রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও অনিশ্চয়তায় সময় কাটছে বিদেশে পড়তে যেতে চাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের। স্কলারশিপ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী বাইরে পড়ার সুযোগ হারাতে বসেছেন। বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসি) অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিসা কার্যক্রম স্থগিত রাখার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই বিপাকে পড়েছেন।
পর্তুগাল, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই। তাই এসব দেশে পড়তে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের নিকটবর্তী দেশ ভারতে ভিসা সাক্ষাৎকার দিতে হয়
প্রতি শিক্ষা বছরে তিন শতাধিক মেধাবী শিক্ষার্থী এসব দেশে পড়তে যান। বরাবরের মতো এ বছরও বহু শিক্ষার্থী মেধার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ভারতের ভিসা না থাকায় তাঁরা নির্দিষ্ট দেশের এম্বাসিতে সাক্ষাৎকার দিতে পারছেন না। তাই বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
টিউশন ফি জমা দেওয়ার পরও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আইভিএসির আকস্মিক বন্ধ ঘোষণার মাধ্যমে। সেপ্টেম্বরের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে এম্বাসি সাক্ষাৎকার দিতে না পারলে তাঁদের ভর্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে টিউশন ফি বাবদ জমা দেওয়া অর্থ ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। কারণ, এম্বাসি থেকে ভিসা না পাওয়ার কারণ উল্লিখিত পত্র জমা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি ফেরত না-ও দিতে পারে। পরবর্তী সময়ে ফেরত দিলেও বেশির ভাগ সময় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা কেটে রাখে।
জুলাইয়ে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন–পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা চলাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাংকও বন্ধ ছিল। তাই অনেকেই সে সময় তাঁদের টিউশন ফি জমা দেওয়ার জন্য প্রবাসীদের দ্বারস্থ হন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টিউশন ফি পরিশোধ করা না হলে তাঁদের ভর্তি বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকায় অনেক প্রবাসী শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধে সাহায্য করেন।
এ সময় বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসেন। যাঁর যাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করে তাঁরা কারও টিউশন ফি পরিশোধ করেন আবার কারও জন্য অনুরোধ করে সময় বাড়িয়ে নেন। কিন্তু টিউশন ফি জমা দেওয়ার পরও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আইভিএসির আকস্মিক বন্ধ ঘোষণার মাধ্যমে। সেপ্টেম্বরের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে এম্বাসি সাক্ষাৎকার দিতে না পারলে তাঁদের ভর্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে টিউশন ফি বাবদ জমা দেওয়া অর্থ ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। কারণ, এম্বাসি থেকে ভিসা না পাওয়ার কারণ উল্লিখিত পত্র জমা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি ফেরত না–ও দিতে পারে। পরবর্তী সময়ে ফেরত দিলেও বেশির ভাগ সময় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা কেটে রাখে।
গড়ে এক শ শিক্ষার্থী যদি চার লাখ টাকা টিউশন ফি দিয়ে থাকেন, তাহলে ইতিমধ্যে প্রতি এক শ শিক্ষার্থী প্রায় চার কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। তাঁদের অনেকেই নিম্ন বা মধ্য আয়ের পরিবার থেকে বাইরে পড়তে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ভারতীয় হাইকমিশনের এহেন ঘোষণায় লাখ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে বসেছেন এসব শিক্ষার্থী।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, ডেনমার্কসহ বাংলাদেশে নিযুক্ত বেশির ভাগ দূতাবাসই তাদের সাধারণ কার্যক্রম শুরু করেছে। গত সপ্তাহে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসি) তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে সাময়িক কার্যক্রম চালু হওয়ার ঘোষণা দিলেও তারা আপাতত কোনো ধরনের ভিসা ফরম জমা নিচ্ছে না, শুধু আগে জমা করা পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত ই–মেইল দিয়েও তাঁদের পক্ষ থেকে উত্তর পাচ্ছেন না বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। ট্যুরিস্ট ভিসা আপাতত বন্ধ রাখলেও শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট ডাবল এন্ট্রি ভিসা কার্যক্রম শিগগিরই খুলে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিদেশ গমন–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। তা না হলে বড় অঙ্কের ক্ষতি গুনতে হবে তাঁদের।
হয়তো ভারতীয় হাইকমিশন অচিরেই সব কার্যক্রম শুরু করবে। কিন্তু তাদের সামান্য গাফিলতিতে এই শিক্ষার্থীরা তাঁদের সম্ভাবনাময় সময় থেকে পিছিয়ে যাবে অনেকটা।
শুধু শিক্ষার্থীই নন, এসব দেশে কাজ করতে আসেন অনেকেই। তাঁদের মাধ্যমেই বাংলাদেশে হাজার হাজার টাকা রেমিট্যান্স যায়। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তাঁদের ভূমিকা নেহাত কম নয়। বর্তমানে অনেক দেশেই বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। এটি মোটেও সুখকর কোনো কিছু বয়ে আনবে না। কারণ, তাঁদের উপার্জিত অর্থই বাংলাদেশে ফরেন রেমিট্যান্সের উৎস। কোম্পানি থেকে কাজের সুযোগ আসার পরেও যদি তাঁরা না যেতে পারেন, তবে ওই দেশগুলোয় হয়তো কাজের সুযোগ কমে আসবে বাংলাদেশিদের জন্য।