ক্লাস ওয়ান থেকে ইন্টারমেডিয়েট পর্যন্ত কখনো দ্বিতীয় হননি। ২০০৭ সালে এসএসসি ও ২০০৯ সালে এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় পেয়েছেন গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ।
ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে বেসরকারি ইউনিভার্সিটির পড়াশোনাতেও ছিলেন অত্যন্ত মেধাবি। অনার্সে আউট অব ফোরে পেয়েছেন সিজিপিএ ৩.৯৫।
যার কথা বলা হচ্ছে তিনি হলেন \’মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ\’র প্রথম রানার আপ ফাতেমা তুজ জাহারা। তাকে পরিবারের সবাই মিতু বলেই ডাকেন।
জীবনে প্রায় সব কিছুতে প্রথম স্থান থাকলেও \’মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ\’ প্রতিযোগিতায় অবস্থান তার দ্বিতীয়। তাই কিঞ্চিৎ দুঃখবোধ থাকলেও খুব বেশি আফসোস নেই। কারণ জাহারা মনে করেন সামনে তার অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। যার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন তিনি।
জাহারা বিশ্বাস করেন সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুধু বাহ্যিক অবয়ব বা সৌন্দর্য দিয়ে নয়। এর মধ্যদিয়ে ভাষা, সংস্কৃতি, আচরণ ও ঐতিহ্য প্রকাশ পায়। তাই তিনি আগামী দিনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা বা ইভেন্টে অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে প্রস্তুত।
এরই মধ্যে টেলিফিল্ম, নাটক, ছবি ও বিজ্ঞাপনে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছেন। তবে যত্রতত্র কাজ করতে আগ্রহী নন তিনি। অবশ্য \’মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ\’ আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দু\’বছরের চুক্তি রয়েছে। চুক্তির শর্ত মেনেই দেখেশুনে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন খুব শিগগিরই।
ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিল প্রেজেন্টার হওয়ার। আরো বেশি ইচ্ছে ছিল ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়ার। সে ইচ্ছে এবং আবেগটা এতোই প্রবল ছিল যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ\’র ভর্তি বাতিল করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়াশোনা করেন এই সুন্দরী।
ফাতেমা তুজ জাহারা মিতু বলেন, \’বাংলাদেশের বিউটি ও ফ্যাশন নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের কাজ করতে চাই। সেই লক্ষ্যে শুধুমাত্র ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়ার জন্য ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে ঢাবিতে বিবিএ\’র হোটেল ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে তিন দিন ক্লাসের পর ভর্তি বাতিল করি। পরে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউইএফ) ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ভর্তি হয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করি।
তবে ঢাবির আইবিএ\’তে ভর্তির লক্ষ্যে এক সময় তিনি দিনে ২০ ঘণ্টার বেশি সময় পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু সেখানে সুযোগ হয়নি তার।
সামরিক কর্মকর্তার বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্প্রীতিও বেশ ভালোই গড়ে উঠেছে তার। চট্টগ্রামে কমার্স কলেজে ইন্টার পড়ার সময় সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবীর কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। খুলনায় রোটারি স্কুলে থাকা অবস্থায় সামাজিক কর্যক্রম শুরু হয় তার। চার বোন এক ভাইয়ের মধ্যে জাহারা সবার বড়। বাবা রাহমান রাসেল নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মা ফরিদা রাহমান গৃহিণী। পরিবারের সঙ্গে বর্তমানে বসবাস ঢাকায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি পোশাক কোম্পানির প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইন বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করেন এই ফার্স্ট রানার আপ। মিডিয়াতে পুরোদমে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে সম্প্রতি তিনি তা ছেড়ে দিয়েছেন।
প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন এই তরুণী। ২০১২ সালে ফাতেমা তুজ জাহারা বিজিএমইএ ইয়োলো ফ্যাশন ফেস্ট বিজয়ী হন। আর গত এপ্রিলে \’সুপার মডেল বাংলাদেশ-২০১৭\’ বিজয়ী হন পরিবারের দুষ্ট-মিষ্টি মেয়ে হিসেবে পরিচিত মিতু। পরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত \’সুপার মডেল ইন্টারন্যাশনাল-২০১৭\’ বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন এই বিউটি গার্ল।
এসব অনবদ্য পারফরম্যান্সের কারণে ভারতীয় সুন্দরী প্রতিযোগিতা \’মিস ইন্ডিয়া এলিট\’ এর বিচারক হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছেন ঝটপটে কথা বলায় পটু জাহারা। সে জন্য আগামী নভেম্বর মাসে ভারতে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
জাহারার মুখে হাসি লেগেই থাকে। \’মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ\’ পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে গত ৪ অক্টোবর রাজধানী হোটেল ওয়েস্টিনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বেশির ভাগ সময় তাকে হাসিমাখা মুখে দেখা যায়।
এতো হাসির রহস্য কী, এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিতে আরো কুটকাট হয়ে জাহারা বলেন, \’হাসিতেই সৌন্দর্য, সেই সৌন্দর্য দিয়েই ভক্তদের ভালোবাসা পেতে চাই।\’ তথ্যসূত্রঃ সমকাল
বাংলাদেশ সময় : ১৩৫০ ঘণ্টা, ০৮ অক্টোবর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ