেয়া করোনা পজেটিভ ব্যক্তিদের সংস্পর্ষে এসে অন্য ব্যক্তিরাও করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিতে পড়তো। এই সমস্যা সমাধানের জন্য মির্জা আজম জামালপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবকে নিয়ে একটি আরটি পিসিআর ল্যাবের মেশিন সংগ্রহ করেন এবং সেটি জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে স্থাপনের উদ্যোগ নেন।
সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ব্যক্তিগতভাবেছাড়াও একাধিক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে এবং গণপূর্তের মাধ্যমে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের সবচেয়ে আধুনিক আমেরিকান প্রযুক্তির আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে গত ১২ মে থেকে করোনার নমুনা পরীক্ষা চালু করিয়েছেন। তবে গণপূর্ত সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ না পেলে বাকি এক কোটি তাদের ব্যক্তিগতভাবেই দিতে হবে বলে জানান মির্জা আজম।
পিসিআর ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশন সেন্টারে থাকা প্রতিটি রোগীর সাথে ব্যক্তিগতভাবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাদের খোঁজ-খবর রাখছেন। এছাড়াও করোনামুক্ত ব্যক্তিদের নিজে উপস্থিত থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়ে তাদের বাড়ি পাঠাচ্ছেন এবং সেখানেও খোঁজ রাখছেন।
এ ব্যাপারে মির্জা আজম এমপি বলেন, আমার জনপ্রতিনিধি হওয়ার জীবনে আমি কখনো একটা দুই মাস জামালপুরে অবস্থান করার সুযোগ পাইনি, তবে এবার পেয়েছি। তাই মানুষকে ঘরে ঘরে গিয়ে সেবার দেয়ার যে আনন্দ সেটা আমি উপভোগ করছি। বিশেষ করে আমার দলীয় নেতাকর্মীরা যে যেভাবে পারছে সাধ্যমত দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার তো এটাই উপযুক্ত সময়। তবে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে করোনা আক্রান্ত আইসোলেশনে থাকা রোগীদের আমি যখনই ফোনে খোঁজ-খবর নিয়েছি, তারা আমাকে বলেছে ভাই আপনি যখন খোঁজ রাখছেন করোনা আমাদের কিছুই করতে পারবে না। তাদের সেই সেই আবেগ সত্যিই আমার চোখে পানি এনে দিয়েছে।