ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে সব ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম বর্জন করে ক্যাম্পাসে অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রোববার সকাল ১০ থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত বিভাগের বারান্দায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিভাগের ১৩তম, ১৪তম, ১৫তম, ১৬তম ও ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।
দুপুর ২ টায় তারা অপরাজেয় বাংলার সামনে মানববন্ধনের করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‹শিক্ষা নিপীড়ন একসাথে চলে না›, ‹জিরো ফিট দূরত্ব নাদিরের চরিত্র›, দড়ি ধরে মারো টান, নাদির হবে খান খান› ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানান। এগুলো হলো- ১. প্রফেসর নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। ২. যৌন নিপীড়ককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৩. তদন্ত চলাকালে বা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিরত রাখতে হবে।
পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে নম্বর কম দেওয়া নিয়ে স্নাতকোত্তরের একটি ব্যাচের বেশ কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী।
শনিবার দুপুরে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর মো. মাকসুদুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ওই শিক্ষার্থী। অভিযোগের সঙ্গে কিছু অডিও রেকর্ড ও মেসেজের স্ক্রিনশটও জমা দিয়েছেন তিনি।
তবে প্রফেসর নাদির জুনাইদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এর পেছনে অন্য কিছু দেখছেন। বিভাগের পরবর্তী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার আগে ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।
বিভাগের শিক্ষার্থী অদনান তূর্য বলেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সকল ধরনের যৌন সহিংসতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আজ থেকে সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি।
আজরা হুমায়রা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সাংবাদিকতা বিভাগকে আমরা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সুরক্ষিত একটি বিভাগ হিসেবে নিশ্চিত করতে চাই। বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মানা যায় না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরব না।
নাদির জুনাইদের নিপীড়নের বিষয়টা ডিপার্টমেন্টে ওপেন সিক্রেটের মতো ছিল। তিনি প্রত্যেকটা ব্যাচ থেকে কয়েকজন করে নারী শিক্ষার্থীকে টার্গেট করেন। এরপর তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে এবং হ্যারেজ করে। আমরা এই নোংরা খেলা থেকে মুক্তি চাই।
এদিকে রোববার দুপুরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ গ্রহণ করে ভিসি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, অভিযোগ পত্র পেয়েছি, সাথে একটি পেনড্রাইভও পেয়েছি। এধরনের অভিযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় সে অনুসারেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।