শনিবার বিকেল’ এর মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই

প্রেক্ষাগৃহে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত আলোচিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ দেখাতে আর কোনো বাধা নেই। শনিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সাংবাদিক ও আপিল বোর্ড সদস্য শ্যামল দত্ত। এর আগে, সাড়ে তিন বছর ধরে সেন্সর বোর্ডে আটকে ছিল সিনেমাটি।

জানা গেছে, শনিবার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার ব্যাপারে আপিল বোর্ডের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আপিল কমিটির সদস্যরা এ সময় সিনেমাটির নির্মাতা–প্রযোজকের বক্তব্য শোনেন। এরপর, সিনেমাটি নিয়ে নিজেদের মতামত দেন করেন কমিটির সদস্যরা। এ সময়, ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিতে কোনো বাধা নেই বলে জানান তারা।

শনিবার সন্ধ্যায় পোস্ট করা এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, কেমন অনুভুতি হয় যখন আপনি দেখেন সারা দুনিয়া ছুটে চলেছে আর আপনি একাই থেমে? ভীষণ অপ্রয়োজনীয় লাগে নিজেরে! এই কয় বছর তাই লাগছিলো!

বাইরে থেকে কি মনে হয় জানিনা, ভেতরে ভেতরে শিল্পীদের মতো একাকী মানুষ আর কেউ নাই! গত চারবছর ধরে শনিবার বিকেল নিয়ে যখন স্ট্রাগল করতেছিলাম, তখন নিজেরে অদরকারী ভাবার সাথে যে অনুভুতিটা আমাকে গ্রাস করতো সেটা হলো একাকীত্ব।

কিন্তু এই কয় মাস শনিবার বিকেলের মুক্তির দাবিতে ফিল্ম অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের কলিগ, আমাদের দর্শক ভাই-বোন, এবং সমাজের সব স্তরের মানুষ যেভাবে কন্ঠ উঁচু করেছেন, তাতে আমি আর একা বোধ করি নাই। মনে হয়েছে আমি অনেকের সাথে আছি, মাঝে আছি। আপনাদের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ছবিটার মুক্তির জন্য নেপথ্যে যে ভাই-বোনেরা কাজ করেছেন তাদের সবাইকে সালাম। পত্র-পত্রিকা, ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

আপনাদের মতো আমিও পত্রিকা মারফত জেনেছি, আপীল বোর্ড শনিবার বিকেল ছবিটা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উনারা হয়তো উনাদের ছোট কিছু অবজারভেশন জানাবেন যেটা ডিটেইল এখানে আলোচনা করতে চাচ্ছি না। আমরা আশা করি উনারা দ্রুতই আমাদের এই বিষয়ে চিঠি দিবেন যাতে আগামী শুক্রবার বা তার পরের শুক্রবার ছবিটা মুক্তি পায়। মোট কথা ফারাজের সাথে বা আগেই ছবিটা মুক্তির ব্যবস্থা করবো ইনশাল্লাহ।

এই সুযোগে আমি আপীল বিভাগের বিজ্ঞ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। শেষে একটা কথা বলতে চাই, আমার মতো এই অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যেনো কোনো ফিল্মমেকার না যায়। আমরা বাঁচি আর কয় দিন। কাজের সময় খুব কম। এইভাবে তা অপচয়ের কোনো মানে নাই।

সবাই ভালো থাকবেন।
আমি এখন একটু ঘুমাবো!

এর আগে, ২০১৯ সালে ১৫ সদস্যের সেন্সর বোর্ড ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি প্রদর্শনের উপযোগী নয় বলে মতামত প্রদান করেছিল। এতে বলা হয়েছিল, সিনেমাটি ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। সিনেমায় সামরিক বাহিনীর সদস্য, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সদস্যরা জীবন দিয়ে অসহায় জিম্মিদের উদ্ধার করেছেন-এ বিষয়টি যথাযথভাবে উঠে আসেনি। এ কারণে এই দৃশ্যগুলো সংযোজন করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে একই ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত ভারতীয় সিনেমা ‘ফারাজ’। এ সিনেমার মুক্তির খবর পাওয়ার পরই ক্ষুব্ধ হন ফারুকী। তিনি দাবি করেন, ‘ফারাজ’ মুক্তির আগেই ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি দিতে হবে। নির্মাতার পাশাপাশি অন্যান্য নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরাও সিনেমাটি মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ, ভারত ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মামুনুর রশীদ, ইন্তেখাব দিনার, ইরেশ যাকের, ফিলিস্তিনি অভিনেতা ইয়াদ হুরানি, এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সিনেমাটি এখনও কোথাও প্রদর্শিত না হলেও মিউনিখ, মস্কো, সিডনি, বুসান, প্যারিসের ভেসুল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত ও পুরস্কৃত হয়েছে ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’।