র্যাগিং শব্দটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট দের সাথে বিশেষভাবে জড়িত। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটা পাবলিক ভার্সিটিতে এবং মেডিকেলে র্যাগিং এর প্রচলন রয়েছে। এছাড়াও কিছু প্রাইভেট ভার্সিটিতেও রেগ দেখা যায়। র্যাগিং সম্পর্কে অনেকেরই খারাপ ধারনা থাকে। আবার কেউ কেউ বিষয়টাকে পজিটিভ ভাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে অনেক শিক্ষার্থীকেই র্যাগিং নামক অপসংস্কৃতির শিকার হতে হয়। আজকাল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় র্যাগিংয়ের নামে ছাত্র-ছাত্রী নির্যাতন চরম আকার ধারণ করেছে। গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটে অহরহ। তথাকথিত ছাত্র নেতা ও নেত্রীদের হাতেও নির্যাতন আর যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা।
উল্লেখ্য কিছুদিন আগে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গেস্ট রুমে র্যাগিংয়ের নামে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ভিকটিম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার সহযোগীরা র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করেছে ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে।
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং-র্যাগিং প্রতিরোধসংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব অমানবিক আচরণ বন্ধে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ নীতিমালার খসড়া অধিকতর যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এ নীতিমালার আওতায় থাকবে। ছাত্রছাত্রীদের ব্যঙ্গ করে নাম ধরে ডাকা, বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি, উত্ত্যক্ত করা, শিস দেওয়া, এমনকি মানসিক চাপ প্রয়োগ করাও বুলিং-র্যাগিংয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে। গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, ছাত্রছাত্রীদের জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ অশালীন মন্তব্য করলেও এ নীতিমালা কার্যকর হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের হাতেই নির্যাতন বা র্যাগিংয়ের বেশি অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থী র্যাগিং করলেই তাকে এ নীতিমালা অনুযায়ী সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা যাবে। এসবের সঙ্গে শিক্ষকরা জড়িত থাকলে তাদের বেতনও বন্ধ হয়ে যাবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলাও করা যাবে। এমন অপরাধ করে পার পাবেন না বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গভর্নিং বডির সদস্যরাও।
নীতিমালার খসড়ায় দেখা গেছে, এ নীতিমালা বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন করতে হবে। এ-সংক্রান্ত অভিযোগ সংগ্রহে অভিযোগ বক্স রাখতে হবে প্রতিষ্ঠানে। নিয়মিত সভার মাধ্যমে এসব অভিযোগের মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রতি ছয় মাস অন্তত একবার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে র্যাগিং উত্তরণে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-ওয়ার্কশপের আয়োজন করতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। যেসব স্থানে র্যাগিং বা বুলিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে, প্রয়োজনে সেসব স্থান সিসিটিভির আওতায় আনা হবে। এর কুফল সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করতে শিক্ষাবর্ষের শুরুতে এক দিন অ্যান্টি বুলিং ডে পালন করতে হবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে। সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ পাবেন কয়েকজন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে সাইকোলজিস্ট। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের সহপাঠ কার্যক্রমে বুলিংবিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এমন অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে র্যাগিং কিংবা বুলিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে তা ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা পরিপন্থী হবে এবং তা শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা র্যাগিং কর্মকান্ডে জড়িত থাকলে কারণ দর্শানো সাপেক্ষে তাদের এমপিও স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বাতিল করা যাবে। স্থায়ীভাবে বরখাস্তও হতে পারেন অভিযুক্তরা। উপযুক্ত কারণ দর্শানো সাপেক্ষে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে অপসারণ বা বরখাস্ত করা যাবে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় ফৌজদারি মামলা করা যাবে তাদের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে অভিযোগের ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী অভিযুক্তকে সাময়িক বা স্থায়ী বহিষ্কার করা যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকলে তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সদস্যপদ থেকে অপসারণ করা যাবে। এমনকি সংশ্লিষ্ট কমিটিও বাতিল হয়ে যেতে পারে।
সূত্র জানান, এ নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে নীতিমালা জারি করা হলে তা স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়- সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে।