খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি চালের জন্য স্বজনপ্রীতি না করে প্রকৃত গরিব ও দুস্থদের নাম দ্রুত যাচাই বাছাই করে নতুন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন ৷
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৬ সালে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করেছিল খাদ্য অধিদপ্তর।
এ কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে বছরে পাঁচ মাস (মার্চ, এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর) ৫০ লাখ পরিবারকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এ তালিকায় থাকা সুবিধাভোগীদের নিয়ে কিছু অভিযোগ আসায় প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অতি দ্রুত যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত গরিব ও দুস্থদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নতুন করে তালিকা তৈরি করার।
এজন্য কোনো প্রকার হুমকি-ধমকিকে ভয় না করে স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে থেকে প্রকৃত গরিব ও দুস্থদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন তিনি।
বুধবার (১৩ মে) সকাল ১১টায় মন্ত্রীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিভাগের আওতাধীন প্রতিটি জেলায় করোনা মোকাবিলা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অালোচনাকালে তিনি এ কথা জানান ৷
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে প্রতিটি উপজেলায় অতীতে তালিকা তৈরি করার সময় যে ট্যাগ অফিসার ছিলেন তাদের সরিয়ে নতুন করে কোনো ট্যাগ অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হোক।
মন্ত্রী বলেন, ধান-চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলায় সংগ্রহ কমিটি রয়েছে। সংগ্রহ কমিটিকে প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে কৃষকের উপস্থিতিতে লটারি করার আহ্বান জানান তিনি।
কৃষকের ধান দেওয়ার ক্ষেত্রে ময়েশ্চার বা আর্দ্রতা সমস্যার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, কৃষকের ধান দেওয়ার ক্ষেত্রে আদ্রতা নিয়ে একটু সমস্যা হয় কিন্তু প্রতিটি উপজেলার কৃষি অফিসে আদ্রতা মাপার যন্ত্র রয়েছে। কৃষকের নামের লটারি করার পর উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এসমস্ত চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত কৃষকের বাড়িতে গিয়ে তাদের ধানের আদ্রতা পরিমাপ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, যা কৃষকের জন্য খুব উপকার হবে।
এছাড়া দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে খাদ্যশস্যের আদ্রতা মাপার যন্ত্র সরবরাহ করার বিষয়টির ওপরও তিনি গুরুত্ব দেন।
ঢাকা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, কৃষকের স্বার্থের কথা চিন্তা করে তাদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য ধান-চাল কেনার ক্ষেত্রে ধানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং কৃষক যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি যেকোনো প্রকার অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে থেকে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শতভাগ সফল করতে হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত থেকে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, বস্তার গায়ে স্টেনসিল ব্যবহার করতে হবে এবং খাদ্যবান্ধব, ওএমএসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত চালের বস্তার গায়ে আলাদা আলাদা সিল ব্যবহার করতে হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলার জেলা প্রশাসকগণ, ঢাকা বিভাগের আওতাধীন প্রতিটি জেলার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকগণ বক্তব্য রাখেন।