মাত্র ৭ দিনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করেছি: সংসদে নসরুল হামিদ

মাত্র ৭ দিনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করেছি: সংসদে নসরুল হামিদ
জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ - পুরোনো ছবি

আগামীতে দেশে মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে বলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রত্যেকটি দেশ। এতে যেমন দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, তেমনি জ্বালানির মূল্যও বেড়েছে। স্বাভাবিক জীবযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া জনমানব প্রচণ্ডভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যেভাবে অর্থনীতিকে আমরা সচল রেখেছি, এরপরও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিরিবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ রেখেছি তার জন্য সব ধন্যবাদ দেব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি বলেন, তিনটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এগোচ্ছে- একটি হলো রিলায়েবিলিটি (বাস্তবসম্মত), দ্বিতীয়টা পসিবিলিটি (সম্ভাবনা) এবং পরেরটা ইন্টারেপ্টেড বিদ্যুৎ উৎপাদন। সেটা কীভাবে পাওয়া যেতে পারে। এর জন্য অর্থ সংস্থান বড় নয়, টেকনোলজি একটি বড় ভূমিকা পালন করবে।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) তিনি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ সব কথা বলেন। এসময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

নসরুল হামিদ বলেন, মাত্র সাতদিন আগে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় আমরা কিছুটা হলেও সমস্যা দেখেছি, আমার ধারনা ছিল ১৫-২০ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে একটা নিরবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আনতে পারবো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শীতায় আমরা বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে মাত্র সাতদিনের মাথায় একটা নিরবচ্ছিন্ন ব্যবস্থায় আনতে সক্ষম হয়েছি। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কিছুটা সমস্যায় কারণে আমি দুঃখ প্রকাশ করেছিলাম সে সময়। কিন্তু এমপিরা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলে তাদেরকে ধন্যবাদ।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে বিরোধী দলের সদস্যদের বলতে চাই, আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ যে একটি উন্নত সম্মৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বে মাথা উচু করে দাড়াতে যাচ্ছে তার কালক্ষেপণ লাগবে না। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ খাত বিশেষ করে ডিজিটাল ক্ষেত্রে ২০২২ সালে ডিজিটাল পুরষ্কার লাভ করেছে। শুধু তাই না বাংলাদেশের সর্বোচ্চ খেতাব স্বাধীনতা পুরস্কার শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের জন্য আমরা লাভ করতে পেরেছি।

নসরুল হামিদ বলেন, কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরবর্তিতে বিশ্বের প্রতিটি দেশ তাদের জ্বালানি কীভাবে হবে তার জন্য প্রকল্প নিচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো দেখি তারা রাশিয়ার গ্যাস থেকে সরে এসে মডার্ন গ্যাসের দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ডিকার্বনাইজেশনের দিকে বাংলাদেশে যাচ্ছে। কিভাবে আমরা কার্বন নিঃসরণের দিকে যেতে পারি। আমাদের কার্বন নিঃসরণ মাত্র ১ শতাংশের নিচে। আমেরিকা ১৭ শতাংশের মতো। তার পরেও প্রধানমন্ত্রী ডিকার্বনেশনের জন্য ফান্ড তৈরি করেছেন , যাতে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে পারি। আমরা বিশ্বে সোলার প্লান্টের জন্য চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। আমরা ১০ শতাংশ জ্বালানি নবায়ন যোগ্য জ্বালানির থেকে করতে চাই, ইতিমধ্যে আমরা নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার একটা পরিকল্পণা নিয়েছি, চুক্তির জন্য সব প্রস্তুত, ওখান থেকে আমরা ৭০০ মেগাওয়ার্ড হাইড্রোবিদ্যুৎ আনবো। এটা আনতে ৫-৮ বছরের জন্য সময় লাগে। হাইড্রাপাওয়ারের যে ফুয়েল খরচ তা ২০ বছর একই থাকবে। যদি ডিজেল, তেলের থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করতে চাই তাতে দামের তারতম্য হয়। সে জন্য নেপালের সঙ্গে আমরা আরো বেশী হাইড্রো পাওয়ার পাওয়া যায় তার জন্য ফ্রেম ওয়ার্ক করেছি। তিন দেশ মিলে আমরা একটা উইং সিচুয়েশনে গিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করবো। ভুটান থেকেও আমরা বিদ্যুৎ আনার চেষ্টা করছি। এসব আনার কারণ জনগণের জন্য কত সহজে বিদ্যুৎ দিতে পারি। নসরুল হামিদ বলেন, আমরা জানতাম না রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য সারা বিশ্বে একটা টালটামাল অবস্থা হবে। তারপরেও প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শিতায় আমরা সব পরিস্থিতি মুকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বের সব নেতৃত্বের মধ্যে তিনি উদাহরণ হয়ে আছেন। সারা বিশ্বে এখন ভাবছে বিদ্যুৎ কি হাইড্রো হবে নাকি তেল গ্যাস থেকে আসবে? তবে আমাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছি মিক্সড হিসেবে। কিছুটা কয়লা, কিছুটা গ্যাসে, কিছুটা তেলের মাধ্যমে।

তিনি আরো বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে বাজেট কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এর জন্য ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের এই ক্রান্তিকালে একটি বড় বাজেট পেশ করেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজ দেশের গ্রামে গঞ্জে উন্নয়ন ঘটেছে, রাস্তাঘাটের প্রভৃতি উন্নতি হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ আজ শেখ হাসিনাকে আবারো ভোট দিয়ে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি বলেন, এবারের বাজেট একটা স্মার্ট বাজেট, আমাদের অর্থনীতিও স্মার্ট। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যেসব প্রকল্প নেয়া হয় সেগুলো যদি সময়মত শেষ করে সে আহ্বাণ জানিয়ে বলেন, তাহলে এর সুফল যেমন পেতে পারি তেমনি ব্যয়ও কম হয়, বাজেট সাশ্রয় হয়। আর প্রকল্পগুলো সময়মত শেষ না হলে ব্যয় বাড়ে বাজেটের ওপর চাপ পড়ে। এসময় শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন তিনি। চা শ্রমিকদের জন্য নূণ্যতম ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দেবার জন্য শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।

দীপংকর তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, রাঙামাটিসহ সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে রাস্তাঘাট ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় উন্নতি হয়েছে। আগের চেয়ে এখানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে, যা বাড়ানো দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে সাধারণ আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন এমপি আব্দুস সালাম মূর্শেদী, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, ওমর ফারুক চৌধুরী, নূরুন্নবী চৌধুরী, এনামুল হক, আনোয়ারুল আবেদীন খান, মো. সাহিদুজ্জামান, জাফর আলম, এইচএম ইব্রাহীম ও গোলাম কিবরিয়া টিপু।