বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই সমর্থন ছিল অভিনয়শিল্পী জাকিয়া বারী মমর। এরপর সহশিল্পীদের সঙ্গে ঢাকার রাজপথে কখনো ফার্মগেট, কখনো শাহবাগ, কখনো শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার মিছিলে মিছিলে দেখা গেছে তাঁকে। সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ, কাজসহ নানা বিষয়ে গতকাল গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ
মমর সন্তান উদ্ভাস ক্লাস সিক্সে পড়ে। আন্দোলনের সময় সে মাকে বলেছিল, ‘আমিও ছাত্র।’ এই পরিবর্তন সে–ও চেয়েছিল। মমর মতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের ছোট-বড় সবাইকে একত্র করেছে। একটা পর্যায়ে ছাত্র-জনতা মিলে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে। এখন নতুন স্বপ্ন দেখছেন মম। তিনি বললেন, ‘দেশের অবস্থা কোন দিকে যাবে, তা এত তাড়াতাড়ি বলা যাবে না। কী হবে, দেখি। বড় একটা ঘটনা ঘটাল ছাত্ররা। এখন বড়রা মিলে কী করেন, দেখতে হবে তো।’ দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ পাওয়া যাবে, পাচার হওয়া সব টাকা দেশে ফিরবে, ব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াবে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমবে—এমনটাই চান মম।
শিল্পী ও রাজনীতি
দেড় দশকে দেশের রাজনীতিতে শিল্পীদের সরাসরি সম্পৃক্ততা চোখে পড়ার মতো। অনেকে আবার রাজনৈতিকভাবে সুযোগ-সুবিধাও পেয়েছেন। বিভিন্ন সময় এসব নিয়ে কথাও হয়েছে। তাহলে কি শিল্পীরা রাজনীতি করবেন না? মমও মনে করছেন, সক্রিয় রাজনীতি শিল্পীদের কাজ নয়। শিল্পী তাঁর শিল্পকর্মের কাজটা ঠিকমতো করবেন। এটাও ঠিক, মানুষ যখন কোনো রাষ্ট্রে বসবাস করেন, তিনি নিরপেক্ষও হতে পারেন না। কোনো না কোনো পক্ষের প্রতি তাঁর সমর্থন থাকে। এটা স্বাভাবিক; কিন্তু সেটা যেন অন্ধের মতো না হয়। রাজনীতির কারণে শিল্পী অন্ধ হলে পথ দেখাবেন কে। ন্যায়কে ন্যায় আর অন্যায়কে অন্যায় বলার শক্তি থাকতে হবে। সুবিধা নেওয়ার সংস্কৃতির কারণে এটা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
নতুন ভাবনা, নতুন শুরু
আন্দোলনের কারণে মাসখানেকের বেশি সময় ধরে সব ধরনের কাজকর্ম থেকে দূরে আছেন মম। মম জানালেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহে শুটিং শুরু করবেন।
কথায় কথায় মম এ-ও মনে করিয়ে দিলেন, ‘অভিনয় অঙ্গনে কাজ করতে গিয়ে অনেকের কাছে সম্মানী বকেয়া থাকে। কেউ তো আবার এমন ভাব করেন, “সুযোগ দিয়েছি আবার টাকাও দিতে হবে!” চুপ থাকার কারণে এমনটা হয়েছে। তবে আমি অনেক বছর ধরে আমার সেক্টরের এসব নিয়ে কথা বলে আসছি। এখন সবাইকে বলতে হবে।’
যা দেখলেন
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরুর আগেই ‘মাস্টার’ নামে নতুন একটি ছবির কাজ শেষ করেছেন মম। পরিচালনা করেছেন রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। মম জানালেন, সামাজিক পটভূমিতে রাজনৈতিক যে দৃশ্যপট তৈরি হয়, সেটাই নিয়েই সিনেমা। ছবি দেখা ও পড়ার অভ্যাস মমর দীর্ঘদিনের। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে মন বিক্ষিপ্ত ছিল। এর মধ্যে ‘হারাজা’ও ‘লভিস’—দুটি সিনেমা দেখেছেন।
মম বলেন, ‘মনকে অন্যদিকে নেওয়ার জন্য ছবি দেখার চেষ্টা করেছি; কিন্তু হয়নি। “মহারাজা” লে একটা সিনেমার রিভিউ শুনে আমিও দেখার চেষ্টা করলাম; কিন্তু আমার কাছে সিনেমাটা ভালো লাগেনি। এত নৃশংসতা আমার ভালো লাগে না। এলভিস প্রিসলিকে নিয়ে ছবিটা দেখে মনটা ভরে গেছে। খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি।’