ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ই ডিসেম্বর। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গতকাল ২৯ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। তবে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়ায় কোনো মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন,‘ভিন্নমতের লালন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার পাদপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হয়। কিন্তু হল প্রশাসন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্রই একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত হয়েছে। ব্যক্তিগত আক্রোশে অনেক নিরীহ শিক্ষার্থীকে নিপীড়ন নির্যাতন করে হলছাড়া করা হয়েছে। এমনকি পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক নিয়োগে অনেক ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাকে উপেক্ষা করে দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ভিন্নমত এবং আদর্শের শিক্ষকদের যথাসময়ে পদোন্নতি না দেয়াসহ তাদের নানাভাবে হয়রানির কথাও সকলের জানা। বলেন, বিগত সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী প্রশাসন সমর্থক শিক্ষক সমিতি তাদের নৈতিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি। ফলে শিক্ষক সমিতি দেশের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বর্তমানে শিক্ষক সমিতি সরকারের আজ্ঞাবহে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করেন সাদা দলের শিক্ষক নেতারা। সাদা দলের যুগ্ম-আহবায়ক অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, গত দেড় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তাদের ভূমিকা, ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে পারেনি। দেশের যে বিরাজমান পরিস্থিতি এই বাস্তবতায় আমরা মনে করি, যেই শিক্ষক সমিতি অগণতান্ত্রিক শক্তিকে সহযোগিতা করে, আমরা নিজেদের বিবেক থেকে স্বচ্ছ থাকতে এই নির্বাচন বর্জন করছি।
ঢাবি শিক্ষক সমিতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষক নেতারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক মানোন্নয়নসহ শিক্ষকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং অভিভাবক হিসেবে সকল শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার পক্ষে ভূমিকা রাখে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান ও গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষা, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, সুশাসন এবং মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারেও শিক্ষক সমিতি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনে শিক্ষক সমিতির গঠনতান্ত্রিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী শিক্ষক সমিতি তার এ দায়িত্ব কী যথাযথভাবে পালন করেছে, প্রশ্ন তোলেন তারা।