আকাশ-পাতাল ফারাক রিল আর রিয়েল লাইফের। ফলে সিলভার স্ক্রিনের ওপারের দৃশ্যগুলো অধরাই থেকেই যায় দর্শকদের কাছে। সেখানে অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে যা ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যায় না। সম্পর্কের টানাপড়েন, কাজের চাপ থেকে শুরু করে নানা রকম সমস্যা, যা শুধু ব্যাকগ্রাউন্ডেই ঘটে চলেছে। ফলে মানসিক অবসাদ, আত্মহত্যার মতো ঘটনা বার বার দেখেছে বলিউড। এই তালিকায় নতুন সংযোজন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। এমনই কিছু অভিনেতার মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্য রইল এই গ্যালারিতে।
সুশান্ত সিংহ রাজপুত: ১৪ জুন মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান এটি আত্মহত্যা। ২০০৯-এ ‘পবিত্র রিস্তা’ সিরিয়ালে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় শুরু। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টেলিভিশন থেকে বলিউডে পা রেখেছিলেন ‘কাই পো চে’-র মাধ্যমে। বাণিজ্যিক ভাবে সে ছবি সফল। পছন্দ হয়েছিল ফিল্ম ক্রিটিকদেরও। এর পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বায়োপিক ‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ সুপার হিট। বলিউডে প্রতিষ্ঠা পেল সুশান্তের কেরিয়ার। তার পর একে একে ‘রাবতা’, ‘কেদারনাথ’, ‘পিকে’, ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’, ‘ছিঁচোড়ে’র মতো মুভিতে অভিনয় করেছেন। সুশান্তের মৃত্যুতে বলিউডে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শ্রীদেবী: ২০১৮-এর ২৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান শ্রীদেবী। দুবাইয়ের এক সাততারা হোটেলের বাথটব থেকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে লেখা ছিল, জলে ডুবে মৃত্যু। কিন্তু বাথটবের জলে কেউ কী ভাবে মারা যেতে পারেন, তা আজও অস্পষ্ট। বলিউডে কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল, আত্মহত্যা। খুনের অভিযোগও উঠেছিল। কিন্তু কপূর পরিবার জোর গলায় বলেছিলেন, এ সবই কুৎসা।
দিব্যা ভারতী: বলিউডে খুব বেশিদিন কাজ করার সুযোগ হয়নি তার। এক বছরে তার এক ডজন ছবির রেকর্ড আজও ভাঙতে পারেনি কেউ। দিব্যার মৃত্যু হয় মাত্র ১৯ বছর বয়সে। ১৯৯৩ সালের ৭ এপ্রিল নিজের ভারসোভার ফ্ল্যাট থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তার। কী হয়েছিল তার মৃত্যুর রাতে? দিব্যা বিয়ে করেছিলেন বিখ্যাত প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াওয়ালাকে। ওই দিন তাঁদের ফ্ল্যাটে ফ্যাশন ডিজাইনার নীতা লুল্লা-সহ আরও বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব এসেছিলেন। চলছিল রাত-পার্টি। এমন সময়ে বাড়ির ব্যালকনি থেকে পড়ে মারা যান তিনি। পরিবার থেকে বলা হয়েছিল, টাল সামলাতে না পেরেই পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে শোনা গিয়েছিল দুর্ঘটনা নয়। পরিকল্পিত খুন। সাজিদ জড়িয়ে রয়েছেন এর পিছনে। কিন্তু প্রমাণ মেলেনি। তাই কিছু বছর পর দিব্যার মৃত্যুর তদন্তও পুলিশ বন্ধ করে দেয়।
পারভিন ববি: ১৯৮০-র দশকে বলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী পারভিন ববির শেষ জীবন কেটেছে বড়ই কষ্টে। অত্যধিক সুরাসক্তি, সম্পর্কে ভাঙন তাঁকে ব্যক্তিগত জীবনে সুখী হতে দেয়নি। এক সময় পুরুষ হৃদয়ে তুফান তোলা পরভিনের মৃত্যুদিন যে কবে, তা জানেন না কেউ। ফ্ল্যাটের দরজার সামনে খবরের কাগজ আর দুধের প্যাকেট জমছিল দিনের পর দিন। প্রতিবেশীরাই পুলিশে খবর দেন। ফ্ল্যাটের দরজা ভাঙা হয়। উদ্ধার করা হয় মৃত পারভিনকে।
সিল্ক স্মিতা: আইটেম গার্ল থেকে অভিনেত্রী হয়ে উঠতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল এই অভিনেত্রীকে। কিন্তু মুম্বাইয়ের নিজের আবাসনে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি। কেন করেছিলেন আত্মহত্যা? হতাশা, বিচ্ছেদের যন্ত্রণা নাকি অন্য কিছু, জানা যায়নি আজও।
গুরু দত্ত: মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার মৃত্যু আজও রহস্যাবৃত। মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করার কারণে নাকি মৃত্যু হয়েছিল \’কাগজ কে ফুল\’ খ্যাত এই অভিনেতা-পরিচালকের। তার ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, মৃত্যুর আগের দিনও বেশ হাসিখুশি ছিলেন গুরু। আত্মহত্যা, নাকি ভুলবশত ওভারডোজ? আজও জানা যায়নি।
জিয়া খান: জুহুর ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি। অভিযোগ উঠেছিল তার সেই সময়ের বয়ফ্রেন্ড সূরজ পাঞ্চোলির বিরুদ্ধে। জিয়া যখন আত্মহত্যা করেন, তখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। জিয়ার মা দাবি করেছিলেন, পরিস্থিতির চাপে পড়ে জিয়া বাধ্য হয়েছিলেন এমন একটা চরম সিদ্ধান্ত নিতে। জিয়ার ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল সুইসাইড নোট।
অর্চনা পাণ্ডে: ২০১৪-র ২৯ সেপ্টেম্বর মুম্বাইের ভারসোভাতে নিজের ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় মডেল অর্চনা পাণ্ডের। তার ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়। তাতে বয়ফ্রেন্ড ওমর পাঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন অর্চনা।
নাফিসা জোসেফ: ২০০৪-এর ২৯ জুলাই ‘বিউটি কুইন’ও ভিজে নাফিসার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় মুম্বাইয়ে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে। ব্যবসায়ী গৌতম খান্ডুজার সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার কথা পাকাপাকি হয়েও ভেস্তে যায়। এর পরই অবসাদে চলে যান নাফিসা এবং আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
কুলজিৎ রণধাওয়া: প্রাক্তন গ্ল্যাডর্যা গস এই মডেলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ২০০৬-এর ৮ সেপ্টেম্বর। জুহুতে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দেহ উদ্ধার হয়। হিপ হিপ হুররে, কোহিনূর-এর মতো জনপ্রিয় শো-এ ছিলেন তিনি। সুইসাইড নোটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে মানসিক চাপের কথা উল্লেখ করেছিলেন কুলজিৎ।
বিবেকা বাবাজি: ভারতের অন্যতম সেরা মডেল বিবেকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তার ঘর থেকে পাওয়া একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল— আই কিল। সন্দেহ করা হয়, বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে মনোমালিন্যই তার এই পথ বেছে নেওয়ার কারণ।
কুনাল সিংহ: ‘দিল হি দিল ম্যায়’ ছবির অভিনেতা। ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। যদিও অভিনেতার বাবার দাবি, কুনালকে খুন করা হয়েছে।
মনমোহন দেশাই: অমর আকবর অ্যান্টনি, কুলি, ধরমবীর-এর মতো সুপারহিট হিন্দি ছবির পরিচালক মনমোহন দেশাই বাড়ির ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। তার ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, ফিল্মি কেরিয়ারে অসাফল্যের জন্যই আত্মহত্যা করেছেন পরিচালক। আবার এই তথ্যও উঠে এসেছে যে, পিঠের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছেন তিনি। কিন্তু তার আত্মহত্যার আসল কারণ আজও রহস্যাবৃত।