মুদ্রাস্ফীতি ও সবকিছুর ঊর্ধ্বমুখী দামের অজুহাতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজের আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস ও বিডিএস বাড়ানো হয়েছে ভর্তি ফি। এবারের ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের গুনতে হবে প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ টাকা, যা আগের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।
এ তথ্য জানান হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-২-এর উপসচিব মাহবুবা বিলকিস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়িক মানসিকতার কারণে ফি বাড়ানো হয়েছে। এতে করে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন হবে বাধাগ্রস্ত। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে গত ৯ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি ফি বাড়ানোর বিষয়ে বৈঠক হয়। এতে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা করা হয়, যা বর্তমান ফির চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ মার্চে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এতদিন এ ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। সে অনুযায়ী ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থীদের তিন লাখ ২৪ হাজার টাকা বেশি গুনতে হবে।
তবে ইন্টার্নশিপ ফি এক লাখ ৮০ হাজার এবং টিউশন ফি ১০ হাজার টাকা করে চার বছরে চার লাখ ৮০ হাজার টাকা আগের শিক্ষাবর্ষের মতো বহাল রাখা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সভার আলোচনা এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন-২০২২-এর ২২ ধারা অনুসারে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক ফি অনুমোদিত হবে।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা অনেক বেশি। এসব কলেজের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ফলে তারা যা ইচ্ছা ফি নিচ্ছে। ব্যবসায়িক মানসিকতা নিয়ে কলেজ গড়ে উঠছে, আর কোনো ধরনের নিয়মনীতি ছাড়াই ফি নির্ধারণ করছে। এতে করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত অভিভাবকদের সন্তানকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ সবাই তো সরকারিতে সুযোগ পাবে না।’
তিনি বলেন, বেসরকারিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের থেকে যে মুনাফা হয় তাতেও অনেকাংশে চাহিদা পূরণ হওয়ার কথা। খরচ বাড়ায় বেসরকারিতে পড়া অধিকাংশই হবে ধনী শ্রেণির সন্তান। কর্মজীবনে যারা প্রান্তিক অঞ্চলে সেবা দেওয়ার মানসিকতা রাখবে না। এ জন্য সরকারের একটি নীতিমালা থাকা উচিত। সরকারিতে খরচের খাত দেখে সে অনুযায়ী বেসরকারির ফি সরকারেরই নির্ধারণ করা উচিত বলেও জানান তিনি।
ভর্তি ফি বাড়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরাও। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী মো. শাহেদ মেডিকেল পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুতির জন্য রাজধানীর একটি কোচিং সেন্টারে ক্লাস করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মেডিকেলে যারা পড়তে চায় তাদের আশা থাকে সরকারিতে পড়ার। তবে কোনোভাবে চান্স না হলে বেসরকারিতে পড়তে হবে। এমনিতেই বেসরকারিতে খরচ বেশি, তা আরও বাড়লে অবস্থা খুবই খারাপ হবে। কারণ এত টাকা দিয়ে ভর্তি করার অবস্থা পরিবারের নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. মুজতাহিদ মুহাম্মদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতিসহ সবকিছুর দাম বাড়ানোর কারণ দেখিয়ে বেসরকারি মেডিকেল মালিকরা এ বছর ২২ লাখ টাকা ভর্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা সেটি নাকচ করেছি। শেষ পর্যন্ত ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা করা হয়েছে।’
অভিভাবকদের জন্য বোঝা হবে কিনাÑ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটি তো অবশ্যই হবে। তারা অনেক বাড়ানোর কথা বলেছিল, সবকিছু চিন্তা করে এটা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘দেশে বর্তমানে মানসম্মত বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা কম। সরকার সেদিকে নজর দিলে ভালো হতো। কিন্তু যাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয় তারা উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরা মনে করি, আদালত যদি এসব বিষয় বিবেচনায় নেন তাহলে চিকিৎসক তৈরি হওয়া নিয়ে বর্তমানে যে সংকট রয়েছে, তার কিছুটা সমাধান হবে।’