করোনাভাইরাসে শুধু সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা বা শ্বাসকষ্ট নয়। রোগীর শরীরে দেখা যাচ্ছে আরও কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ, জানাচ্ছে মার্কিন সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি৷ যার মধ্যে আছে মাথাব্যথা, যখন-তখন শীতের অনুভূতি, প্রবল শীত বোধ থেকে দেহে কাঁপুনি ধরা এবং দেহের বিভিন্ন মাংসপেশিতে ব্যথা৷
মার্কিন মুলুকে তো বটেই ইংল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে নানা বয়সের করোনা আক্রান্তদের মধ্যে।
শুধু তাই নয়, এই একই ধরণের লক্ষণ দেখা গেছে দিল্লির সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এইমসের বেশ কয়েকজন রোগীর মধ্যেও, যারা করোনার ‘আদর্শ’ লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে আসেননি৷ পরে তাদের শরীরেও সংক্রমণ মিলেছে৷
পুরো বিষয়টিতে যথেষ্ট চিন্তিত নয়াদিল্লি এইমসের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকরা৷ সংক্রামক রোগ বিভাগের সঙ্গে যুক্ত এইমসের সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক নাজনিন নাহার বেগম জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতা, ‘এখানে এমন অনেক রোগী দেখা গেছে, যাদের মধ্যে করোনার কপি বুক লক্ষণ ছিল না৷ তাদের মধ্যে অনেকেই জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন না৷ তারা মাথা ব্যথা, শীত বোধ করা এবং সারা গায়ের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথার কথা বলেন৷ এই ধরনের রোগের উপসর্গ নিয়ে সাধারণত কোনও ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় না৷ এখানেও করা হয়নি৷ কিন্তু অনেকের দেহে এমন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, এটা লক্ষ করার পরই প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ তখন দেখা যায় তারা করোনা পজিটিভ৷’
পুরো বিষয়টি যে যথেষ্ট চিন্তার, তা স্পষ্টই জানিয়েছেন বাঙালি চিকিৎসক নাজনিন৷ তার কথায়, ‘এই রোগটা সম্পর্কে গোটা বিশ্বই খুব কম জানে৷ আর আমরা বোধহয় আরও কম৷ স্বভাবতই কোনও নির্দিষ্ট মডিউল মেনে এই রোগের চিকিৎসা করতে গেলে বারেবারে সমস্যায় পড়তে হতে পারে আমাদের৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, পুরো বিষয়টিতে একটু নমনীয় থাকা ভালো৷ হটস্পট থেকে আসা কোনও লক্ষণহীন ব্যক্তির অবশ্যই আগে করোনা পরীক্ষা করা দরকার৷
একজন আগন্তুকের শরীরে কোনও রোগের উপসর্গ দেখে সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে গেলে পরীক্ষা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও পন্থা নেই আমাদের কাছে৷ তাই কপি বুক লক্ষণের বাইরে সিডিসির পরামর্শ অনুযায়ী উপসর্গ সম্পন্ন কোনও ব্যক্তি চোখে পড়লেই তার করোনা পরীক্ষা করা উচিত৷ এর ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, উল্টে যদি তার করোনা হয়ে থাকে, তাহলে যত দ্রুত ধরা পড়বে, ততই ভালো৷’
দিল্লি এইমসে কর্মরত আর এক বাঙালি চিকিৎসক সায়ন নাথও জানিয়েছেন, তিনি ‘কপি বুক’ করোনা লক্ষণের বাইরে মাংসপেশিতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শীত বোধ করা, প্রবল শীত বোধ থেকে শরীরে কাঁপুনি ধরার উপসর্গ সম্পন্ন রোগী দেখেছেন এইমসে৷
এই প্রসঙ্গে এইমসের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন তার অভিব্যক্তি৷ তার কথায়, ‘আমার মনে হয়, যত দিন যাবে, ততই নতুন নতুন লক্ষণ যুক্ত হবে করোনার লক্ষণ তালিকায়৷ যতদিন না এই ভাইরাসের সব রহস্যভেদ হবে, ততদিন এই সন্দেহভাজন লক্ষণের তালিকা বাড়তেই থাকলে আমি অবাক হব না৷’
: এই সময়