পিছিয়ে পড়া একটি পরিবারের মেয়ে সাদিয়া আক্তার। বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার তড়েয়া গ্রামে। পরিবারে নানা সমস্যা, তবু চালিয়ে যেতে চায় লেখাপড়া। তাই সাড়ে ছয় কিলোমিটার পথ কখনো হেঁটে, আবার কখনো কোনো যানে চড়ে পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যায় সে। এত ধকল সামলিয়ে পাঠে খুব একটা মন দিতে পারছিল না সাদিয়া।
তার মতো ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিছিয়ে পড়া পরিবারের ১০০ মেয়েশিক্ষার্থীর ভোগান্তি কমাতে তাদের হাতে বাইসাইকেল তুলে দেওয়া হয়েছে।
‘স্কুলে যেতে দূরত্ব যেন বাধা না হয়’ এই ভাবনা থেকে ‘স্বপ্ন সারথি’ কর্মসূচি থেকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এসব বাইসাইকেল বিতরণ করে। আজ বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাইসাইকেলগুলো বিতরণ করা হয়।
ঠাকুরগাঁও শহরের গোবিন্দনগরে ইকো–সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রধান কার্যালয়ের জয়নাল আবেদিন মিলনায়তনে আলোচনা সভা শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে বাইসাইকেল তুলে দেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর রেইস উদ্দীন আহমেদ ও অন্য অতিথিরা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ঠাকুরগাঁও শাখার ব্যবস্থাপক তাইমুর হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় রেইস উদ্দীন আহমেদ ছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সিইও সামিয়া চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিআরডির পরিচালক আবু সাঈদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ ছাড়া ইকো–সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) নির্বাহী পরিচালক মুহম্মদ শহীদ উজ জামান ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে বক্তব্য দেন।
বাইসাইকেল পেয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ি এলাকার শিক্ষার্থী পাবিকা রায় বলে, কত কষ্ট করে স্কুলে যাই। স্কুলে যেতে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। স্কুলে যেতে এখন আর কষ্ট হবে না।
পঞ্চগড়ের বোদা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিনতি আক্তার বলে, ‘যাঁরা আমার স্বপ্নপূরণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
বোদা উপজেলার আরেক শিক্ষার্থী নন্দিনী রানী বলে, সাইকেলে স্কুলে যাতায়াত করে যে সময়টুকু বেঁচে যাবে, তা পড়াশোনায় ব্যয় করতে পারব।
রেইস উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক দেশের অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ব্যাংকের পরিচালকেরা বিশ্বাস করেন, আমাদের যে লভ্যাংশ, এর একটি অংশ জনস্বার্থে ব্যয় করা উচিত। সেই ভাবনা থেকে আমরা মেয়েদের হাতে বাইসাইকেলগুলো তুলে দিচ্ছি, যাতে তাদের স্কুলে যেতে সুবিধা হয়। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক শুধু বাইসাইকেল বিতরণ করছে এমন নয়, আমরা কিন্তু দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তিও দিয়ে থাকি।’