স্বপ্নের বলিউড, চাট্টিখানি কথা নয়! রীতিমতো যুদ্ধ করে এখানে টিকে থাকতে হয়। শুরুটা তো কপালের ব্যাপার। কেউ বহুবছর ধরে সাধনার পরে সুযোগটা পায়, আবার অনেকে না চাইতেও হয়ে যায় বলিউড তারকা। আজ এমন কয়েকজন তারকার শুরুর গল্পটা বলা হলো:
অক্ষয় কুমার: ব্যাংককে ওয়েটার এবং শেফের কাজ করতেন। বাংলাদেশের পূর্বাণী হোটেলেও কাজ করেছেন। তবে বরাবরই মার্শাল আর্টের প্রতি ঝোঁক ছিল। চেয়েছিলেন মার্শাল আর্টের শিক্ষক হতে। সেই মার্শাল আর্টের ক্লাসের এক ছাত্রই তাঁকে পরামর্শ দেন মডেলিংয়ের। সেখান থেকেই মডেলিংয়ের শুরু। মাত্র দুদিন কাজ করে যে পয়সা পেলেন তা ছিল তাঁর তখনকার মাসিক বেতনের চেয়ে বেশি। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন মডেলিংয়েই ক্যারিয়ার গড়বেন। মডেল হিসেবে থাকতে চাইলেও ভাগ্যচক্রে জড়িয়ে পড়েন অভিনয়ে। ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন মডেলিংয়ের এক অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে। এই ফাঁকে ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলেন নিজের পোর্টফোলিও নিয়ে। ভাগ্যে যখন সহায়, আর কি লাগে! সেদিন সন্ধ্যাতেই প্রযোজক প্রমোদ চক্রবর্তীর ছবি ‘দিদার’ সাইন করেন অক্ষয়।
প্রীতি জিনতা: ১৯৯৮ সালে বলিউডে প্রীতির অভিষেক ঘটে ‘দিল সে’ সিনেমার মাধ্যমে। কিন্তু পড়াশুনায় ভীষণ ভালো ছাত্রীর বলিউডে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। এক বন্ধু অডিশন দিতে গিয়েছিল। সেখানে দেখা মেলে শেখর কাপুরের। তিনি প্রীতিকেও অডিশন দিতে বলেন। অডিশন দিলে সিলেক্ট হয়ে যায় এ ডিম্পল কন্যা। সিনেমার জন্য মনোনীত হওয়ার পরও তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না যে, তাঁর কি করা উচিত। তারপর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে টস করতেউদ্যত হন। ভাগ্যক্রমে টসে জিতে যান এবং অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শেখর কাপুর তাঁকে চেয়েছিলেন হৃত্বিক রোশনের বিপরীতে ‘তারা রাম পাম’ ছবির জন্য। সে ছবি কোনোভাবে ক্যানসেল হয়ে যায। পরবর্তীতে শেখরই মনিরত্নমের ‘দিল সে’ ছবিতে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। সিনেমায় মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ খান এবং মনীষা কৈরালা।
মাধুরী দীক্ষিত: ধাক ধাক কন্যার কিন্তু বলিউডে নাম লেখানোর কোনো ইচ্ছেই ছিল না। এমনকি তার পরিবারেরও ছিল ঘোর আপত্তি। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে গেলেন বলিউডের টিকিট। মাধুরীর অভিষেক ঘটে ১৯৮৪ সালে ‘আবোধ’ সিনেমার মাধ্যমে। নাচে বরাবরই ভালো ছিল মাধুরী। আর তা জানতেন তাঁর বান্ধবীর বাবা গোবিন্দ। তিনি রাজশ্রী প্রোডাকশনে কর্মকর্তা ছিলেন।
১৯৮৪ সালে রাজশ্রী প্রোডাকশন নতুন সিনেমার জন্য ঘোষণা দেয় তারা নতুন মুখ খুঁজছে, সেই সূত্র ধরে গোবিন্দ মাধুরীকে বলেছিলেন সিনেমায় কাজ করতে। শুরুতে রাজি না হলেও বান্ধবীর জোড়াজুড়িতে আর না করতে পারলেন না। আর এভাবেই বলিউডে অভিষেক ঘটে মাধুরীর।
অর্জুন রামপাল: মিলিটারি পরিবারের ছেলে। পড়াশুনা করেছেন দিল্লির হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে। ক্যারিয়ারটা তাই সেভাবেই গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম, দিল্লির এক ডিস্কোতে ডিজাইনার রোহিত বলের নজরে পড়েছিলেন তিনি।রোহিতই তাঁকে মডেলিংয়ে নিয়ে আসেন। এ ভাবেই বলিউডে পা রাখা অর্জুনের। বলিউড শুরুটা হয়েছিল ২০০১ সালে রাজিব রয়ের ‘পেয়ার ইশক অউর মোহাব্বত সিনেমার মাধ্যমে। বলিউডে আসার আগে মডেল হিসাবে বেশ নাম করেছিলেন।
বিপাশা বসু: বাঙ্গালি কন্যা বিপাশার জন্ম দিল্লীতে। বাবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বাবার রিটায়ার্ডের পর কলকাতায় স্থায়ী হয় বিপাশার পরিবার। সেখান থেকেই তাঁর মডেলিংয়ের শুরু। অর্জুন রামপালের স্ত্রী মেহর জেসিয়া ভারতের বিখ্যাত মডেল। ১৯৯৬ সালের ঘটনা, কলকাতার এক হোটেলে মেহরের চোখে পড়েছিলেন বিপাশা বসু। মেহর তাঁকে মডেলিংয়ে নামার জন্য উৎসাহ দেন। এরপরেই বিনোদন দুনিয়ায় আসেন বিপাশা। স্কুলের ডানপিটে মেয়ে বিপাশার স্বপ্নেই ছিল বলিউড। বাসা থেকে একরকম পালিয়ে তিনি মডেলিং করেছেন। ২০০৫ এবং ২০০৭ সালে `সেক্সিয়েস্ট ওম্যান ইন এশিয়ার` মুকুট জিতেছেন। অভিনয়ে এসেও খোলামেলা এ গ্ল্যামার গার্ল প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু বিপাশার বলিউড যাত্রাটা সহজ ছিল না। এক মডেলিং প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন বিনোদ খান্না। তিনি অক্ষয় খান্নার বিপরীতে ‘হিমালয় পুত্র’ নামে একটি ছবিতে প্রথমে তাঁকে ব্রেক দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিপাশাই অভিনয় করতে রাজি হননি। জেপি দত্তের ‘রিফিউজি’ ছবিতে অভিনয়ের কথা থাকলেও বাদ পড়েন। শেষমেষ ২০০১ সালে আব্বাস-মাস্তানের ‘আজনবি’ ছবিতে অভিষেক হয়।
আনুশকা শর্মা: ডিজাইনার থেকে অভিনেত্রী। বেঙ্গালুরুর একটি ফ্যাশন ইভেন্টে জিন্সের দোকানে ডিজাইনার ওয়েনডেল রডড্রিক্সের সঙ্গে দেখা মেলে আনুশকার। তার কথাতেই মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন নায়িকা। বলিউডে প্রথম চেষ্টাতেই সফল। যশরাজ ফিল্মসে অডিশন দিয়ে পাশ করে রীতিমতো শাহরুখের নায়িকা বনে গেলেন। ২০০৭ সালে ভেবেছিলেন মডেলিং করবেন। ২০০৮ সালে শাহরুখের বিপরীতে আদিত্য চোপড়ার পরিচালনায় ‘রাব নে বানা দে জোড়ি’র নায়িকা বনে গেলেন। কপাল তো একেই বলে।
রণবীর সিং: ২০১০ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। বলিউডের কাস্টিং ডিরেক্টর শানু শর্মার বাসায় একটি গানের আসর বসেছিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আদিত্য চোপড়া। শানুর পরিচিত হওয়ায় রণবীরও সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে রাম-লক্ষণ সিনেমার ‘মাই নেম ইজ লক্ষণ’ গানটিচালানো হয়। গানের তালে সেদিন বেশ নেচেছিলেন। আদিত্যর সুনজর পড়ে যায়। ওই বছরই ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ সিনেমার মাধ্যমে সিনেমায় রণভীরেরঅভিষেক ঘটে।
শাহরুখ খান: খেলাধুলার জগতে নিজের ক্যারিয়ার বানাবেন বলেই ভাবতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু পিঠের ব্যাথা এবং আর্থ্রাইটিস এর মতো সমস্যা তার খেলাধুলাটা হলো না। অনার্স শেষে তিনি ‘জামিয়া মিল্লা ইসলামিয়া’ নামক একটি গণযোগাযোগ গবেষণা কেন্দ্রে মাস্টার্স পড়ার জন্য ভর্তি হন। চলচ্চিত্র এবং সাংবাদিকতা, এই দুটি বিষয়ে তিনি পড়াশুনা শুরু করেন। কিন্তু প্রথম বর্ষ শেষেই ভাইস-প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে মাঝপথেই মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করে দেন। ১৯৮৮ সালে শাহরুখ খান জীবনে প্রথম ‘দিল দরিয়া’ নামক একটি টিভি ধারাবাহিকে কাজ করার চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু নানা সমস্যায় এর কাজে বিলম্ব ঘটায় শেষ পর্যন্ত ১৯৮৯ সালে ‘ফৌজি’ নামক ধারাবাহিকেই তার অভিনয় জীবনের শুরু হয়। এই নাটকে তিনি ‘অভিমান্যু রায়’ নামের এক আর্মি ক্যাডেট চরিত্রে অভিনয় করেন।
‘ফৌজি’র বদৌলতে তিনি যে সুনাম অর্জন করেছিলেন তা তার জন্য সহায়ক হলো। তিনি দ্রুত চারটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেলেন। তার মধ্যে প্রথমটি ছিল সাবেক বলিউড অভিনেত্রী হেমা মালিনীর প্রথম পরিচালনা, ‘দিল আসানা হ্যায়’, যদিও তার বলিউড অভিষেক হয় ‘দিওয়ানা’ (১৯৯২) ছবিটির মাধ্যমে। ঋষি কাপুরের সঙ্গে দ্বিতীয় প্রধান নায়কের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন এবং সে বছর সেরা উদীয়মান অভিনেতা হিসেবে ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কার লাভ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে