চিত্রনায়িকা পরীমণিকে কথা বলার জন্য রাজধানীর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুপুরে তাকে সেখানে ডাকা হয়।
জানা গেছে, পরীমণি ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী হওয়ায় তাকে ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। বিকেল ৪টার দিকে পরীমণি তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকে সঙ্গে নিয়ে ডিবি অফিসে যাবেন। পুলিশ তার বক্তব্য শুনবে। আসামিদের দেওয়া তথ্য নিয়েও পরীমণির সঙ্গে কথা বলা হবে।
গতকাল সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের বাসা থেকে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৬৫), তুহিন সিদ্দিকী অমি (৩৩), লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা (২৪)। তাদের গ্রেফতারের পর সন্তোষ প্রকাশ করেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। এ সময় আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
এদের মধ্যে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি, পরীমণির করা মামলার নামীয় আসামি। ওই রাতেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বিমানবন্দর থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়। আজ আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।
উল্লেখ্য গত রবিবার প্রথমে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে অভিযোগ তোলার পর রাতে সাংবাদিকদের বনানীর বাসায় ডেকে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন পরীমণি। সংবাদ সম্মেলনে পরীমণি দুজনের নাম প্রকাশ করে জানান, একজনের নাম নাছির ইউ. মাহমুদ এবং অন্যজন তার (পরীমণি) কস্টিউম ডিজাইনার জেমীর স্কুলবন্ধু অমি নামের এক ব্যবসায়ী। এসময় পরীমণি আরও জানান, নাসির ইউ. মাহমুদ নিজেকে উত্তরা বোট ক্লাবের (ঢাকা বোট ক্লাব) সাবেক সভাপতি বলে নিজেকে দাবি করেন। পরীমণি বলেন, \”গত বুধবার (৯ জুন) রাত ১২টায় আমাকে বিরুলিয়ায় নাসির ইউ. মাহমুদের কাছে নিয়ে যায় অমি। সেখানে নাসির ইউ. মাহমুদ আমাকে মদ খেতে অফার করেন। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। তারপর আমাকে নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা করেন। অমিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।\”
পরে সোমবার সাভার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন পরী। এতে নাসির উদ্দিন ও অমির নাম উল্লেখ করে আরও ৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম আজ সোমবার গণমাধ্যমকে তা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলায় উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে বলেও জানা গেছে।
পরীমণি তার এজাহারে লিখেছেন, \”নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৫০), অমিসহ (৪১) অজ্ঞাতনামা চারজনের বিরুদ্ধে এ মর্মে এজাহার দায়ের করছি যে ৮ জুন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় আমার বর্তমান ঠিকানার বাসা থেকে আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি, বনিসহ দুটি গাড়িযোগে উত্তরার উদ্দেশে রওনা হই। পথিমধ্যে অমি বলে, বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো আমরা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি অনুরোধ করে, এখানে পরিবেশ সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো। আমরা ঢাকা বোট ক্লাবে ঢুকে টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর ১ নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ ১ নম্বর আসামি মদ্যপান করার জন্য জোর করেন।\”
মামলার এজাহারে পরীমণি আরও লিখেছেন, \”মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল ঢুকিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমি সামনের দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত পাই। ১ নম্বর আসামি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ১ নম্বর আসামি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারে। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ১ নম্বর আসামিকে বাধা দিতে চাইলে তাঁকেও মারধর করে। এ সময় আমি ৯৯৯–এ কল করতে গেলে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি টান মেরে ফেলে দেওয়া হয়। ২ নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন ১ নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে।\”
এজাহারে পরীমণি লিখেছেন, \”আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারব। প্রকাশ থাকে যে ২ নম্বর আসামি অমি পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাকে আমার বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায় এবং ২ নম্বর আসামি অমিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামির সহায়তায় ১ নম্বর আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। আনুমানিক রাত তিনটার সময় আমি আমার গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় আমার সঙ্গীদের সঙ্গে ফিরে আসি। আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছে। ওই বিষয়ে আমি আমার পরিবার, শিল্পী সমিতি ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।\”