মহামারী করোনার প্রভাবে দেশের বিভিন্ন খাতে নেমেছে অর্থনৈতিক ধস। অর্থ সংকটের কারণে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৪১ জন কর্মচারী চাকরি হারাতে চলেছেন। আগামী জুন মাস থেকেই কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে। রোগীস্বল্পতায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে আয় হওয়া টাকা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ অনেকটা বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। বেসরকারি খাতের এসব কর্মচারীরা হাসপাতালের বহুল প্রশংসিত ওয়ান স্টপ সার্ভিস সহ বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
এদের অনুপস্থিতিতে হাসপাতালর সেবার মান বিশেষ করে ওয়ান স্টপ সার্ভিস বন্ধ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোগীর সংখ্যা বাড়লে আবারও হাসপাতালের আয় বাড়বে। তখন এদের পুনরায় চাকরিতে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনাও আছে। চাকরি হারানোর তালিকাতে ৫/৬ জন চিকিৎসকও আছেন। তবে একাধিক সূত্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত প্রায় ৩ বছর ধরে এসব কর্মচারীরা হাসপাতালে কর্মরত আছেন। চাহিদা অনুযাযী সরকারিভাবে এখানে কর্মচারী নিয়োগ হলে আজকে এদের চাকরি হারানোর অবস্থাতে পড়তে হতো না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলা জানায়, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতে হাসপাতালের আয় দিয়েই কর্তৃপক্ষ বেসরকারিভাবে দেড় শ\’র মতো কর্মচারী নিয়োগ দেন। নিয়োগ দেওয়া হয় কয়েকজন চিকিৎসককেও। হাসপাতালের ইউজার ফি\’র একটা অংশ থেকে এসব কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হতো। মূলত এ হাসপাতালে আগত বিপুলসংখ্যাক রোগীর মঙ্গলের জন্যই কর্তৃপক্ষ দূরদর্শিতা ও রোগীর প্রতি আন্তরিকতা দেখিয়ে এসব কর্মচারীদের নিয়োগ দেন।
প্রায় ৩ বছর আগে চালু হওয়া ওয়ান স্টপ সার্ভিসের সকল কর্মীই ছিল বেসরকারি খাতের। এ ছাড়া গাইনি সার্জারি ও অন্যান্য কিছু বিভাগেও এসব বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের কাজ আছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক চিকিৎসক এবং কর্মচারী নিয়োগ না দেওয়ার কারণে বাস্তবতা বিবেচনায় বেসরকারি খাতের এ নিয়োগকে অনেকেই সাধুবাদ জানায়। এতদিন সব কিছু ঠিকটাকভাবেই চলছিল। কিন্তু সমস্যা বাঁধে করোনা সংকটে।
কর্তৃপক্ষ জানান, এতদিন হাসপাতালে বিপুলসংখ্যাক রোগী আসত। হাসপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে যা আয় হতো সরকারি বিধিমোতাবেক তার একটা অংশ বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন হিসেবে দেওয়া হতো। কিন্তু এখন রোগী আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়াতে হাসপাতালের আয়ও কমে গেছে। তাই কর্তৃপক্ষ বাধ্য হচ্ছেন এদের বাদ দিতে। তবে বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষও চিন্তিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিলে সমস্যাটির সমাধান হতে পারে।
হাসপাতালে উপপরিচালক ডা. লক্ষী নারায়ণ বলেন, রোগীর স্বল্পতায় হাসপাতালের নিজস্ব আয় কমে যাওয়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনাতেও আসতে পারে।