বলিউড তারকাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কার কতোদূর?

তারকাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশ কৌতুহলের বিষয়। কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ল? কে কোন ডিগ্রি নিলো? ড্রপ দিলো নাকি? এত ব্যস্ততার মাঝে এত পড়াশুনা! এতসব কৌতুহল মেটাতে বলি পড়ার তারকাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার খোঁজ খবর দেওয়া হলো:

অমিতাভ বচ্চন: বলিউডের তারকাদের হিসেবের খাতা খুললে তো তার নাম প্রথমে আসবে, সেটাই স্বাভাবিক। বলিউড শাহেনশাহ কিন্তু শিক্ষাদীক্ষাতেও কম নয়। বাবা বিখ্যাত ভারতীয় কবি হরিবংশ রাই বচ্চন। তার ছেলে অমিতাভ কলা বিভাগে নৈনিতালের শেরউড কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন৷ এরপর সায়েন্স, আর্টস দুটি বিভাগেই দিল্লির কিরোরী মল কলেজ থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেটও রয়েছে।

আমির খান: মিস্টার পারফেকশনিস্ট কিন্তু পড়াশুনায় পারফেকশনিস্ট ছিলেন না। মুম্বাইয়ের নারসি মনজি কলেজ থেকে মাত্র ১২ তম স্টান্ডার্ড শেষ করেছেন। দৌড়টা খুব বেশি হয়নি। ক্লাসে ছিলেন অনিয়মিত। বেশিরভাগ সময়টা তিনি নাটক নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। একটা সময় তো সিনেমাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ব্যাস পড়াশুনার চ্যাপ্টার ক্লোজ।

সালমান খান: ব্যাচেলর ডিগ্রিটা নেওয়া হয়নি সালমানের। মুম্বাইয়ের বান্দ্রার ন্যাশনাল কলেজ থেকে ড্রপ আউট ছাত্র আজকের সল্লু। সালমান পড়াশোনা শুরু করেছেন গোয়ালিয়রের স্কিডয়া স্কুল দিয়ে। পরে মুম্বাই, বান্দ্রার সেন্ট স্টেনিসলাস হাইস্কুলে পড়েছেন। সালমানের পরিবার শোবিজ জগতের। বাবা সেলিম খান একজন প্রখ্যাত অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার। ছোটবেলা থেকেই তাকে নিয়ে তার পরিবারের ভাবনা ছিল কবে অভিষেক হবে বলিউডে। তাই সেভাবেই তার শুরু হয়ে গেল।

শাহরুখ খান: কিং খান পড়াশুনাতে তেমন খারাপ ছিলেন না। দিল্লির হ্যান্সরাজ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি নিয়েছেন শাহরুখ। পরবর্তীতে নয়াদিল্লীর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া কলেজে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হন। তবে অভিনয়ে ব্যস্ততার জন্য আর সে ডিগ্রি সম্পন্ন করা হয়নি।

ঋত্বিক রোশান: মুম্বাইয়ের সিডেনহাম কলেজ থেকে কমার্সে গ্রাজুয়েশন। এর আগে মুম্বাই স্কটিশ স্কুলে। সিনেমায় কবে নাম লেখাবেন সেই অপেক্ষায় ছিলেন। পড়াশুনাটা ছিল জীবনের ফোর্থ সাবজেক্ট।

অক্ষয় কুমার: খিলাড়ির মনোযোগটা ছিল খেলাধুলায়। পড়াশুনার প্রতি বিশেষ মনোযোগটা কখনো ছিল না। মুম্বাইয়ের কিংস সার্কেলে ডন বসকো হাইস্কুল এবং গুরু নানক খালসা কলেজে পড়েছেন কিছুদিন। কলেজ থেকে বেরিয়ে ব্যাংককে মার্শাল আর্ট শিখতে চলে গেছেন। তারপর চাকরীর জীবন। এমনকি বাংলাদেশের হোটেল পূর্বাণীতেও রয়েছে তার কাজের অভিজ্ঞতা।

সাঈফ আলী খান: বনেদী পরিবারের সন্তান বলে কথা, পড়ালেখাটা করেছেন মনোযোগ দিয়ে। সানাওয়ারে লরেন্স স্কুল এর পর যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ারে লকার্স পার্ক স্কুল। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত পাবলিক স্কুল উইনচেস্টার কলেজও ছিল তার শিক্ষাজীবনে।

রণবীর কাপুর: কাপুর খানদানের সন্তান বলিউডে পা রাখাটা ছিল সময়ের ব্যাপার। তাই কোবোমতে চালিয়ে গেছেন শিক্ষাজীবন। মুম্বাই স্কটিশ স্কুল দিয়ে শুরু। গ্রাজুয়েশন করেছেন মুম্বাই এইচ আর কলেজ থেকে। নিউইয়র্কের লি স্ট্রাসবার্গ থিয়েটার এন্ড ফিল্ম ইনস্টিটিউটে অ্যাক্টিং মেথডে কোর্সও সম্পন্ন করেছেন।

জন আব্রাহাম: পড়াশুনায় বেশ ছিলেন। প্রথমে মুম্বাই স্কটিশ স্কুল। পরে জয়হিন্দ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন। ভালো নম্বর পেয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক হন৷ এরপর নার্সি মনজি ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি পান৷ নায়ক হওয়ার আগে তিনি প্রফেশন্যাল মিডিয়া প্ল্যানারও ছিলেন৷

এমরান হাশমী: এমরান ছিলেন সাদামাটা ছাত্র। সিডেনহাম কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন। মুম্বাই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে তা শেষ করতে পারেননি।

ফারহান আখতার: অলরাউন্ডার ফারহানের পড়াশুনাটাও আহামরি নয়। মুম্বইয়ের মানেকজি কাপুর স্কুল থেকে পড়াশোনা শুরু। এইচ আর কলেজ থেকে কমার্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন৷ তবে আহামরি কিছু নয়।

ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন: পড়াশুনায় খারাপ ছিলেন না মোটেও। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন মাতুঙ্গার রুপারেল কলেজ থেকে। উচ্চমাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষায় গড় নাম্বার পেয়েছেন ৯০! জয়হিন্দ কলেজে পড়েছেন এক বছর। কপাল যে তার অভিনেত্রী হবে। তাই গড়ে ৯০ পাওয়া প্রাপ্তিটাকে তুচ্ছ করে সেদিকে ছুটলেন। কলেজে পড়াকালীন সময়ে টিভি কমার্শিয়ালে কাজ শুরু করেন। মডেলিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়াশুনাটা খুব বেশি করা সম্ভব হয়নি। রাহেজা কলেজে স্থাপত্য পড়ার জন্যও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেই যে পড়াশুনা আচ্ছন্নে গেল। আর ফিরে এলো না।

কারিনা কাপুর: দেরাদুনের ওয়েলহাম গার্লস স্কুলে থাকাকালীন সময়ে নাকি তুখোড় ছাত্রী ছিলেন। সব বিষয়ে ভালো রেজাল্ট করতো নিয়মিত। কিন্তু বংশ পরিক্রমে কপাল যে তার বলিউড। ভালো ছাত্রী বলেই পরিচিতি ছিল। ফার্ষ্ট ক্লাস পেয়েছেন সব কোর্সেই। মুম্বাইয়ের মিথিবাই কলেজে দুই বছর বাণিজ্য বিষয়ে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড ইউনিভার্সিটিতে তিন মাসের মাইক্রোকম্পিউটার বিষয়ে গ্রীস্মকালীন কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। এছাড়া মুম্বাইয়ের আইন কলেজেও পড়েছেন এক বছর। কিন্তু পড়াশুনায় থিতু হওয়া যে তার লক্ষ্য নয়। বলিউডে চলন শুরু করে দিলেন।

প্রীতি জিনতা: অভিনয়ের সঙ্গে মেধাটাও জরুরি। পড়াশুনায় নিয়মিত ছিলেন। শিমলার সেন্ট বেদ’স কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। তারপর মনোবিজ্ঞান বিষয়েও গ্রাজুয়েশন। আর মাষ্টার্স করেছেন অপরাধ মনোবিজ্ঞানে।

দিপীকা পাডুকোন: কলেজের গন্ডি পেরুনো সম্ভব হয়নি। সোপিয়া হাইস্কুল থেকে মাউন্ট কার্মেল কলেজ। কিন্তু শোবিজের ব্যস্ততার তাড়নায় একটা সময়ে পড়াশোনাটা ছেড়েই দিতে হলো। ইন্ধিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটিতে সমাজবিজ্ঞানের ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য ভর্তি হলেও শেষ করতে পারেননি। তবে হাইস্কুল লেভেল থেকেই জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলতেন।

প্রিয়াংকা চোপড়া: ইচ্ছে ছিল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা অপরাধ মনোবিজ্ঞানী হবেন। কিন্তু মিস ওয়ার্ল্ড জেতায় সে স্বপ্ন আর থাকল না। লক্ষৌর লা মার্টিনিয়ের গার্লস স্কুলে পড়েছেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রে নিউটন নর্থ হাইস্কুল। জন এফ কেনেডি হাই স্কুলে।ভারতে ফিরে উত্তর প্রদেশের ব্যরিলির আর্মি স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন। এরপর জয়হিন্দ কলেজ।

সোনম কাপুর: তাঁর বিদ্যাটা সরলরেখায় চলেছে। কখনো কোথাও ছেদ পড়তে দেয়নি। আরিয়া বিদ্যা মন্দির স্কুল। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজ অব সাউথ এশিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষা কোর্সে পড়েছেন কিছুদিন। মুম্বাই ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে অনার্স করেছেন। সিঙ্গাপুরে দুই বছর থিয়েটার এবং আর্টস বিষয় নিয়েও পড়েছেন।

ক্যাটরিনা কাইফ: পড়াশুনায় কখনো স্থির হতে পারেননি। সে দোষটা তাঁকে দেওয়া ঠিক হবে না। বাবা ভারতীয়, মা ইংরেজ। জন্ম হংকংয়ে। অল্প বয়সে বাবা মায়ের বিচ্ছেদ। মা এনজিওতে কাজ করতেন। মায়ের সাথে চীন, জাপান, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, পোলান্ড, জার্মানী, বেলজিয়াম, হাওয়াইতে ঘুরেছেন। পড়াশোনাটাও তাই সেভাবে হয়েছে। বলিউডে পা ফেলার আগে লন্ডনে কিছুদিন ছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন স্থাপত্য পড়তে। কিন্তু বিধি যে বলিউডে স্থির করে রেখেছে।

কাজল: বড় হয়েছেন নানীর কাছে। বাবা মায়ের বিচ্ছেদটা যে খুব ছোটবেলাতেই হয়ে গেল। পঞ্চগনির সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে পড়েছিলেন। কিন্তু একটা সময়ে আর সম্ভব হয়নি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। তবে জানা যায় তিনি মেধাবী ছিলেন। বই পড়ার অভ্যাস তার এখনো রয়েছে।

বিদ্যা বালান: বিদ্যার বিদ্যা বেশ। সেন্ট জেভিয়ার কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন সমাজবিজ্ঞানে। আর ইউনিভার্সিটি অব মুম্বাই থেকে সম্পন্ন করেছেন মাষ্টার্স ডিগ্রি।

সোহা আলী খান: নবাব পরিবারের মেয়ের পড়াশুনাটা রীতিমতো চোখ ধাঁধানো। দিল্লির ব্রিটিশ স্কুল থেকে বিদ্যালয়ের পাঠ নেন৷ এরপর চলে যান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়৷ ভূগোল নিয়ে পড়েন৷ এছাড়া লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকেও একটা ডিগ্রি আছে তাঁর৷

সোনাক্ষী সিনহা: তার জ্ঞান ফ্যাশনে। এসএনডিটি ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেছেন এই দাবাং কন্যা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/নীল