শাকিবের উত্তরসুরি কে?

নায়ক রহমানের বিকল্প হিসেবে আসলেন রাজ রাজ্জাক। দীর্ঘ সময় নাম্বার ওয়ান নায়ক তকমা লাগিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে অধিষ্টিত ছিলেন। সমসাময়িক সোহেল রানা, বুলবুল আহমেদ, ফারুক, আলমগীর, ওয়াসিমদের জনপ্রিয়তাও কম ছিল না। পরবর্তী সময়ে জনপ্রিয়তার কাতারে যোগ দিলেন জসিম, জাফর ইকবাল , ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল, মান্না। সেক্ষেত্রে মান্নার রাজত্ব বেশ কিছুদিন ছিল। প্রায় একই সময়ে সালমান শাহর আলোর ঝলকানিও বাংলা চলচ্চিত্রে লেগেছিল বেশ কিছুদিন। সে আলো এখনো মিটিমিটি করে জ্বলছে। সালমান শাহর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে আসলেন রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস, শাকিব খান। এক কাতারে এসে সবাই জনপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন। সালমান শাহর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে মান্না ছিলেন সবার থেকে একটু এগিয়ে। একটা সময়ে এসে টক্কর চলছিলো শাকিব- মান্না। কিন্তু মান্নার মৃত্যুর পর একক আধিপত্য চলে যায় শাকিবের হাতে। সেই রাজত্ব আজ্যবধি চলছে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ক্যারিয়ারটা উঠানামা করে চলছিলো শাকিবের। ২০০৬ সাল থেকে একক অধিপত্য বিস্তার করেছেন শাকিব। যার পরবর্তী সময়ে না হয়েছে শাকিবের বিকল্প না হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী।

এ সময়ে এসে পরিচালকরা অনেককে শাকিবের বিকল্প ভেবেছেন। মান্নার মৃত্যুর পর অনেকেই তার ছায়া খুঁজে বেড়াতেন কাজী মারুফের মধ্যে। কাজী মারুফের শুরুটা বেশ আশানীয় থাকলেও বর্তমান সময়ে ক্যারিয়ারের যাচ্ছেতাই অবস্থা। নিম্নমানের ছবিতে যেমন অভিনয় করেন, তেমনি প্রযোজক হিসাবে টাকাও ঢালেন। যার আধুনিকতা নিয়ে রীতিমতো ট্রলের শিকার হতে হয় এ অভিনেতাকে। তার সম্ভাবনা ছিল শাকিবের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া। কিন্তু সে আশা বর্তমানে ত্যাগ করা শ্রেয়। এক শাকিবকে নিয়ে কয়টা সিনেমা বানানো যায়? পরিচালকরা ভিন্নপথে হাটলেন। জায়েদ খান, বাপ্পী, সাইমনদের সুযোগ দিলেন। জায়েদ খান বেশ কিছুদিন এফডিসি কেন্দ্রীক রাজনীতিতে ব্যস্ত ছিলেন। তাই তার হাতে ছবির সংখ্যা বর্তমানে নেই বললেই চলে। সামনে মুক্তি পাবে ‘অন্তর জ্বালা’। প্রযোজক সে নিজেই। শাকিবের বিপরীতে বাপ্পীর ব্যস্ততা বেড়ে চলেছিল। বছরে ছয় থেকে সাতটিও সিনেমা মুক্তি পেয়েছে তাঁর। কিন্তু আলোচিত কিংবা প্রশংসিত সিনেমার সংখ্যা খুবই কম। সাইমনের অবস্থায়ও প্রায় একই। কিন্তু সময়ের স্রোতে তারা ব্যার্থতার পাল্লাই ভারি করেছেন। ছোট পর্দা থেকে গিয়ে আনিসুর রহমান মিলন, নীরব, ইমনদেরও চেষ্টা ছিল। কিন্তু দর্শক গ্রহনযোগ্যতা কখনো শাকিবকে ছাড়াতে পারেনি। মাঝখানে নিজ চেষ্টায় ভিন্নতা দিয়ে প্রযোজক ও নায়ক অনন্ত জলিল শাকিবের সঙ্গে লড়াইটা জমিয়ে রাখছিলেন। হঠাৎ যেন কোথায় সে হারিয়ে গেলেন। নতুন কোন চলচ্চিত্রের খবর নেই।

আলাদা করে বলতে হয় শুভ কী পারবে? এ সময়কার অন্যতম নির্ভরযোগ্য চিত্রনায়ক আরেফিন শুভ। ঝুলিতে বেশ কিছু আলোচিত চলচ্চিত্র রয়েছে। কিন্তু এতদিন তার ছবির ব্যবসায়িক খরা ছিল। সে খরায় রীতিমতো ঝড় হয়ে আসলো সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ঢাকা অ্যাটাক’।ব্যাবসায়িক সফলতার পাশপাশি বহুল আলোচিত হয়েছে এ সিনেমাটি। হাতে আছে ‘মৃত্যুপুরী’ নবাগত পরিচালক জায়েদ রেজওয়ান। অষ্ট্রেলিয়ায় চিত্রায়িত। এছাড়া জাকির হোসেন রাজুর পরিচালনায় ‘ভালো থেকো’, নায়ক আলমগীর পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’। জানা যায়, উত্তম আকাশের সঙ্গে নতুন একটি সিনেমায় অভিনয়ের ব্যাপারে কথা চলছে। তার ভাষ্য, ‘শুরু থেকেই আমি গড়পরতা সিনেমায় অভিনয় করিনা। সেভাবে গত ছয়মাসে ভালো কোন ছবির অফার আসেনি। তাই নতুন কোন ছবিতে চুক্তিবদ্ধও হওয়া হয়নি’।

২০১৭ সাল শেষের দিকে। শাকিব খান যৌথ প্রযোজনা হোক আর খাঁটি দেশীয় হোক দু’ ধারাতেই ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। নিজের লুক পরিবর্তনে সময় দিচ্ছেন। দর্শক প্রতিনিয়ত এক নতুন শাকিবকে পাচ্ছে। প্রযোজক কিংবা পরিচালক শাকিবের পেছনে লাইন লাগাচ্ছে। পারিশ্রমিক ৩৫ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ হাকাচ্ছেন। সেটা ভরসা করে প্রযোজকরা দিতেও কার্পণ্য করছেন না। বাংলা চলচ্চিত্র তাহলে কোনদিকে যাচ্ছে? এক নায়কের উপর ভরসা আর কতদিন? বছরে কম হলেও ৬০-৯০ টি সিনেমা মুক্তি দিতে হবে হল চালানোর জন্য। সেখানে ভালোমন্দ যেটাই হোক। শাকিব ছবির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। সে বর্তমানে চার থেকে পাঁচটির বেশি সিনেমা করতে নারাজ। তাহলে বিকল্প তো ভাবতে হবে?বিকল্প কেউ ভাবছে না। পয়সা নিয়ে বসে আছে সব বড় প্রযোজক। শাকিব সিডিউল দিলেই তবে সিনেমা নির্মাণ করবে। অপরদিকে ক্রমশ বেকার হয়ে পড়ছে এফডিসি ও শাকিবের পরবর্তী সময়ে আশাজাগানীয় নায়করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ০৪  নভেম্বর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস

Scroll to Top