সুখ্যাতিমান, দক্ষ, প্রতিভাবান ভারতীয় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেতা ছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। কিন্তু ঠিক এক বছর আগে এই দিনে (১৪ জুন) ঝড়ে যায় তার তাজা প্রাণ।
পরিবার, ভক্ত ও সহকর্মীদের কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। ২০২০ সালে বিশ্ব যখন করোনা মহামারি থেকে বাঁচার পথ খুঁজছিল, ঠিক তখন সুশান্ত বেছে নেন মৃত্যুর পথ! মুম্বাইয়ের বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় তার ঝুলন্ত মরদেহ। এ ঘটনা শোকস্তব্ধ হয়ে যায় গোটা বলিউড এবং সুশান্তের অনুরাগীরা।
মৃত্যুর পর সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে শুরু হয় সোরগোল। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্টে এই অভিনেতা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলেই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এক বছর পরও বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না সুশান্তের পরিবারসহ অনেকে।
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু যতটা নিঃশব্দে এসেছিল, তার মৃত্যু পরবর্তী অধ্যায়গুলি ততটাই বেশি জায়গা করে নিয়েছিল খবরের কাগজের শিরোনামে। মাদক, টাকা, স্বজনপোষণ, রাজনীতিসহ আরও নানা কিছু মিলমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
সুশান্ত ইস্যুতে প্রথম আওয়াজ তোলেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। সুশান্তের পরিবারের পক্ষ থেকেও অস্বাভাবিক মৃত্যুর দাবি জানানো হয়।
মুম্বাই পুলিশ সুশান্তের মৃত্যুর তদন্তে নেমে সুশান্তের প্রেমিকা অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর বয়ান রেকর্ড। তদন্তের জন্য ডাক পড়ে একের পর এক বলিউড তারকাদেরও।
সুশান্তের ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে জানানো হয়। কোনো আঘাত বা ফাউল প্লের চিহ্ন নেই বলেও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এতে আপত্তি জানিয়ে সুশান্তের বাবা সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। এক মাসের মাথায় রিয়া চক্রবর্তীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এফআইআরও দায়ের করেন তিনি। পরে পুলিশ অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন রিয়া। এরপর আগস্টে মৃত্যুর তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সুশান্ত কাণ্ডে মাদক যোগ খতিয়ে দেখতে প্রবেশ হয় এনসিবির। রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর মাদক মামলায় রিয়ার ভাই শৌভিক এবং সুশান্তের হাউজ ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডাকে গ্রেফতার করে এনসিবি। এরপর মাদক মামলায় গ্রেফতার করা হয় রিয়াকে। ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখা হয় তাকে।
মাদক মামলায় এনসিবির দফতরে ডাক পড়ে দীপিকা পাড়ুকোন, সারা আলি খান, রাকুল প্রীত সিং, শ্রদ্ধা কাপুরসহ বলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের।
একই বছর অক্টোবরে মেডিক্যাল বোর্ড সুশান্তের পরিবারের আনা শ্বাসরোধ অথবা বিষক্রিয়া করে খুনের তত্ত্বকে খারিজ করে দেয়। এরপর সুশান্তের মৃত্যুটি আত্মহত্যা বলেই প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন সুশান্ত সিং রাজপুত। তবে জন্মের বেশ কয়েক বছর পর পরিবারের সঙ্গে তিনি দিল্লিতে চলে যান। দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও ভর্তি হন। কিন্তু সেসময় থেকেই থিয়েটারে অভিনয় চর্চা শুরু করেন তিনি। নাচের তালিমও নেন। তবে শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা সম্পন্ন করতে পারেননি সুশান্ত।
সুশান্ত সিং রাজপুতের অভিনয় জীবন শুরু থিয়েটার দিয়ে। ভারতীয় টেলিভিশন স্টার প্লাসের ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ ধারাবাহিকের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে ছোট পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। এরপর জি টিভিতে ‘পবিত্র রিশতা’ ধারাবাহিকে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। ক্যারিয়ারে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করে যাচ্ছিলেন তিনি।
বেশকিছু হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন সুশান্ত। এরমধ্যে রয়েছে ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’, ‘কেদারনাথ’, ‘শোন চিড়িয়া’ ও ‘ছিছোরে’ ইত্যাদি। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আরও রয়েছে ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’, ‘রাবতা’ ও ‘পিকে’।
সুশান্ত সিং রাজপুতের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা ছিল ‘এম.এস. ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সফল ক্রিকেট অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির বায়োপিকটি তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। গত বছরের ২৪ জুলাই তার মৃত্যুর পর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় সুশান্তের শেষ সিনেমা ‘দিল বেচারা’। সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি বার দেখা সিনেমা হিসেবে নতুন নজির তৈরি করে এটি