বাংলাদেশের মেকআপ ম্যানরা আসলে কেমন?

সিনেমার মেকআপ বা রূপসজ্জা জরুরি একটি বিষয়। মেকআপ একজন অভিনয় শিল্পীকে নানা রূপ দিতে পারে। চরিত্রের প্রয়োজনে অভিনয় শিল্পীকে মেকআপ নিতেই হয়। চরিত্রটাকে বাস্তব রূপ দিতে এর বিকল্পও নেই।

হলিউডের মেকআপ শিল্প নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তাঁরা নিজেদের নিয়ে গেছেন উচ্চ এক আসনে। বলিউডও পিছিয়ে নেই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে? জেনে রাখা ভালো। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে প্রতি বছর শ্রেষ্ঠ মেকআপ ম্যানের পুরস্কার দেওয়া হয়। যেমন, সর্বশেষ ২০১৫ সালের আলোচিত সিনেমা ‘জালালের গল্প’র জন্য শ্রেষ্ঠ মেকআপ ম্যান হয়েছেন শফিক।

মেকআপ ম্যানদের অন্যরকম কদর রয়েছে নায়িকাদের কাছে। প্রতিজন সিনেমার নায়িকাদের তো আবার নিজস্ব মেকআপ ম্যানও রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো তাঁরা নায়িকাদের হাঁড়ির খবরও জানে। তবে সে প্রসঙ্গে আজ যাব না। আজ শুধু মেকআপ ম্যান সিনেমার জন্য কতটা জরুরি তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।

নায়িকা কবরীর মেকআপ ম্যান ছিলেন কাদরী নামের একজন। কবরীর অন্যতম কাছের মানুষও ছিলেন তিনি। তাঁকে নিয়ে একদিন কবরী বলছিলেন ‘তাঁর হাতের জাদু আমাদের আরও গ্ল্যামারাস করে তুলত। আমাকে দেখে যে এক সময় যুবকরা পাগল ছিল। তার কৃতিত্ব তাঁরও কম নয়। আবার চরিত্রের প্রয়োজনে সুন্দর মুখকে অসুন্দর করতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সুতরাং, ছবির আশুকাকা ছিলেন বাংলা সিনেমার মেকআপ ম্যানদের পথিকৃৎ। তিনি মারা যাওয়ার পর কাদরী মেকআপ ম্যান হিসেবে নতুন একটি ধারা তৈরি করেছিলেন। এখন যারা ফিল্ম কিংবা টিভি নাটকে সাজসজ্জার কাজ করেন তাদের বেশিরভাগই কাদরীর উত্তরসূরি ‘

কালে কালে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য মেকআপ ম্যান এসেছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত মেকআপ আর্টিস্ট ম ম জসীম। বর্তমানে তিনি আমেরিকাতে বসবাস করছেন। বাংলাদেশের অসংখ্য চলচ্চিত্রের মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। আমেরিকার ‘টাইম টিভি’ এবং ‘টিবিএনটোয়েন্টি ফোর’ টিভির মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। বিবিসি এবং চ্যানেল ওয়ানেরও চীফ মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

এ প্রজন্মের নায়িকাদের কাছে মেকআপ আর্টিষ্ট মনির হোসেন প্রিয় একটি নাম। প্রায় একযুগ ধরে প্রবীণ শিল্পীদের পাশাপাশি নবীনদেরও মেকআপ করে থাকেন তিনি। ২০০৩ সালে মেকআপ আর্টিস্ট মানিকের হাত ধরে মিডিয়াতে আসেন। মেকআপ আর্টিষ্ট হিসেবে কাজ করেছেন নোবেল, মৌ, আগুন, মৌসুমী, পপি, অপি করিম, মিম, নূসরাত ফারিয়া, ইমন, নীরব, দেব, কোয়েল মল্লিক’ সহ অনেক তারকার। মুম্বাইয়ের ইরফান খান, নেওয়াজ , পরেশরাওয়াল’র পারসোনাল মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। অনন্ত- বর্ষার মেকআপ ম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন ছিলেন। তাদের প্রায় সব সিনেমারমেক আপ আর্টিষ্ট হিসেবে কাজ করেছেন।

বাংলা সিনেমার একালে মেকাপের জন্য আলাদাভাবে প্রশংসা পেয়েছে। তার সংখ্যা খুবই কম। তবে তার মধ্যে ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার মেকআপ বেশ প্রশংসা পেয়েছিল। গল্পের প্রয়োজনে একই চরিত্রের বার বার সাজের পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল, বিভিন্ন লুকের সাথে সেগুলা এমন নিখুঁতভাবে করা হয়েছেযা গল্পকে প্রাণসঞ্চার করেছে। সিনেমার নায়িকা এই জন্য বাড়তি মেকআপ দিয়ে চোখে লাগার কারণ তৈরী করা হয়নি। কিছু দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে, মেকআপ ছাড়াই বোধ হয় শুট করা হয়েছে। মেকআপ করেছিলেন ভারতীয় (মোহাম্মদ আলী)। তিনি অবশ্যই এর জন্য প্রশংসার দাবিদার।

আমরা সাধারণত মনে করে থাকি মেকআপের সঙ্গে নারী শব্দটির মিল রয়েছে। কিন্তু না, বর্তমান সময়ের পুরুষরাও এই মেকআপের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে চলচ্চিত্র জগতের অভিনেতারাই এই শিল্পের সাথে বেশি জড়িত। কারণ এই মেকাপের মাধ্যমেই চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেক বড় বড় তারকাতাদের লুক পরিবর্তন করে অন্য লুক ধারণ করে থাকেন।
হলিউডে তো শুধুমাত্র মেকআপের জন্যই প্রশংসিত হয়েছে। এমন চরিত্র আছে ভুড়ি ভুড়ি। বলিউডও কম যায় না। সেক্ষেত্রে ‘পা’ তে অভিনয় করে তাক লাগিয়েছেন অমিতাভ বচ্চন। এই ছবিতে তিনি এমন রূপে হাজির হয়েছিলেন প্রথমে তাকে দেখে কেউ চিনতেই পারেনি। ছবিতে তিনি তারই ছেলে অভিষেক বচ্চনের ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ‘কাপুর এন্ড সন্স’ সিনেমায় বৈচিত্রময় চরিতে ঋষি কাপুর অভিনয় করেছেন। ‘ফ্যান’ ছবিতে শাহরুখেরএক রুপ দেখে চেনার উপায় ছিল না। ‘কৃশ ৩’ সিনেমার হৃত্বিক রোশনের মেকআপও বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

এরকম উদাহরন টানলে শেষ হবে না। বহি:বিশ্বের চলচ্চিত্রে মেকআপ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে আছে। বাংলা সিনেমার বয়স এতবছর হলেও গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি। কয়েকজন মেকআপ আর্টিষ্ট এর সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে। তাদের আসলে খুব বেশি কিছু করার থাকে না। শুধু ফর্সা করার জন্য যা করার দরকার তা করে থাকেন। বাহিরের দেশগুলোতে নানা রকম চরিত্র সৃষ্টি করা হয়। যারজন্য মেকআপ জরুরি। তা আসলে এখানে হয় না। যেহেতু এখানে এর চাহিদা কম। তাই মেকআপ আর্টিষ্টদের অর্থনৈতিক ক্ষরায়ও পড়তে হয় নানা সময়।

বাংলা অনেক সিনেমাই আপনার কাছে শুধু খারাপ নয়। বিরক্তির কারণ হবে অতিমাত্রায় মেকআপ। যদি এখানে শিক্ষিত মেকআপ শিল্পীদের আগমন ঘটতো তাহলে চলচ্চিত্রের জন্যই তা শুভবার্তা বয়ে নিয়ে আসত। এদেশে মেকআপ প্রশিক্ষনের জন্যও নেই কোন ব্যবস্থা। তাহলে তাদের দিয়ে ভালো কিছু কীভাবে আশা করা সম্ভব! সবাই দেখে দেখে যা শিখেছেন। ও হ্যাঁ , এটা বলাও জরুরি। এখনকার সব বড় বাজেটের সিনেমার মেকআপ ম্যান ভারত থেকে আনা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, ২৫ আগস্ট ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস

Scroll to Top