জনবল সংকটে স্থবির দেশের একমাত্র মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড। দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। ব্যাহত হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষার প্রস্তুতিও। পদ ফাঁকা রেখে ঢাকা অফিসে নিয়োগপ্রাপ্তদের পাঠানো হয়েছে আঞ্চলিক অফিসে।
স্থায়ী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে শূন্যপদে বসানোর নির্দেশনাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে পদত্যাগপত্র জমা দিলেও এখনও অফিস করছেন চেয়ারম্যান।
গোপালগঞ্জের একটি মাদ্রাসার প্রধান কয়েক বছর ধরে নাম সংশোধনের কাজে শিক্ষাবোর্ডে ধরনা দিয়েও পাচ্ছেন না সমাধান। এবার এসে দেখেন নেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও।
প্রধান বলেন, নাম সংশোধনের জন্য গেলে রিভিউ করতে বলে। কিন্তু রিভিউ করলে শুনানি এখনও হয়নি। ফলে চার বছর ধরে ঘুরছি।
তার মতো অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক নম্বর ও সনদ সত্যায়ন, পরিচালনা কমিটি অনুমোদন, স্বীকৃতি নবায়নের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় এসেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আটকে রয়েছে অনেকের বিদেশযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১১টি শাখার সাতটিতেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অর্থাৎ রেজিস্ট্রার, প্রকাশনা নিয়ন্ত্রক, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ, দুজন উপ-রেজিস্ট্রার, উপ-মাদ্রাসা পরিদর্শক ও উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নেই। ফলে ব্যাহত হচ্ছে আসন্ন দাখিল পরীক্ষার প্রস্তুতি।
এছাড়া বোর্ডের ১৯২টি পদের ৬৮টিতে নেই লোকবল। অফিস সময়ের বাইরে কাজ করেও সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। আদালত বোর্ডের প্রবিধানমালা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পদায়নের নির্দেশনা দিলেও সেটিও বাস্তবায়ন করেনি বোর্ড।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সেকশন অফিসার নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমি সারা দেশের কমিটির কাজ করি। কিন্তু আগে যেমন সেবা দিতে পারতাম, লোকবল সংকটে এখন তা পারছি না।
আরেক সেকশন অফিসার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, খাতা সেন্টারে পাঠানো, পরীক্ষার কেন্দ্র প্রস্তুত করা-এসব কাজগুলোর গতিশীল আনতে পারছি না। আমাদের খাতা ছাপাতে পারছি না।
বোর্ডের পরিদর্শক মোহাম্মদ নাছিমুল ইসলাম বলেন, আমাদের সাতটি পদ শূন্য অবস্থায় রয়েছে। ফলে কাজের চাপ প্রচণ্ড বেড়ে গেছে।
বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় রাজশাহীর সহকারী পরিদর্শক ড. মো. জাহিদুল হক সিদ্দিকী বলেন, বোর্ডের কর্মকর্তা ২২ বছর ধরে বঞ্চিত। এর মধ্যে পিএইচডি হোল্ডার কর্মকর্তারাও রয়েছেন। কিন্তু তাদের পদোন্নতি হচ্ছে না। এছাড়া ঢাকায় বোর্ডে নিয়োগ পাওয়া অনেককে পদ ফাঁকা রেখে পাঠানো হয়েছে আঞ্চলিক অফিসে।
আঞ্চলিক কার্যালয় সিলেটের সহকারী পরিদর্শক মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আদালত বোর্ডের প্রবিধানমালা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পদায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও কর্তৃপক্ষ আমাদের সহায়তা করছে না।
মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহ মুহাম্মদ আলমগীর বলন, রায়ের কপি হাতে পেলে যোগ্য ও বঞ্চিতদের পদোন্নতি দেয়া হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের নতুন সচিব নিয়োগ হয়েছে। এখন মাদ্রাসা বোর্ডের শূন্য পদ পূরণ করা যাবে।