চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১২ ফুট লম্বা একটি অজগর সাপ। আজ মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে সোশ্যাল রিসার্চ সেন্টার থেকে সাপটি উদ্ধার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বন্যপ্রাণী শাখার মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং ভেনম রিসার্চ সেন্টারের শিক্ষানবিশ গবেষক রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এটি বার্মিজ পাইথন প্রজাতির সাপ। সাপটি রোধ পোহাতে কিংবা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসতে পারে বলে ধারণা করছি। আমরা উদ্ধার করে বায়োলজি ফ্যাকাল্টির পাশে গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, দুপুর দুইটার দিকে সোশ্যাল রিসার্চ সেন্টারের গ্রীলের সাথে সাপটি পেঁচিয়ে ছিল। তবে, এ সময় সব কিছু ছিল বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসে সাপটি উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়।
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, বার্মিজ অজগর (Burmese python) সাধারণ অজগর (Rock Python) বা ময়াল সাপের চেয়ে তুলনামূলক ভারী। সুন্দরবনে এই প্রজাতির অজগরের আধিক্য বেশি। নির্বিষ এই সাপটি নিশাচর ও খুবই অলস প্রকৃতির, প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা নড়াচড়া করে না। এই প্রজাতিটি একাকী বাস করলেও শুধু প্রজননকালে জোড়া বাঁধে। সাধারণত মার্চ থেকে জুনের মধ্যে এদের প্রজননকাল। দেশের ম্যানগ্রোভ বন, ঘাসযুক্ত জমি, চট্টগ্রাম ও সিলেটের চিরসবুজ পাহাড়ি বনে এদের দেখা পাওয়া যায়। সাপটি সাধারণত মানুষের ক্ষতি করে না। খাদ্য হিসেবে এরা সাধারণত ইঁদুর, মুরগি, শূকর, শিয়ালসহ ছোট থেকে বড় আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী, সরীসৃপ প্রাণী ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এটি নিজের আকারের চেয়েও অনেক বড় প্রাণী খুব সহজেই গিলে খেতে পারে।
তিনি বলেন, চামড়ার জন্য সাপটি পাচারকারীদের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ফলে আমাদের বনাঞ্চল থেকে এটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-২ অনুযায়ী এ বন্যপ্রাণীটি সংরক্ষিত, তাই এটি হত্যা বা এর যে কোনো ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
সম্প্রতি অজগর লোকালয়ে চলে আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাহাড় ও বন উজাড় হওয়ার কারণে সাপের আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে তাদের খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই খাবারের সন্ধানে সাপগুলো লোকালয়ে আসছে।