দেশে ফেরার মতো মানসিকতা আমার আর নেই। কারণ একদিকে সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারলাম না। অন্যদিকে সম্প্রতি সালমানের অপমৃত্যুর সঙ্গে অনাকাক্সিক্ষত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে। তাই দেশে ফিরে আর কী করব। আমার ছেলে আইজানকে এখানে একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। তা ছাড়া এদেশে বেশকিছু ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত আছি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেশে আর ফিরব না।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর বলেছেন, ‘আমি আর কখনই দেশে ফিরব না।’ চিত্রনায়ক সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শাবনূরের সংশ্লিষ্টতার খবরের রেশ না কাটতেই আবার খবরের শিরোনাম হলেন ঢাকাই ছবির এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। এবার স্বামী অনিককে তালাক দেওয়ার খবরের শিরোনাম হলেন তিনি। গত ২৬ জানুয়ারি নিজের সই করা তালাকের একটি নোটিস উকিলের মাধ্যমে স্বামী অনিককে পাঠিয়েছেন শাবনূর। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত শাবনূরের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হয় কেন তালাকের সিদ্ধান্ত নিলেন? জবাবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেখুন, মানুষ সংসার কেন করে, একটু শান্তির জন্য, তাই না।
কিন্তু বিধিবাম, দাম্পত্য জীবনে সেই সুখের দেখা আমি পাইনি। গত প্রায় ৭ বছর চেষ্টা করেছি অনিকের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে চলতে। সে যেভাবে বলত আমি সেভাবেই জীবনযাপন করেছি। বিনিময়ে পেয়েছি অবহেলা আর অত্যাচার। এভাবে আর কত সহ্য করা যায়। তাই নিরুপায় হয়ে ডিভোর্সের পথ বেছে নিয়েছি। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি অবহেলা- অত্যাচারের কথা বলছেন, বিষয়টি পরিষ্কার করে বলবেন? তিনি জানান, দেখুন, আমরা কিন্তু ভালোবেসেই পারিবারিকভাবেই বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের পর প্রথম কিছুদিন আমার সঙ্গে সে বেশ ভালো ব্যবহারই করে আসছিল। আমরা ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিয়ে করি।
২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমাদের ঘর আলো করে একটি পুত্রসন্তান আসে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ওব্যান হাসপাতালে সন্তানের জন্ম হয়। আমি সে দেশেরও নাগরিক। সন্তান জন্মের সময় অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও অনিক অস্ট্রেলিয়া যায়নি। ব্যবসার অজুহাতে সে দেশে থেকে যায়। এমনকি এরপরও সন্তানকে একবারের জন্য হলেও দেখতে সেখানে যায়নি অনিক। স্বামী আর বাবা হিসেবে এটি কি তার দায়িত্ব ছিল না। এরপর আমি দেশে এলে আমার বা বাচ্চার প্রতি তার কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করিনি। ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে আমাদের রীতিমতো এড়িয়ে চলত সে। তারপরও আমি তাকে নিয়ে সংসার করার যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। কিন্তু একপর্যায়ে সে মদ্যপ অবস্থ্য়া যখন বাসায় এসে আমাকে মারধর করা শুরু করল তখন আমি রীতিমতো মানসিকভাবে ভেঙে পড়লাম। ধরে নিলাম এভাবে আর তার সঙ্গে সংসার করা যায় না।
এবার তার কাছে প্রশ্ন এর আগেও কিন্তু মিডিয়ায় আপনাদের সংসার ভাঙার খবর প্রচার হয়েছিল, কিন্তু আপনারা তা অস্বীকার করেছিলেন? তিনি অনেকটা হতাশার সুরে বলেন, হ্যাঁ, অস্বীকার করেছিলাম কারণ আমি কয়েকবার তাকে তালাক দিতে চাইলেও বাচ্চার কথা চিন্তা করে এবং আমার পরিবারের অনুরোধে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলাম।
এবার তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনার স্বামী অনিকের পরিবার কি এ ব্যাপারে আপনাকে সহযোগিতা করেনি? তার জবাব ছিল, তার পরিবার অবশ্য প্রথমদিকে আমার পাশে থাকলেও পরে আমার প্রতি বলতে গেলে অবহেলাই করত। প্রথমদিকে দুই পরিবার মিলেই আমাদের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসত। পরে তার পরিবারের মধ্যে এ নিয়ে আর কোনো আগ্রহ দেখিনি। তারা তাদের ছেলেকে এ ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টাও করেনি। তাই সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় এবার তালাকের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম আমি।
অনিকের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ কি আপনার আছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু আর বলতে চাই না। শুধু এতটুকুই বলব আমাদের মধ্যে বনিবনার যথেষ্ট অভাব ছিল। যা গত ৭ বছরে আমি পূরণ করতে পারিনি।
অনিক কিন্তু বিবাহিত ছিল, বিয়ের আগে বিষয়টি আপনি জানতেন? এর জবাবে শাবনূরের কথা হলো- না, আমি যখন তার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে গেলাম তখন সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমি জানতাম না। পরে যখন জেনেছি এবং সে আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিল তখন আগের স্ত্রীকে সে তালাক দেয়।
শাবনূরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম অনিকের সঙ্গে আপনার পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠেছিল? এর জবাবে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আমি বজলুর রাশেদ পরিচালিত ‘বধূ তুমি কার’ শিরোনামের একটি ছবিতে অভিনয় করি। ওই ছবিতে আমার সহ-শিল্পী ছিলেন অনিক মাহমুদ হৃদয়। ছবির নায়ক সাদমান চরিত্রে অভিনয় করে সে। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমরা পরস্পরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। তবে অনিক আমাকে প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। যেহেতু তাকেও আমার ভালো লাগত তাই তার ভালোবাসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারিনি। এভাবেই আসলে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যা পরবর্তীতে বিয়ে এবং সন্তান পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু দুঃখ, সেই ভালোবাসার মর্যাদা রক্ষা করতে পারল না অনিক।
তালাকের বিষয়ে তার কাছে প্রশ্ন ছিল- আপনি তো সবেমাত্র তালাকের নোটিস পাঠিয়েছেন, তা কার্যকর হতে আইনগতভাবে ৯০ দিন সময় থাকে। এ সময়ের মধ্যে চাইলে আবার সমঝোতা করা যায়, আপনার পক্ষ থেকে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা আছে কী? দৃঢ়তার সঙ্গে শাবনূরের উত্তর এক কথায় মোটেও না, কারণ গত প্রায় ৭ বছর সব কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করে একসঙ্গে পথ চলার প্রাণপণ চেষ্টা করেছি, কিন্তু তার পক্ষ থেকে শুধু অসহযোগিতাই পেয়ে এসেছি। এটিই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এখন বাচ্চাটাকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই হচ্ছে আমার প্রধান লক্ষ্য। সেই হলো আমার একাকী জীবনের একমাত্র অবলম্বন।
এবার তার কাছে জানতে চাইলাম, দেশে ফিরছেন কখন? আবেগতাড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বিশ্বাস করুন, দেশে ফেরার মতো মানসিকতা আমার আর নেই। কারণ একদিকে সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারলাম না। অন্যদিকে সম্প্রতি সালমানের অপমৃত্যুর সঙ্গে অনাকাক্সিক্ষত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে। তাই দেশে ফিরে আর কি করব। আমার ছেলে আইজানকে এখানে একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। তা ছাড়া এদেশে বেশকিছু ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত আছি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেশে আর ফিরব না। এখন এখানে সন্তানকে নিয়ে একটু শান্তিতে থাকতে চাই। সবাই আমার ও আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন।