সহকারী জজ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে করণীয়

সপ্তদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) সহকারী জজ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রার্থীদের শেষ সময়ের প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ষোড়শ বিজেএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী নুসরাত জেরিন

সপ্তদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) লিখিত পরীক্ষা আগামী ২০ জুলাই শুরু হবে। পরীক্ষা চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত।

লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় এক হাজার নম্বরের। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর কোনো কাজে না এলেও লিখিত পরীক্ষার নম্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর তুলতে পারলে চূড়ান্তভাবে ভালো ফলের আশা করা যায়।

সাধারণ অংশে ৪০০ নম্বর থাকে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) মিলিয়ে মোট চার দিনে চারটি পরীক্ষা হয়। এ অংশে অনেক শিক্ষার্থীর দুর্বলতা থাকে, যেহেতু অনার্সে থাকাকালীন আমরা দীর্ঘদিন এসব বিষয়ের পড়াশোনা থেকে দূরে থাকি। তাই শেষ সময়ে প্রতিদিন আইন অংশের পাশাপাশি সাধারণ অংশের জন্য সময় রাখা উচিত।

বাংলা

বাংলায় ব্যাকরণ অংশে থাকে ৩০ নম্বর, সাহিত্যে ১০ নম্বর। এ অংশে অঙ্কের মতো নম্বর পাওয়া যায়। তাই এ অংশ বেশি বেশি পড়ে অনুশীলন করতে হবে। বাকি ৬০ নম্বরের জন্য সপ্তাহে অন্তত ২–৩ দিন রচনা, চিঠি, প্রতিবেদন, ভাবসম্প্রসারণ, অনুবাদ এসব বিষয় পড়তে হবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা বাছাই পয়েন্টগুলো রেডি করে ফেলতে পারেন।

ইংরেজি

ইংরেজি অংশে ব্যাকরণে থাকে ২৫ নম্বর, সাহিত্যে ৫ নম্বর। এ অংশের জন্য বিসিএসসহ বিগত বিজেএস পরীক্ষার লিখিত অংশের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে ভালো হয়। বাকি অংশের অনেকটা ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ে ভালো হলে আপনি এগিয়ে থাকবেন।

গণিত ও বিজ্ঞান

গণিতে ৫০ নম্বর ও বিজ্ঞানে ৫০ নম্বর বরাদ্দ। গণিত ও বিজ্ঞানের জন্য বিগত বছরে আসা প্রশ্নগুলো সমাধান করা বাধ্যতামূলক। এর পাশাপাশি গণিত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বোর্ড বই থেকে সমাধান করতে হবে এবং বিজ্ঞান অবশ্যই নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই পড়তে হবে। পরীক্ষার আগপর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন গণিত চর্চা করা উচিত।

সাধারণ জ্ঞান

সাধারণ জ্ঞানের জন্য বিসিএস লিখিত যেকোনো সিরিজের একটা বই পড়তে পারেন। সঙ্গে সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য প্রতিনিয়ত পত্রিকা পড়তে পারেন।

আইন

আইনের ছাত্র হিসেবে আইন অংশে আমাদের সবার কমবেশি পড়াশোনা এগিয়ে থাকেই বলে ধরে নেওয়া যায়। তারপরও যেসব বিষয়ে বেশি

নম্বর পাওয়ার সুযোগ থাকে, সেসব বিষয়ে বেশি ফোকাস করা উচিত। ৬০০ নম্বরের মধ্যে মোটামুটি গোছানো একটা প্রস্তুতি নিলে অনেক ভালো নম্বর আশা করা যায়।

সংবিধানে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব, যদি মূল সংবিধান খুব ভালোভাবে পড়া থাকে। আগের বছরের প্রশ্নগুলো পড়লে অনেকটা ধারণা পাওয়া যায়। পারিবারিক আইনে উত্তরাধিকার অংশে ক্যালকুলেশন সঠিক হলে বেশ ভালো নম্বর পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ঐচ্ছিক আইনের অংশে ভালো নম্বর আশা করা যায়। এর বাইরে অন্যান্য বিষয়ে নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলবেন। অন্তত ১৩তম বিজেএস থেকে ১৬তম বিজেএসের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে কিছুটা ধারণা পাবেন, কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। আইনের লিখিত অংশের জন্য মূল আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা বুঝে পড়ার বিকল্প নেই।

শেষ সময়ে করণীয়

আগামী কয়েক দিনের রুটিনে আইনের পাশাপাশি সাধারণ অংশের কিছু না কিছু অবশ্যই পড়বেন। এ সময়টা যদি কাজে লাগাতে পারেন, তবে ভাগ্য সহায় হলে সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন। একটানা ১০টি লিখিত পরীক্ষা দেওয়া খুব কঠিন কাজ। এ পরীক্ষা যেন ভবিষ্যতে আর দিতে না হয়, এবারই যেন নিজেকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেন, সেই চিন্তা মাথায় রেখে পড়াশোনা করে যান। নিজের যেসব বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো খুঁজে বের করে বেশি বেশি পড়তে ও লিখতে চেষ্টা করবেন।

পরীক্ষার মধ্যে শুধু একটা শুক্রবার ছুটি পাবেন। তাই পরীক্ষার আগের রাতে নতুন করে পড়ার আশায় কোনো পড়া জমিয়ে রাখবেন না। যা পড়ার তা দ্রুত শেষ করে ফেলে অন্তত ৭-১০ দিন সময় হাতে রাখবেন রিভিশনের জন্য।

পরীক্ষার আগে অনেক বিষয় পুরোপুরি রিভিশন শেষ করে যাওয়াও অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই এখন থেকেই অপ্রয়োজনীয় বইপত্র বা বিষয়গুলোকে আলাদা করে প্রয়োজনীয় সবকিছু নির্দিষ্ট করে গুছিয়ে রাখতে চেষ্টা করবেন। অপ্রয়োজনীয় কোনো কাজে শেষ সময়টুকু নষ্ট করা যাবে না। সময়কে যত বেশি কাজে লাগাবেন, তত বেশি এগিয়ে যাবেন। সবার জন্য শুভকামনা।

Scroll to Top