অডিও ক্যাসেটের সময় দর্শক-শ্রোতাদের মুখে মুখে বিভিন্ন গান শোনা যেত। কোনো শিল্পীর নতুন গান রিলিজ হলে তা নিয়ে মেতে থাকতেন শ্রোতারা। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো সহজ হওয়ায় এখন ভালো ভালো গান রিলিজ হলেও তা বেশিদিন শোনা যায় না। তবে যারা শোনার, তারা ঠিকই খুঁজে নেন বলে এক আলোচনায় চ্যানেল 24 অনলাইনকে জানালেন ‘সারেগামাপা’ রিয়েলিটি শোয়ের মাধ্যমে ‘শিসপ্রিয়া’ খ্যাত লাভ করা গায়িকা অবন্তী সিঁথি।
সম্প্রতি চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে সংগীতের বিভিন্ন ব্যাপারে কথা বলেছেন এ সংগীতশিল্পী। শুরুতেই কথায় কথায় উঠে আসে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত গান প্রকাশের বিষয়। ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এখন শিল্পীরা গান প্রকাশ করেন। কেউ নিজের জন্য, কেউ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের জন্য। এদিকে সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বছরে কিছু সংখ্যক সিনেমা মুক্তি পায়। সিনেমার সংখ্যা কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাতে কম শিল্পীদের গানের সুযোগ থাকে।
প্লে-ব্যাকের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে অবন্তী সিঁথি বলেন, ‘ইনডিরেক্ট যদি সিন্ডিকেটের কথা বলেন, তাহলে এ ক্ষেত্রে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আমি যেহেতু এ ধরনের অভিজ্ঞতা বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি।, তাহলে এ ব্যাপারে আমার কি-বা বলার থাকতে পারে। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, যেসব মিউজিক ডিরেক্টরদের সঙ্গে একবার কাজ হয় আমার; পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে বারবার কাজ হয়েছে আমার। জানি না, হয়তো তারা আমার সঙ্গে কাজ করে কমফোর্টেবল বা গুড আন্টারস্যান্ডিংয়ের জন্যও হতে পারে।’
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের এই সময় নিয়মিত প্রচুর গান প্রকাশ হলেও এখন আর আগের মতো কোনো গান দর্শক-শ্রোতাদের মুখে মুখে শোনা যায় না। যদিও কিছু গান শোনা যায় ও প্রচুর ভিউ হয়, তবে তাও কিছুদিন পর কারও মুখে দীর্ঘদিন থাকে না বিপরীতে কিছু গান সবার মুখে মুখে থাকলেও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সেসব গানের ভিউ খুব বেশি দেখা যায় না।
‘অডিও ক্যাসেটের যুগে এই সময়ের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো অ্যাভেইলেবেল ছিল না কিন্তু। ক্যাসেটের মাধ্যমেই সবাই গান শুনতাম। ওই সময় বোধহয় অধিকাংশ শিল্পীই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই গান রিলিজ করতেন। কিন্তু এই আধুনিক যুগে সেই ক্যাসেটের মাধ্যম হারিয়ে গেছে। সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। সবারই নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ রয়েছে। আমার নিজের কথাই যদি বলি, আমার একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। তো সবার স্মার্টফোন থাকায় সে চাইলেই যখন যে গান শুনতে মন চায়, সেটি শুনতে পারে। এ কারণে মনে হয় সেই অডিও ক্যাসেটের যুগের মতো দীর্ঘদিন গান শ্রোতারা সেভাবে হৃদয়ে গেঁথে রাখেন না। আর এটা সত্য, এখনো ভালো ভালো গান হয়। কিন্তু শ্রোতারা কোনটি শুনবেন, সেটি তো তাদের ব্যক্তি পছন্দ।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘কোনো গান প্রকাশের পর সেটি আমরা স্বাভাবিকভাবে কয়েকবার শুনি। বেশি ভালো লাগলে কয়েকদিন তা ধারাবাহিকভাবেই শোনেন শ্রোতারা। আর নির্দিষ্ট একটা সময় পর সেই গানটি কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই আমরা শুনি। শুধু ভালো লাগার কারণে।’
নতুন প্রজন্মের অনেকে নিয়মিত ‘কাভার সং’ করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও নিয়মিত পরিবেশনা করে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় দেখা যায় কাভার করতে গিয়ে গানটির মূল সুর ও কথায় পরিবর্তন এনে থাকেন। এ ক্ষেত্রে মূল শিল্পীদের সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, বিষয়টি তারা জানেন না। তাদের অজান্তেই গানটির কথা ও সুর পরিবর্তন করা হয়েছে। দর্শক-শ্রোতারাও এ ক্ষেত্রে বিকৃত করার অভিযোগ জানিয়ে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে।
‘এখন প্ল্যাটফর্মগুলো ওপেন, সবাই নিজ ইচ্ছামত যখন যা খুশি করছে। প্ল্যাটফর্ম ওপেন হওয়ায় আপনি-আমি চাইলেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। যদি না আমরা যারা গান করি, যারা কাভার করি, তারা যদি সচেতন না হয়। এ জন্য যিনি কাভার করবেন, তার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। গানের কথা ও সুরে পরিবর্তন আনলেও তা মূল শিল্পীকে জানানো উচিত এবং তা এমনভাবে উপস্থাপন করা উচিত নয়, যা নিয়ে শ্রোতা কিংবা সংশ্লিষ্টরা আপত্তি জানাতে পারেন।’
মৌলিক গানের প্রসঙ্গ উঠতেই অবন্তী সিঁথি বলেন, ‘মৌলিক গানের সংখ্যা কমেনি। অনেক গান হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির সবাই নিয়মিত মৌলিক গান করছেন। মৌলিক গান হয় বলেই আমরা নিয়মিত কাজ করতে পারছি। তা না হলে তো অলস সময় পার করতে হতো। তবে এটা বলা যায়, সব গানগুলো আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।’
শ্রোতাদের কাছে গান পৌঁছাতে না পারার বিষয়টি এর আগেও কয়েকজন শিল্পী জানিয়েছেন। সবারই ভিন্ন ভিন্ন মতামত ছিল। গায়িকা অবন্তী সিঁথির কাছে বিষয়টি নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ বা বোদ্ধাও না। কয়েকটি বিষয় জড়িত থাকতে পারে বলে মনে হয়। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে, এখন ওপেন প্ল্যাটফর্ম। এখানে কিছুই সেভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আর এখন বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয় আমাদের। আমার কাছে মনে হয়, সেই প্রতিযোগিতায় কোথাও আমরা পিছিয়ে আছি। এ কারণে হয়তো বাংলা গানগুলো আশানুরূপ শ্রোতাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। আবার যারা পছন্দ করেন, তারা ঠিকই খুঁজে নিয়ে শোনেন।’
ছোটবেলা থেকে সংগীতের সঙ্গে জড়িত থাকলেও পড়ালেখা শেষ করে দেশের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন অবন্তী সিঁথি। শিক্ষকতার পেশায় থাকলেও পাশাপাশি গান করেছেন তিনি। যদিও পরবর্তীতে শিক্ষকতা পেশা থেকে সরে এসেছেন। পুরোদমে ব্যস্ত হয়েছেন গানে। কিন্তু শিক্ষকতা পেশা ছাড়লেন কেন, জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।
‘একান্তই আমার নিজের ভাবনার কথা বলছি, আমার কাছে মনে হয়―কোনো কিছুই পাশাপাশি ভালোভাবে করা যায় না। কিছু করে যদি শতভাগ ফলাফল পাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে সেখানে শতভাগ উৎসর্গ করেই কাজ করতে হয়। ওই সময়টায় বলা যায় দুই নৌকায় পা দিয়ে সুবিধা করতে পারছিলাম না। টিচিং প্রফেশন আমার অনেক পছন্দের। আর গান তো রয়েছেই। হোক পড়ালেখা বা সংগীতের কিছু, নিজে যা জানি, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভালো লাগে। ওই সময় আমার কাছে মনে হয়েছে, একসঙ্গে দুটো করে আনন্দ পাচ্ছি না। ফলে সিদ্ধান্ত নেই যেকোনো একটা করার। তারপর পুরোপুরি গানে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।’