অভিনেত্রী বাঁধন ও ব্যবসায়ী মাশরুর সিদ্দিকী সনেটের সংসার ভেঙ্গেছে ২০১৪ সালে। এতদিন বিষয়টি আড়ালে থাকলেও বর্তমানে তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সংসার ভাঙ্গা নিয়ে বাঁধন ও সনেট গণমাধ্যমে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া একমাত্র কন্যাকে নিজের কাছে রাখার অধিকার চেয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করেছেন বাঁধন।
ডির্ভোস নিয়ে একান্ত সাক্ষাতকারে বাঁধান তুলে ধরেন বিগত সময় সংসার জীবনে ঘটে যাওয়া নানা বিষয়।
বাঁধন বলেন, আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিল ওই মানুষটিকে বিশ্বাস করা। সে বিয়ের সময় একজন শিল্পপতি পরিচয় দিয়ে আমার সাথে বিয়ে করেন। আমার বিয়ের সময় ওকিল বাবা ছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। ওনার উপস্থিতিতে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন হয়। পরে ৫ লাখ টাকা মাশরুর উসুল করে নেয়। সংসার জীবন শুরু হবার পর থেকে নানা বিষয়ে আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতো। আমি একজন সংসার লোভী মেয়ে। আমার চিন্তা সব সময় সংসারের দিকে। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই আমার সাথে বনিবনা হতো না। তবুও আমি সংসারে মন দিয়েছি।
বাঁধন বলেন, আমার বাচ্চা যখন ৭ মাসের গর্ভে তখন থেকে আমি বাবার বাসায় থাকতে শুরু করি। এবং সেই আমার কাছে এসে থাকতো। আমার মেয়ের যখন জন্ম হয় তখন আমার একটা নতুন স্বপ্ন তৈরি হয়। আমি মেয়ের জন্মের পর থেকে আর স্বামীর সংসার থেকে দুরে সরে যাওয়ার কথা ভাবিনি। মেয়ের আগামীদিনের কথা চিন্তা করে আমি সব কিছু মেনে নিয়ে সংসার করতে থাকি। মেয়ে বড় হতে থাকে। আমি মেয়েকে তার বাবা থেকে দুরে রাখিনি। এক সময় আমি যখন তার থেকে আলাদা থাকতে শুরু করলাম। তখনও সে আমার বাবার বাসায় (রাজধানীর মিরপুর) আসতো এবং মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতো। আমিও বাধা দেয়নি। আমার মেয়ে যখন বুঝতে শিখলো আমি তখন থেকেই বুঝতে দেয়নি যে তার বাবার সাথে আমার দুরত্ব। এই ভাবে চলতে থাকে আমাদের সংসার জীবন।
আমার বাবার বাসায় এসে দীর্ঘদিন থেকেছে মাশরুর। এমন একদিন আমার বাবার বাসায় রাতে নেশা করে এসে গেট ভেঙে দারোয়ানকে মেরে আমার বাবা-ভায়ের সাথে মারামারি করে। এবং এক ভাড়াটিয়াকে মেরে হাত ভেঙে দেয়।এক পর্যায় বাসা থেকে বের হয়ে আমার নামে চাদাবাজি মামলা করে। যা আমার সম্মানের বড় ক্ষতি হয়েছে। সে আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে জানার পরও আমি তার সাথে সব কিছু মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার মধ্যে যদি এতটুকু মনুষত্য থাকতো তাহলে কি তিনি এমন ব্যবহার করতো। তবুও আমার কোন অভিযোগ ছিল না তার প্রতি। আমি নরম ব্যবহার করে সংসার টিকিয়ে রাখতে চেয়েছি। আমি ভেবেছি যে আমি যেহেতু ডির্ভোস পেপারে সাক্ষর করিনি সেহেতু আমি তাকে স্বামী হিসেবেই মানি।
বাঁধন বলেন, আমার নামে মামলা করার পর আর আমার আর বাচ্চার সাথে কোন যোগযোগ রাখে না। আমি তখন ২০১৫ সালে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করালাম। মেয়ে সব সময় তার বাবাকে মিস করার কথা বলে। আমি আমার বাচ্চার বাবা হিসেবে তাকে সব সময় রাখতে চেয়েছি। কিন্তু সে কোন ধরণের যোগাযোগ রাখে না।
আমি হয়তো চাইলে একটা বিয়ে করতে পারি। তাতে করে আমার স্বামীর অভাব মিটবে। কিন্তু আমার মেয়ে তো আরেকটা বাবা পাবে না। তার বাবা খারাপ হলেও ওই লোকটাই। আমার মেয়ের বাবা খারাপ লোক এটা প্রকাশ হলে মেয়েটা সমাজে চলতে পারবে না। এইসব ভেবে আমি চুপ থেকেছি। ভেবেছি হয়তো একদিন সব মিটে যাবে। ও আবার ফিরে আসবে। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আপোস করতে চেয়েছি বারবার। কিন্তু উল্টো সে কানাডার এক ভদ্র মহিলাকে বিয়ে করে ফেলেছে। আমি যদি চাইতাম, তবে ওকে ডিভোর্স দেয়ার পর আরেকটা বিয়ে করে সংসারি হতাম। মেয়েকে নিয়ে একা একা সংগ্রাম করতাম না।
বাঁধন ও তার মেয়ের মালয়েশিয়া ভ্রমণের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হয় সেই ভ্রমণে তাদের সঙ্গে বাঁধনের স্বামীও ছিলেন। এরপর গুঞ্জন ওঠে, ফের জোড়া লাগছে এ অভিনেত্রীর দাম্পত্য জীবন। সেই সময় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়।
তবে এ বিষয়ে খোলামেলা বলেন এ অভিনেত্রী। তিনি বলেন, আমি সব সময় চেয়েছি যেন আমাদের দুরত্ব না হয়। সেই সূত্রে আমি মেয়ের কথা ভেবে তার সাথে মালয়েশিয়া যায়। ফিরে আসার পর আমি জানতে পারি সে আরেকটা বিয়ে করেছে। এ নিয়ে তার তৃতীয় বিয়ে। এমনকি তার প্রথম পক্ষের একটা সন্তানও রয়েছে। যা আমার অজানা ছিল। সে আমার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আবার বিয়ে করেছে। অথচ বিচ্ছেদের পরও সে মেয়ের দোহাই দিয়ে আমাকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় ঘুরতে গেছে। আমার সঙ্গে একই রুমে থেকেছে। বলেছে, সম্পর্কটা আবার শুরু করবে। কিন্তু সে নতুন করে অন্য একটা ভদ্র মেয়েকে বিয়ে করেছে। সে আসলে আগা গোড়াই একটা ঠকবাজ। আমার আগেও সে বিয়ে করেছে। বিভিন্ন নারীদের সঙ্গেও তার অনেক কাহিনী আমি জেনেছি বিয়ের পর।
কিন্তু আমি তো শোবিজে কাজ করি, কেউ বলতে পারবে এই কথা কোনো প্রেম, সম্পর্ক বা স্ক্যান্ডাল রয়েছে আমার। কোনো হিরো বা পরিচালকের সঙ্গে আমার কোনো অনৈতিক সম্পর্কের কথা কেউ বলতে পারবে? এই মিডিয়াতে কিছুই গোপন থাকে না। সম্মান জানিয়ে সাংবাদিকরা হয়তো অনেক সময় লেখেন না, কিন্তু জানেন সবকিছু। কেউ কী বলতে পারবেন যে অমুকের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ কোনো সম্পর্ক আছে? আমি সবার সঙ্গেই কাজের প্রয়োজনে মিশি। কেউ কেউ আছেন পরামর্শক, ভাই-বন্ধু। সবসময় আমি মন দিয়ে কাজটাই করে যেতে চেয়েছি। অথচ সে আমাকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়েছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই আমাকে ছোট করে কথা বলছে।
এই অভিনেত্রী জানালেন, একমাত্র সন্তানকে নিজের কাছে রাখার অধিকার চেয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করেছি। গত ৩ আগস্ট এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেখানে বাদী হয়েছি আমি নিজেই। আমি সবার কাছে দোয়া চাই। মেয়েকে নিয়ে লড়াই করে যেন সফল হতে পারি।
উপরোক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে থেকে যোগাযোগ করা হয় মাশরুর সিদ্দিকী সনেটের সাথে,। তিনি বলেন, আমি এসব নিয়ে মিডিয়াতে কথা বলিনি কোন দিন। আর সে (বাঁধন) কি বললো আর কি করলো তাতে আমার মাথা বেথা নাই। আর সব পত্রিকা বাঁধনের পক্ষে খবর প্রকাশ করছে। সবাই জানে বাঁধন আমার ২য় স্ত্রী। আর সে আমার কেউ না। আর আমি ডিভোর্স দিয়ে আরেক যায়গাতে বিয়ে করেছি। আর আমি কোথায় কি করবো সেটা বাঁধনকে জানাতে হবে কেন। আর আমি বাঁধনের স্বামী হিসেবে কোনদিনই পরিচয় দেয়নি। আমার প্রথম বিয়েটা টিকেটি। বাঁধন ছিল আমার ২য় স্ত্রী। আর আমি অনেক কিছুর কারণে আমি তাকে ডিভোর্স করেছি। সে জানার সব কিছু জানার পর কেন আমার সাথে মিশেছে। আমি তো বলতে যায়নি বেড়াতে যাবো। সে আমাকে বলতো বেড়াতে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস