এবার বাংলাদেশী সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নুর’ এর স্বত্ব কিনে নিল জার্মান ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফিল্মস বুটিক। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের এই সিনেমাটি কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আন সার্টেইন রিগার্ড ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পায়। এই সিনেমাটি এখন থেকে বিশ্বজুড়ে প্রচারের স্বত্ব পেল খ্যাতনামা এই প্রতিষ্ঠানটি।
পরিচালনার পাশাপাশি ছবিটির চিত্রনাট্যও লিখেছেন তরুণ নির্মাতা সাদ। ‘রেহানা মরিয়ম নুর’ রয়েছে আঁ সার্তে রিগার্দ শাখায়। কানের প্রতিযোগিতা বিভাগের পরেই এটি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের কোনো ছবি এবারই প্রথম এতে জায়গা করে নিল।
এ বিষয়ে বিশ্বখ্যাত বিনোদন ম্যাগাজিন ভ্যারাইটিতে এক প্রতিবেদনে বলেছে, সিঙ্গাপুরের জেরেমি চুয়ার প্রযোজনায় ছবিটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো সিনেমা হিসেবে কানের অফিশিয়াল সিলেকশনে ঠাঁই পেল।
নিজের প্রথম ছবি ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছিলেন সাদ। ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা পরিচালক ও সেরা অভিনেতার পুরস্কার জয় করে লাইভ ফ্রম ঢাকা। পরে লোকার্নো এবং রটেরডামের মতো চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয় ছবিটি।
প্রযোজক হিসেবে জেরেমি চুয়াও কানের নিয়মিত অংশগ্রহণকারী। এর আগে ২০১৬ সালে তার প্রযোজিত ছবি ‘এ ইয়েলো বার্ড’ জায়গা করে নেয় সম্মানজনক এই চলচ্চিত্র উৎসবে।
সিনোমটি সম্পর্কে ভ্যারাইটিতে বলা হয়েছে, এটি মেডিকেল কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর রেহানা মরিয়ম নুরের গল্প। যে একই সাথে একজন মা, কন্যা, বোন, চিকিৎসক ও শিক্ষক। নিজের জীবনকে সুন্দর স্বাভাবিক রাখতে যে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছে। একদিন, এক অধ্যাপকের ঘর থেকে একটি মেয়েকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যেতে দেখেন রেহানা। আর এই ঘটনা সমূলে পালটে দেয় তার আপাত সাধারণ জীবন।
সাক্ষাৎকারে পরিচালক সাদ জানান, আমি একটি বড় পরিবারে, তিন বোনের সাথে বেড়ে উঠেছি। আমার চিন্তা প্রক্রিয়ায় তাদের গভীর প্রভাব রয়েছে। আমার বিশ্বাস সেই প্রভাব থেকেই রেহানার জন্ম। এই চরিত্রটিকে নিয়ে আমি অনেক দিন ধরেই ভাবনাচিন্তা করেছি। যুক্তি ও আবেগের দ্বন্দ্বে আটকা পড়া এই জটিল নারীর চিন্তাকাঠামো বুঝতে চেয়েছি আমি।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা আমাকে আকৃষ্ট করেছে, তা হলো তার চরিত্রটি পরস্পরবিরোধীতায় পূর্ণ। কি সে চায়, আর কেনই বা চায় এটা বুঝতে তার নিজেরই অনেক চেষ্টা করতে হয়েছে, এমন এক দমবন্ধ করা জগতে সে থাকে যা বারবার তাকে ঠেলে দেয় চূড়ান্ত সীমার দিকে।
সাদ সম্পর্কে ভ্যারাইটির কাছে ফিল্মস বুটিকের সিইও গ্যাবর গ্রেইনার বলেন, সাদ তার দেশের এক অসাধারণ প্রতিভা, বিরল এক অডিও-ভিজ্যুয়াল নিয়ে তিনি সামনে এসেছেন। তার সিনেমায় তিনি বাংলাদেশের সমসাময়িক নাগরিক জীবন ও নারীর প্রতি সহিংসতার একটি হৃদয় নিংড়ানো, চিন্তাশীল ছবি দেখিয়েছেন, যা সারা বিশ্বের চলচ্চিত্র দর্শককে মুগ্ধ করবে।
সিনেমার প্রধান চরিত্রেরও প্রশংসা করেন গ্যাবর গ্রেইনার। এই সিনেমাটি বিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের সামনে তুলে ধরতে পেরে গর্বিত বলেও জানান।
ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন। এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন সাবেরী আলম, আফিয়া জাহিন জায়মা, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, কাজী সামি হাসান, ইয়াসির আল হক, জোপারি লুই, ফারজানা বীথি, জাহেদ চৌধুরী মিঠু, খুশিয়ারা খুশবু অনি, অভ্রদিত চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৫৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে নির্বাচিত হয় প্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’।