স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত সালাম সালাম হাজার সালাম, জয় বাংলা বাংলার জয়সহ অনেক উদ্বুদ্ধকরণ গানের গায়ক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী, গত শতকের ষাট ও সত্তর দশকের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক পাওয়া আব্দুল জব্বার আর নেই।
আজ ৩০ আগস্ট সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল জব্বার কিডনি, হার্ট, প্রস্টেটসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
সদ্য প্রয়াত আব্দুল জব্বার চাননি তার মৃতদেহের ছবি তোলা হোক বা গণমাধ্যমে প্রকাশ হোক। এমনটা জানালেন এ কণ্ঠসৈনিকের ছেলে মিথুন জব্বার। মিথুন বলেন, ‘বাবা মৃত্যুর আগে বারবার বলেছেন, আমি মারা গেলে যেন ছবি তোলা না হয়। আমার লাশের ছবি যেন কোথাও ছাপানো না হয়।’
আব্দুল জব্বারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গণমাধ্যমকে ছবি না তোলার জন্য অনুরোধ করেন মিথুন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী আব্দুল জব্বার বুধবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হন এ শিল্পী। ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান জানান, আব্দুল জব্বার ক্রনিক কিডনিজ ডিজিস (সিকেডি) স্পেস ফোরে ভুগছেন। এছাড়া তার লিভারে সমস্যা ছিল।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এ শিল্পীর গাওয়া বিভিন্ন গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও মনোবল বাড়িয়েছে। গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে গণসংগীত গেয়ে পান ১২ লাখ টাকা, যা স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন। তিনি প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতেও নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’সহ অসংখ্য গানের গায়ক আব্দুল জব্বার। তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান তিনটি ২০০৬ সালের মার্চ মাসে বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি গানের তালিকায় স্থান পায়। তিনি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দুটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৯৬) ভূষিত হন।
আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
বাংলাদেশ সময় : ১৩০৮ ঘণ্টা, ৩০ আগস্ট, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ