ছেলেকে বলে গেলেন নায়করাজের শেষ ইচ্ছার কথা

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই। গতকাল সোমবার (২১ আগষ্ট) সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহা নায়ক। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

নায়কের শেষ দুই দিনের দিনলিপির বয়ান দিয়েছেন অভিনেতা পুত্র সম্রাট

২০ আগস্ট রাত তখন ১০টার মতো হবে, আমি কম্পিউটারে কাজ করছি। হঠাৎ আব্বু ডেকে পাঠালেন। যেতে চাইনি, আম্মু জোর করে পাঠালেন। ড্রয়িংরুমে গিয়ে একটু রাগের স্বরেই বললাম, ‘কাজ করছি তো, ডাকছ কেন?’

আব্বু বললেন, ‘এখন কাজ রাখ। ডিনারের সময়। চল, একসঙ্গে খাব। ’ খানিকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও খেতে বসলাম। আম্মু খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন। হঠাৎ আব্বুর প্রশ্ন, ‘আচ্ছা সম্রাট, আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ না?’ তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, হ্যাঁ। তুমি তো সুস্থ। ‘তাহলে আমি আবার অভিনয় করব। না করিস না বাবা।’

হেসে বললাম, ‘তুমি যে ছবি করবা, এখন কি সে রকম গল্প হয়?’ বললেন, “তুই গল্প তৈরি কর! কেন? আমি কি ‘বাবা কেন চাকর’ বানাইনি? আমার ওপরই গল্প তৈরি কর। পারিবারিক গল্প। দেখবি দর্শক আবার হলে আসবে। চলচ্চিত্রের বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। ’ আব্বুর কথা শুনে আম্মুর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।

একটু সংশয় নিয়ে জানতে চাইলাম, ‘তুমি পারবে তো!’ আব্বু তখন হাতের পেশি ফুলিয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন, ‘দেখ, নায়করাজ এখনো আগের মতোই আছে। ’

খাওয়া শেষ করে সবাই যে যার রুমে চলে গেলাম। সকালে আব্বু নাতি-নাতনিদের সঙ্গে অনেক মজা করলেন। আমি ততক্ষণে মনে মনে ঠিক করেছি কোন ধরনের গল্প করব।

বিকেল তখন ৩টার দিকে। হঠাৎ দেখি আব্বু খুব ঘামছেন। আমাকে কাছে ডাকলেন। বললেন, ‘বুকে ব্যথা করছে। ’ শুরুতে অতটা গুরুত্ব দিইনি। ভাবলাম, গ্যাসের ব্যথা হবে। কিন্তু সময় যত গড়াতে লাগল ততই আব্বু ছটফট করতে লাগলেন। কোনো কথা বলতে পারছেন না। ইউনাইটেড হাসপাতালে যোগাযোগ করলাম। তারা দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিল। পৌঁছালামও হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে আব্বু আর নেই।

এখন আমার ভেতরে খুব আফসোস লাগছে। কেন ওই দিন রাতে তাঁকে আরো কিছুক্ষণ সময় দিলাম না। খেতে ডাকার পর কেন রাগ করলাম! আমার শাস্তি হওয়া উচিত। আমি আল্লাহর কাছে আমার আব্বুর জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, ২২ আগস্ট, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে

Scroll to Top