পপশিল্পী মিলা ও তার সাবেক স্বামী বৈমানিক পারভেজ সানজারি প্রসঙ্গ নিয়ে শোবিজ পাড়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এদিকে ফের সাবেক স্বামী পারভেজ সানজারির বিরেুদ্ধে অভিযোগ এনে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন মিলা। শনিবার প্রকাশিত স্ট্যাটাসে তিনি অভিযোগ করেন সানজারি
নিয়মিতভাবেই এয়ারলাইন্সের নারী স্টাফ, এমনকি বিমানবালাদের শয্যাসঙ্গিনী হতে বাধ্য করতো। ওদের সঙ্গে প্রেমের ভান করে শয্যাসঙ্গিনী করতো, যা এখনও থেমে যায়নি। এছাড়াও মিলা উল্লেখ করেন, পারভেজ সানজারি বিভিন্ন মাধ্যমে মিলাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
পাঠকদের জন্য মিলার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়া’র সন্মানিত সদস্যবৃন্দ, সঙ্গীতাঙ্গনের সদস্য, সঙ্গীতপ্রেমী বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু কথা…
একজন ব্যক্তি যখন নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে ভেবে সীমাহীন বেপরোয়া হয়ে ওঠে, যখন তাকেই অনৈতিকভাবে আশকারা দিতে থাকে কিছু মহল, তখন নিশ্চয়ই বিবেকবান যে কেউ প্রতিবাদী হবেই। প্রতিটি সমাজেই একটি নির্দিষ্ট নিয়মনীতি আছে। আধুনিকতা মানুষকে শুধু অগ্রসারয়মান হতেই শেখায় না, আধুনিকতা মানুষকে শিষ্টাচারী হতেও সাহায্য করে। ইংরেজিতে ‘ফ্যামিলি ভেল্যুজ’ বলে একটা শব্দ আছে, যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় পারিবারিক মূল্যবোধ। আমাদের সমাজে পারিবারিক মূল্যবোধ বিরাজমান বলেই আমরা একটি নির্দিষ্ট প্রথার ভেতর বসবাস করি। আর একারণেই সমাজ অজস্র মন্দ বিষয় থেকে মুক্ত থাকে।
প্রতিটি বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে একে-অপরের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া একান্তই আবশ্যিক। এটা না থাকলে পারিবারিক মূল্যবোধ ভেঙে পড়বে-ধ্বংস হয়ে যাবে সমাজ। আর এর ফলে আক্রান্ত হবে গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা। বিয়ে মানেই হচ্ছে একটি এমন অঙ্গীকার যা আজীবন স্বামী-স্ত্রী রক্ষা করেন যে কোনো কিছুর বিনিময়ে। আমাদের মতো পুরুষ শাসিত সমাজে স্বমী-স্ত্রী’র মাঝে দাম্পত্য বোঝাপড়া এবং সুখ বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুরুষ বা স্বামীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কোনো কারণে যদি ওই স্বামীই হয়ে ওঠে দূরাচারী, সে যদি নিজের স্ত্রীর মর্যাদাকে তুচ্ছজ্ঞান করে ক্রমাগতভাবে প্রিয়তমা স্ত্রীকেই প্রবঞ্চিত করতে থাকে-যদি স্ত্রীর অজ্ঞাতে জড়াতে থাকে একের পর এক পরকীয়ায়, তাহলে ওই দম্পতির বিশেষ করে স্ত্রী’র মানসিক অবস্থাটা কেমন হয়, সেটা আপনারা সবাই জানেন এবং বোঝেন। আমাদের এই দেশে প্রতিনিয়ত স্বামীদের এ ধরনের অন্যায় আচরণের শিকার হচ্ছেন নারীরা। এসিডে ঝলসে দেয়া হচ্ছে প্রবঞ্চিতা স্ত্রীদের- নারীদের। সভ্যতার এই সময়ে এসে এমন জঘন্য পরিস্থিতির কষ্ট শুধু ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।
আপনারা জানেন, আমি এসএম পারভেজ সানজারি ওরফে লেলিনকে ২০১৭ সালে বিয়ে করি। কিন্তু আমি হতবাক হয়ে লক্ষ্য করি, সানজারি বিয়ের পর থেকেই কেমন যেন অচেনা আচরণ করতে থাকে। সে প্রায়ই বিভিন্ন লোকের সাথে লুকিয়ে-লুকিয়ে ফোনে কথা বলতো। আমি জানতে চাইলে সে শুধু মারমুখীই হতো না বরং নিয়মিতভাবেই আমার ওপর চালাতো অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
সানজারি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার পর, ইউএস বাংলা এয়ার নামীয় একটি বেসরকারি বিমান সংস্থায় পাইলট হিসেবে কর্মরত আছে। এই সুযোগে সে নিয়মিতভাবেই এয়ারলাইন্সের নারী স্টাফ, এমনকি বিমানবালাদের শয্যাসঙ্গিনী হতে বাধ্য করতো কিংবা ওদের সাথে প্রেমের ভান করে শয্যাসঙ্গিনী করতো, যা এখনও থেমে যায়নি। সানজারির নষ্ট লালসা থেকে ইউএস বাংলা’র কোনো নারী সদস্যই রেহাই পাননি। আমার কাছেই এ ধরনের অজস্র প্রমাণ আছে, যা প্রবঞ্চিত-প্রতারিতরাই বিভিন্ন সময়ে পাঠিয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়। সানজারি মিডিয়ার অনেক অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পীদেরও মিথ্যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নষ্ট করেছে এবং এখনও করছে। আবার এমন কিছু বিতর্কিত অভিনেত্রীও আছে, যারা টাকা কিংবা অন্য কিছুর লোভে ইচ্ছে করেই সানজারি’র সাথে সম্পর্ক গড়েছে-দৈহিক মেলামেশাও করেছে এবং এখনও করছে। আমি জানি না, ওইসব অভিনেত্রীদের স্বামীরা ঠিক কোন পর্যায়ের নির্লজ্জ- নাকি ওনারা অসহায় সেটাও জানি না। তা না হলে নিজের স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ার কথা এমনকি ওই পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার ঘটনা জানার পরও ওরা কেন নিশ্চুপ আছেন আমি বুঝি না। কখন-কখনো আমার এমনটাও সন্দেহ হয়, ওইসব স্বামী নামধারী কুলাঙ্গারগুলো হয়তো ওদের অভিনেত্রী স্ত্রীদের বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবেই ব্যবহার করছেন। হয়তো আমার অনুমান ভুল নয়।
সানজারির সব অপকর্ম, এমনকি দেশের নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরূপ নানা কার্যকলাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সে আমার সম্পর্কে নানা বানোয়াট কথাবার্তা বলে মিডিয়াকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। সে বলে বেড়াচ্ছে, আমি নাকি তাকে তার বাবা-মাকে ত্যাগ করার শর্ত দিয়েছি। কি জঘন্য মিথ্যাচার! আমার কাছে প্রমাণ আছে সানজারির মায়ের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো এবং তিনি বহুবার আমায় বলেছেন, ওনার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো পর্যায়ে গেলে একজন তার নিজের সন্তান সম্পর্কে এমন কথা বলতে বাধ্য হন সেটা বিবেচনার ভার আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি।
সানজারি আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে ক্রমাগত কুৎসা রটাচ্ছে এবং আমার পরিবারের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যা দেশের প্রচলিত আইনেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমি বিশ্বাস করি, দেশের বিবেকসম্পন্ন সাংবাদিক বন্ধুরা এসব মিথ্যাচারে কান দেবেন না।
এসএম পারভেজ সানজারি ওরফে লেলিন-এর অর্থ লিপ্সা সম্পর্কে আমি আগেই বলেছি। তার বাধহীন নৈতিক চরিত্র সম্পর্কেও অনেক কথাই আগে বলেছি, যদিও আমার কাছে বলার মতো আরো অজস্র প্রমাণ আছে।
আমার নিজের জীবনের ওপর হুমকি আছে। সানজারি নিজেই মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে আমায় হুঁশিয়ার করেছে, সে তার নিজের অস্ত্র দিয়ে যখন-তখন আমায় হত্যা করবে। এ কথাটা সে আমার সাবেক সেনা অফিসার বাবাকেও জানাতে দ্বিধা করেনি।
এতো কিছুর পরও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অন্যায় হুমকির কাছে মাথা নত করবো না। যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যে আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। পাশাপাশি আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আবারও সঙ্গীতের প্রতি মনোযোগী হবো। খুব শিগগিরই আপনারা আপনাদের প্রিয় মিলা’র নতুন গান শুনবেন। আমার পথচলায় আমি ঠিক যেভাবে আপনাদের সহযোগিতা এবং ভালোবাসা পেয়েছি তা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। আমার ও আমার পরিবারের জন্যে দোয়া করবেন।’