দুপুরে ১২টা ৫০ মিনিটে ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দেন মাহাবুব এলাহী। সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদে পদোন্নতির তালিকায় ২০৮ নাম্বারে তার নাম। অনেকে অভিনন্দনও জানায়। কিন্তু রাত ৮টায় করোনা কেড়ে নেয় এই হতভাগ্যের প্রাণ। মাহাবুব এলাহী যখন করোনায় আক্রান্ত তখন তার স্ত্রী ও অনেক সাধনায় পাওয়া সদ্যনবজাতক মেয়ে ভারতের চেন্নাইতে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আটকা পড়ে তারা আসতে পারছিলেন না, নিজে গিয়ে নিজ হাতে কোলেও নিতে পারছিলেন না আরাধ্য সন্তানকে। স্বামীর দুঃসময়ে এবং মৃত্যুযাত্রায় সাথী হতে পারেন নি স্ত্রী ও সন্তানও। হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা শহরের পুরনো মৌলভীপাড়ায়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রবিবার রাত ৮টায় কুমিল্লা শহরের পুরনো মৌলভীপাড়ার নিজবাড়িতে মারা যান এই ব্যাংক কর্মকর্তা।
জানা গেছে, কুমিল্লার পুরনো মৌলভীপাড়ায় বাসিন্দা রহিম আমজাদ কায়সারের চার ছেলের মধ্যে বড় মাহাবুব এলাহী ঢাকার মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের লোকাল ব্রাঞ্চে কর্মরত। ঢাকার রায়পুরায় স্ত্রী নিয়ে থাকতেন তিনি। ২০১১ সালে বিয়ে করেন কুমিল্লার মিয়ার বাজারের সাজনীন মাহাবুবকে। দীর্ঘ ৯ বছরে তাদের সন্তান না হওয়ায় ভারতের চেন্নাই প্যাথলজি সেন্টারের টেস্ট টিউবের মাধ্যমে ১০ এপ্রিল তাদের মেয়ে সন্তান হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে মাহাবুব এলাহী ভারতে যেতে পারেন নি এবং স্ত্রী সন্তানও দেশে ফিরতে পারেন নি। সদ্য নবজাতককে কোলেও নিতে পারেন নি মাহাবুব। এদিকে করোনার লক্ষণ উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তিনি কুমিল্লায় তার নিজের বাড়িতে চলে আসেন।
মাহাবুব এলাহীর ভাই গোলাম রাব্বানী জানান, ঢাকায় করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর মাহাবুব বাড়িতে চলে আসে। তার হাতের উপরই মারা যান মাহাবুব। শনিবার তিনি সাথে নিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লোকের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করান। সেই পরীক্ষার ফল আসার আগেই মারা যান মাহাবুব।
মারা যাওয়ার এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে রাব্বানী জানতে পারেন তার ভাইয়ের করোনা পজেটিভ। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান এ তথ্য প্রতিবেদকে জানান।
দৈনিক কুমিল্লার কাগজের সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয় জানান, করোনায় মারা যাওয়ার পর মাহাবুব এলাহীর দাফন করা নিয়ে দু:শ্চিন্তা তৈরি হয়। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সকালে দাফন করবে বলে জানায়। পরে এগিয়ে আসে ‘বিবেক’ নামে সংগঠনের সদস্যরা।
সামাজিক সংগঠন বিবেকের প্রধান ইউসুফ মোল্লা টিপু জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তিনি ও তার টিমের সদস্যরা দাফন কার্য চালানোর জন্য প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। তারা খবর পেয়ে প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুমতি নিয়ে তাদের নির্দেশনা মতে দাফন কাজটি।