হোটেলের বিল পরিশোধ না করায় শুটিং ইউনিটকে দুই দিন ধরে আটকে রেখেছে হোটেল কুয়াকাটা ইন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি হোটেল। বিল পরিশোধ না করায় ক্যামেরা, লাইট ও শুটিংয়ের অন্যান্য মালামালসহ তাদের আটকে রাখা হয়েছে বলে জানান বিশ্বজিৎ দত্ত নামের এক ব্যক্তি যিনি ক্যামেরাম্যান। অথচ নাটকের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কিংবা পরিচালকসহ দায়িত্বশীল কেউই কোনো ধরনের সমাধানে এগিয়ে আসছেন না বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ তুলেছেন। তবে সেই নাটকের অভিনয়শিল্পীরা শুটিং শেষে আগেই ঢাকা ফিরেছেন।
ক্যামেরাম্যান বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, ‘আমি অনেক সেটে কাজ করেছি কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কখনো পরিনি। এটা আমার জন্য লজ্জাজনক একটি অধ্যায়। অনন্ত হীরা ভাইয়ের সহকারী পরিচালক সুমন মল্লিক আমাকে এই দুটি নাটকে কাজ করার প্রস্তাব দেন। এরপর হীরা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে নাটক দুটির স্ক্রিপ্ট বুঝে নিই। কিন্তু পরে তিনি আর কুয়াকাটায় শুটিংয়ে আসেননি। তার মনোনীত একজনকে পাঠান শুটিং পরিচালনার জন্য। কিন্তু কাজ করার পর এ কোন পরিস্থিতিতে পড়লাম! আমাদের পারিশ্রমিক তো পাইনি উল্টো এখানকার থাকা খাওয়ার যে খরচ তার বিলও পরিশোধ না করায় আমাদের আটকে রাখা হয়েছে।’
অনন্ত হীরার রচনায় ‘ডিজিটাল মিসকিন’ ও ‘গাইড’ নামে দুটি নাটকের শুটিং করতে কুয়াকাটা যায় শুটিং ইউনিট। নাটক দুটি অনন্ত হীরার পরিচালনা করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি অসুস্থতার কারণে এ নাটক দুটি পরিচালনা করতে পারেননি। তাই তার সহকারী পরিচালক সুমন মল্লিক নাটক দুটি পরিচালনা করেন। ডুয়েট ডট কমিউনিকেশনের ব্যানারে নির্মিত নাটক দুটির নির্বাহী প্রযোজক মায়দুল ইসলাম পাভেল এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নির্মাণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম মাসুদ।
এ প্রসঙ্গে সাইফুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘নাটকটির নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে ছিলেন মায়দুল ইসলাম পাভেল। শুটিং শুরুর আগে তিনি কিছু টাকা দিয়েছেন। বাকীটা পরে দেয়ার কথা। কিন্তু শুটিং সেটে মায়দুল সাহেব এসে দেখেন পরিচালক হীরা ভাই নেই। এরপর তিনি চলে যান। আমি তাকে বিষয়টি বোঝাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু তিনি মানতে নারাজ। হীরা ভাই পরিচালনা না করলে এ দুটি নাটকে তিনি টাকা ইনভেস্ট করবেন না। এজন্য আমরা ফেঁসে গেছি।’
অনন্ত হীরা নাটক দুটি পরিচালনা করতে পারবেন না- আপনি জানতেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘আমি জানতাম হীরা ভাই শুটিংয়ে যেতে পারবেন না। তবে তিনি যে এভাবে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন তা তো জানতাম না।’
এ প্রসঙ্গে অন্তত হীরা বলেন, ‘ওই নাটক দুটির স্ক্রিপ্ট আমি দিয়েছি। কিন্তু প্রযোজকের নিজেরই নাটক দুটি পরিচালনা করার কথা। এরপর তিনি শুটিং ইউনিট নিয়ে গিয়েছেন এবং শুটিং করেছেন বলে জেনেছি। কিন্তু এখন হোটেলের বিল পরিশোধ করতে পারেননি তাই ক্রুদের হোটেল কর্তৃপক্ষ আটকে রেখেছেন। আমি ফোনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ওখানে টাকা পয়সা দেয়া হয়েছে এবং বিষয়টি এখন মিটে গেছে।’
আপনার নাকি নাটক দুটি পরিচালনা করার কথা ছিল? জবাবে হীরা বলেন, ‘হ্যাঁ, সেটা ঠিক আছে। আর ওর (প্রযোজক) টাকা-পয়সার লেনদেন ঠিক নাই সেটাও একটা কারণ। এছাড়া আমিও অসুস্থ ছিলাম যার কারণে যেতে পারিনি। তারপরও ও সেটে গিয়েছে। ওর কাজ করে আসার কথা। আমি তো স্পটে যাইনি তাই বেশি কিছু জানি না।’
নাটক দুটির বর্তমান পরিচালক সুমন মল্লিক বলেন, ‘আসলে এ নাটক দুটি পরিচালনা করার কথা ছিল অনন্ত হীরা ভাইয়ের। কিন্তু কোনো কারণে তিনি পরিচালনা করতে পারেন নি। এরপর তার অবর্তমানে আমি নাটক দুটি পরিচালনা করেছি। নাটক দুটির প্রযোজক মাসুদ ভাই। তার কাজ নিয়েই আমরা কুয়াকাটা এসেছি। কিন্তু হোটেলে বিল পরিশোধ না করতে পারায় হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাদের আটকে রেখেছেন। এটা ঠিক যে, শুরুতে হীরা ভাইয়ের পরিচালনা করার কথা ছিল। কিন্তু কুয়াকাটায় শুটিং শুরুর আগেই তিনি বলেছিলন- শুটিং করতে পারবেন না। কিন্তু মাসুদ ভাইয়ের তাড়ায় আমরা কাজটি করতে এসেছিলাম।’
হোটেল বিল বাবদ ১ লাখ ২১ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন মাসুদ। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ বিল করেছেন ৩ লাখ টাকা। এ প্রসঙ্গে মাসুদ বলেন, ‘হোটেল বুক করার আগে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছিল মোট বিল হবে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মোট বিল থেকে আমাদের সম্মানে কিছু টাকা কম নেবেন তারা। কিন্তু তারা এখন সেটা তো করছেই না বরং আমাদের কাছে আরো বেশি টাকা চাচ্ছেন এবং আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে। এখনো বিষয়টি সমাধান হয়নি।আজকে ঢাকায় ফিরতে পারব কিনা তাও সঠিক জানি না। তবে প্রত্যেকটি সমস্যার সমাধান রয়েছে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ণ্টা, ২৪ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি