‘ফার্স্ট বয়’ সেই ছেলেটি জীবনের প্রথম বিসিএসেই চতুর্থ

মো. বরকত উল্লাহ। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের এ ছাত্রটি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব সময় ছিলেন মেধাক্রমে প্রথম। পরে তিনি ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসিতে। এবার জীবনের প্রথম বিসিএসেই প্রশাসন ক্যাডারে হয়েছেন চতুর্থ তিনি। ৩৬ তম বিসিএসই ছিল তার জীবনের প্রথম কোন চাকরির পরীক্ষা।

ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেই যখন বরকতের বন্ধুরা মোটা অংকের চাকরি করছে তখন তিনি বিসিএস এর প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিভাগের রেজাল্টও তার ভালো। সিজিপি ৩.৫৭ নিয়ে আছেন অষ্টম পজিশনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই একাডেমিক পড়াশোনা করেছেন নিয়মিত। পাশাপাশি প্রতিদিন বাংলা ও ইরেজি পত্রিকা পড়তেন মনযোগ দিয়ে। সমসাময়িক বিষয়গুলো জানতেন বিস্তারিত। মাঝে মাঝে পড়তেন গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পাতা। তৃতীয় বর্ষেই কাটিয়ে উঠেন ইংরেজির দুর্বলতাগুলো। আইইএলটিএস, জিআরইসহ অন্যান্য ইংরেজি পরীক্ষার শব্দার্থ ও কৌশলগুলো আয়ত্ব করে ফেলেন।

এরপর স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষে উঠে চিন্তাভাবনা শুরু করেন কোন দিকে ক্যারিয়ার গড়বেন। তখন বড় ভাই এবাদত হোসেনের পরামর্শে বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করেন। ততক্ষণে স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা চলে আসে সামনে। নিয়মিত ল্যাব ক্লাশ আর প্রজেক্টের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষ করেই বিসিএসের পড়াশোনা ভালো করে শুরু করে দেন। চূড়ান্ত বর্ষের প্রজেক্টের কাজ থেকে পরে একটি সার্ভে রিচার্স আর্টিকেলও প্রকাশিত হয় তার।

এরপর ৩৬তম বিসিএসে প্রিলিতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। পরীক্ষা দিয়েই ধরে নেন প্রিলিতে পাশ করবেন। তাই প্রিলির পরপরই শুরু করেন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি। টানা কয়েক মাস পরিশ্রম করেন। এরপর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

লিখিত পরীক্ষায় বেশি লেখার চেয়ে সময় ঠিক রেখে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ায় মনযোগ দেন বেশি। এভাবে প্রতিটি লিখিত পরীক্ষায় সম্পূর্ণ উত্তর দিয়ে আসতেন। লিখিতের রেজাল্ট দেয়ার পর ভাইভার প্রস্ততি নেন। ভাইভা নিয়ে বেশ নার্ভাস ছিলেন। কারণ ভাইভার জন্য সময় বেশি পাননি রেজি নং আগে হওয়ায়। তাছাড়া ৩৭ এর লিখিত পরীক্ষা ছিল। প্রস্তুতির জন্য একটি মডেল ভাইভাতেও অংশগ্রহণ করেন। নিজের জড়তা দূর করেন। ভাইভার দিন বেশি পড়াশোনা না করে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করেন।

বরকত উল্লাহ ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব সময় ছিলেন মেধাক্রমে প্রথম। গ্রামের আঠারদানা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি ও গফরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ২০১০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। দুটোতেই পান জিপিএ ফাইভ। এরপর মেডিকেলে পরীক্ষা দেন। সেখানে উত্তীর্ণ না হলে এরপর জাবিতে ডি ইউনিটে ১৮তম হয়ে ফার্মেসিতে ভর্তি হন। এছাড়া ঢাবির এ ও ডি ইউনিট এবং জাবির এ ইউনিটেও চান্স পেয়েছিলেন। কিন্তু ভর্তি হন জাবির ফার্মেসিতে।

বরকত উল্লাহর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার ধোপাঘাট গ্রামে। বাবা মো. আব্দুল মান্নান ও মাতা রোমেনা খাতুনের আট ছেলে মেয়ের মধ্যে সপ্তম তিনি। বাবা দোকান দিলেও সন্তানদের পড়াশোনার প্রতি ছিলেন যত্নবান। মামা এনামুল হক বুলির দিক নির্দেশনায় তাদের সকল ভাইয়ের পড়াশোনা এগিয়ে যায়। চার ভাইয়ের মধ্যে বরকত উল্লাহ ছিলেন সবার ছোট। তাই তার প্রতি সবার প্রত্যাশাও ছিল বেশি। সাবার প্রত্যাশা পূরণ করে বরকত আজ প্রশাসন ক্যাডারে চান্স পেয়েছেন। বরকতের এখন ইচ্ছা একজন ভালো প্রশাসক হয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করা। তথ্য উৎসঃ ক্যাম্পাসলাইভ২৪।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, ০৫  নভেম্বর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস পি