খুবই অল্প সময় রাজত্ব করেছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ভুবনের এই কিংবদন্তি অভিনেতা। অভিনয় করেছেন মাত্র ২৭টির মতো চলচ্চিত্রে। তার সাবলীল অভিনয় নৈপুণ্যে জয় করেছিলেন কোটি মানুষের ভালোবাসা। হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের সিনেমা জগতের এক নম্বর নায়ক। তিনি সালমান শাহ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত `কেয়ামত থেকে কেয়ামত` ছবির মাধ্যমে প্রবেশ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
বাংলদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র সালমান শাহ ১৯৭১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। আজ বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৪৬। তিনি মারা যান ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। সালমান শাহ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম সামিরা। বিভিন্ন সময়ে তার মৃত্যুর বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা হলেও ভক্তরা আজও জানতে পারেনি কেন তাদের প্রিয় নায়ক জীবনকে ছুটি দিয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। আবার সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর অভিযোগ- ‘তাকে হত্যা করা হয়েছে’।
সালমান শাহর মৃত্যুর দুই দশক পেরিয়ে এসেও তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা ঠিক আগের মতোই শক্তিশালী। সালমান শাহর মতো এমন দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তা খুব কম চলচ্চিত্র তারকারাই অর্জন করতে পেরেছেন।
সালমান শাহ অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া কেয়ামত থেকে কেয়ামত, দেন মোহর, তোমাকে চাই। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় বিক্ষোভ, আনন্দ অশ্রু, চাওয়া থেকে পাওয়া, বিচার হবে। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় জীবন সংসার, মহা মিলন, স্বপ্নের পৃথিবী, স্বপ্নের ঠিকানা, এই ঘর এই সংসার। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় কন্যা দান, মায়ের অধিকার, প্রেম যুদ্ধ, সত্যের মৃত্যু নাই, সুজন সাথী, স্বপ্নের নায়ক, তুমি আমার। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় বুকের ভেতর আগুন, প্রেম পিয়াসী।
তিনি চলচ্চিত্র ছাড়াও বেশ কিছু টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে, পাথর সময়, ইতিকথা, আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকত সারস, নয়ন উল্লেখযোগ্য।
সালমান শাহর অভিনয় জীবনে তিনি বেশ কিছু গুণী নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন, সোহানুর রহমান সোহান, জহিরুল হক, মুহম্মদ হান্নান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, জীবন রহমান, শিবলী সাদিক, শফি বিক্রমপুরী, শাহ আলম কিরণ, দেলায়ার জাহান ঝন্টু, নুরুল ইসলাম পারভেজ, হাফিজ উদ্দিন, তমিজ উদ্দিন রিজভী, মালেক আফসারী, বাদল সরকার, মতিন রহমান, দিলীপ সোম, রানা নাসের, ছটকু আহমেদ, জাকির হোসেন রাজু।
চলচ্চিত্র অভিনয়ে সালমান শাহর নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন, শাবনূর, মৌসুমী ছাড়াও অভিনয় করেছেন শাবনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, দৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি। সালমান শাহ মৃত্যুর আগে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন পরে কাজ করতে পারেননি। সেগুলো হচ্ছে, শেষ ঠিকানা, প্রেমের বাজী, আগুন শুধু আগুন, কে অপরাধী, মন মানে না, ঋণ শোধ, তুমি শুধু তুমি।
একনজরে সালমান শাহ :
নাম : শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন
পিতা : কমর উদ্দিন চৌধুরী
মা : নীলা চৌধুরী
জন্মস্থান : সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলা
জন্ম তারিখ : ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
পড়াশুনা : খুলনা বয়রা মডেল হাইস্কুল, এসএসসি- ১৯৮৭ সালে আরব মিশন স্কুল, ধানমণ্ডি। আইকম- আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। বিকম- মালেকা সায়েন্স কলেজ, ধানমণ্ডি।
বিয়ে : ১২ আগস্ট ১৯৯২ সালে
স্ত্রী : সামিরা
প্রথম চলচ্চিত্র : কেয়ামত থেকে কেয়ামত
শেষ চলচ্চিত্র : বুকের ভেতর আগুন
প্রথম চলচ্চিত্রের নায়িকা : মৌসুমী
সর্বাধিক চলচ্চিত্রের নায়িকা : শাবনূর (১৪টি)
মোট অভিনীত চলচ্চিত্র : ২৭টি
টেলিভিশন নাটকে অভিনয় : পাথর সময়(১৯৯০), ইতিকথা(১৯৯৪), আকাশ ছোঁয়া(১৯৮৫), দোয়েল(১৯৮৫), সব পাখি ঘরে ফেরে(১৯৮৫), সৈকত সারস(১৯৮৬), স্বপ্নের পৃথিবী(১৯৯৬) এবং নয়ন(১৯৯৬)।
বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল : ইস্পাহানী গোল্ডস্টার টি(১৯৮৩), জাগুয়ার কেডস(১৯৮৪), মিল্কভিটা(১৯৮৮), কোকাকোলা(১৯৮৯), ফান্টা(১৯৯১)।
রাশি : বৃশ্চিক
উচ্চতা : ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি
প্রিয় শখ : দাবা ও ক্রিকেট খেলা
প্রিয় গায়ক : হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও আজম খান
প্রিয় নায়ক : অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খান
প্রিয় রং : কালো
প্রিয় পোষাক : জিন্স প্যান্ট ও টি-শার্ট
প্রিয় খাবার : আইসক্রিম ও ফাস্টফুড
প্লে-ব্যাক : প্রেমযুদ্ধ এবং ঋণ শোধ
পুরস্কার : ইয়ুথ অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন তাকে ১৯৯৫ সালে শ্রেষ্ঠ নায়ক হেসেবে পুরস্কৃত করে।
মৃত্যু : ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ