বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজের মতো করে চলতে দিতে হবে

সরকারগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বাস করে না। নিজ স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। সরকারকে উদার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের মতো চলতে দিতে হবে। সব স্তরে দলীয় আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।

‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই? বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক এক আয়োজনে এসব কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আয়োজনে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী ধরনের সংস্কার হওয়া প্রয়োজন, সে প্রস্তাব তুলে ধরেন শিক্ষকেরা।

লিখিত প্রস্তাব পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা ও রুশাদ ফরিদী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পারভীন জলী, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌম্য সরকার, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষক অলিউর সান ও লাবনী আশরাফি।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটগুলো রাষ্ট্রব্যবস্থার সংকটের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তারা বলছে, এ জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থার সংকটগুলোর সমাধান হওয়া দরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। প্রস্তাবে তারা বলেছে, সব স্তরে দলীয় আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর ভেতরেই একাডেমিক ও প্রশাসনিক জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। প্রশাসনের পদে থাকা শিক্ষকদের সমিতির নির্বাচনে যাওয়া যাবে না।

এ ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে না রাখার প্রস্তাব করেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তারা বলেছে, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের তুলনায় বিভাগের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কেবল মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া থেকে সরে আসতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ব্যাংক কীভাবে টাকা-পয়সার লেনদেন করবে তা শেখানোর কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো ভিত্তি তৈরি করা, বোঝাশোনার ক্ষমতা, বিশ্লেষণের ক্ষমতা, উপলব্ধির ক্ষমতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করা। তারপর সেটাকে অবলম্বন করে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের কাজের মধ্যে যাবেন।

বড় দুর্বলতা গবেষণায়
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা গবেষণা ও উচ্চতর ডিগ্রি, যা বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারণ। তবে এ অবস্থার নিরসন সহজ নয়। পরিস্থিতি কিছুটা বদল ঘটতে পারে যদি একটি পূর্ণকালীন পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা যায়।

এ ছাড়া কোর্স পরিকল্পনায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে এবং গবেষণা–সংশ্লিষ্টতা বাড়িয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিকে বিশ্বের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঢেলে সাজানোর প্রস্তাবও দিয়েছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। পাশাপাশি গবেষণায় অনুদান প্রাপ্তিতে দলগত পরিচয়ের প্রাধান্য বন্ধ এবং সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি ধরার সফটওয়্যার রাখার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।

যেসব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার আগ্রহ কম, এমন বিভাগগুলোয় স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ভর্তি না করিয়ে কেবল স্নাতকোত্তর চালু রাখা যেতে পারে বলেও মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এমন হতে হবে, যেখানে কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হবেন না। থাকার জন্য হলে অন্তত একটি আসন পাবেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আজম বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা খারাপ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো সংস্কার করতে হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিউতি সবুর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌমিত জয়দ্বীপ।

Scroll to Top