বয়সের কোটা ৫২ বছর পার হয়ে গেছে। এখনও বিয়ের শেরওয়ানি পরার সৌভাগ্য হয়নি তার। তাই তাকে বলা হয় বলিউডের মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর। তিনি সালমান খান। অনেকে বলে থাকেন খুব রাগী ও কাটখোট্টা একজন মানুষ তিনি।
কিন্তু মুদ্রার উল্টা পিঠে পুরো একজন অভিমানীও বটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এমন লোকের সঙ্গে দ্বিতীয়বার কাজ করার ক্ষেত্রে কড়া নিষেধাজ্ঞা তার। সে যত বড় তারকাই হোক না কেন। এ রকম বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কাজ না করার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন তিনি।
এ রকম কয়েকজন হলেন- অর্জুন কাপুর, অরিজিৎ সিং, মালাইকা অরোরা, বিবেক ওবেরয় ও ঐশ্বরিয়া রাই। কিন্তু কেন? কী এমন ঘটেছিল, তাদের সঙ্গে আর কখনও কাজ করবেন না সালমান?
এক সময় সালমান খানের পালিত বোন অর্পিতা খানের সঙ্গে প্রেম করতেন অভিনেতা অর্জুন কাপুর। কিন্তু সে প্রেম বেশি দিন টেকেনি। হঠাৎ একদিন শোনা গেল সালমানের ভাইয়ের বউ অর্থাৎ আরবাজ খানের স্ত্রী মালাইকা অরোরার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে অর্জুনের। কথিত আছে মালাইকার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর কারণেই অর্পিতার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটেছে অজুর্নের।
বিষয়টি শোনার পর থেকেই সালমান রেগে অস্থির। যে ছেলেকে বলিউডে অভিষেক ঘটাতে তিনি সাহায্য করেছিলেন সে কিনা এভাবে বুকে ছুরি বসাল! অর্জুনকে নাকি শাসানোর হুমকিও দিয়েছিলেন।
সে সবই অবশ্য শোনা কথা। তবে এসব কারণে অর্জুন ও তার সংশ্লিষ্ট কোনো কাজই করবেন না সালমান সেটাও স্পষ্ট বলে দিয়েছেন। একই কারণে মালাইকার সঙ্গেও আর কোনো কাজ হবে না সালমানের।
‘দাবাং’-এর দুই কিস্তিতেই মালাইকাকে আইটেম গার্ল হিসেবে দেখা গেলেও তৃতীয় কিস্তিতে যে তাকে রাখছেন না সালমান, সেটা অনেকটাই নিশ্চিত। কারণ এ ছবিতে আইটেম গার্লের তালিকায় কারিনা কাপুরের নাম শোনা গেছে কিছুদিন আগে।
এমনিতেই সালমান একটু রাগী স্বভাবের। কিন্তু তার রাগ কেটে গেলে তিনি একেবারেই শিশুর মতো হয়ে যান। এমনটিই বলেছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। রাগের মুহূর্তে হয়তো কোনো এক সময় সঙ্গীতশিল্পী অরিজিত সিংকে বকাঝকা করেছিলেন।
তবে সেই বকাটাও নাকি যৌক্তিক ছিল। কিন্তু সেই বকাঝকাটা ধারণ করতে পারেননি অরিজিত। এক রাতে হঠাৎ করেই ফেসবুকে লেখেন, সালমান খান তাকে অপমান করেছেন এবং তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেবেন বলেছেন।
বিষয়টি দেখার পর সালমান আরও কষ্ট পান। এরপর কোনো ব্যাখ্যা বা সালমানের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই পোস্টটি ডিলিট করে দেন অরিজিৎ। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
সালমান তার সব ধরনের প্রজেক্ট থেকে অরিজিতকে বাদ দেন। শুধু তাই নয়, সালমান খানের সঙ্গে বিবাদের কারণে সেই থেকে বলিউডে ক্রমান্বয়ে অরিজিতের কাজ কমতে থাকে এবং অদ্যাবধি সেটা প্রায় শূন্যের কোটায়।
ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে গভীর প্রেম ছিল সালমানের। অনেকের সঙ্গে প্রেম করলেও একমাত্র ঐশ্বরিয়ার প্রতিই নাকি জীবন সমর্পণ করেছিলেন সালমান- এমনটাও কথিত আছে। ঘটনার কিছুটা সত্যতাও মিলেছে।
ঐশ্বরিয়ায় এতটাই মজেছিলেন সালমান, চলে যাওয়ার পরও প্রেমিকাকে ভুলতে না পেরে ঐশ্বরিয়ার বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করেছিলেন। সেই বিচ্ছেদের কষ্টটা মেনে নিতে পারেননি সালমান। তাই ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে আর কোনো কাজ না করার কথা জানিয়েছিলেন। অবশ্য সেটা প্রকাশ্যে নয়।
প্রেমবিচ্ছেদ পরবর্তী কয়েকজন নির্মাতা ঐশ্বরিয়া ও সালমানকে নিয়ে কাজ করতে চাইলেও সালমানের অপারগতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। স্বভাবতই ধরে নেয়া যায় এ দুই তারকার আর কখনও এক হয়ে কাজ করা হবে না।
সালমানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ঐশ্বরিয়া বিবেক ওবেরয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। সালমানের ধারণা বিবেকের জন্যই ঐশ্বরিয়া তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। এ কারণে বিবেকের সঙ্গে সালমানের ঝামেলা চরমে উঠেছিল।
বিবেক তো প্রকাশ্যেই সালমান সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিবেক অভিযোগ করে বলেছেন, তাকে নাকি বহুবার ফোন দিয়ে সালমান বলেছেন, ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেবেন। এমনকি মারের হুমকিও নাকি দিয়েছিলেন। এরপর সালমান আরও অভিমান করেন বিবেকের ওপর। কিন্তু প্রকাশ্যে আর কিছু করেননি বা বলেননি।
যদিও বিবেক চেষ্টা করেছিলেন সালমানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি। ফলাফল, বিবেককেও নিজের চ্যাপ্টার থেকে ক্লোজ করে দিয়েছেন সালমান। এদিকে ততদিনে ঐশ্বরিয়াও বিবেককে ছেড়ে অভিষেক বচ্চনের বাহুবন্দি হয়ে গেছেন।
এদিকে ঐশ্বরিয়ার কারণে বলিউড কিং শাহরুখ খানের সঙ্গেও মনোমালিন্য হয়েছিল সালমানের। তার সেটে গিয়েও ঐশ্বরিয়াকে গালমন্দ করেছিলেন। ওই সময় শাহরুখ খান সালমানের ওপর বিরক্ত হলেও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, যে যায় সে আর ফিরে আসে না। সালমান হয়তো কিছুটা বুঝেছেনও সে সময়। তাই শাহরুখের ওপর কোনো রাগ বা ক্ষোভ পুষে রাখেননি।