সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে রেজিস্ট্রারসহ ২২ শিক্ষক–কর্মচারীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে গতকাল রোববার বিকেল ৪টা থেকে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ সোমবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের পেছন গেট দিয়ে ৭ শিক্ষক-কর্মকর্তা বাইরে বের হয়ে গেছেন।
বিষয়টি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও তদন্ত কমিটির সভাপতি লায়লা ফেরদৌস হিমেল নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারসহ আমরা ২২ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা বিকেল ৪টা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত একাডেমিক ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে আছি। আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা বিষয়টি বুঝতে চাইছে না।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু সিন্ডিকেট সভায় সদস্যরা তদন্ত প্রতিবেদন খুলেছেন এবং আমার জানা মতে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই এ বিষয়ে বলার অবকাশ নেই। তবে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে গণমাধ্যমকে কেউ কিছু বলেনি।’
অবরুদ্ধ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনে মহাসড়ক অবরোধ শেষে আমাদের প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমরা বাইরে বের হতে পারছি না। ফলে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারছি না।’
জানতে চাইলে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী আবু জাফর হোসাইন বলেন, ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তারা শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চায় না। তারা শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে রক্ষায় নানা অজুহাতে লুকোচুরি খেলছে। শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলেই আমরা আবারও ক্লাসে ফিরে যাবো। পরীক্ষায় অংশ নেবো। ’
‘অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সিন্ডিকেট সভা মুলতবি করে আমাদের অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। ফলে আমাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেকেই হাত কেটে ও বিষপানে আত্মাহুতির চেষ্টা করেছে’, যোগ করেন এই শিক্ষার্থী।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অনশন ভেঙে আন্দোলন চলমান রেখেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ভেতরে ২৯ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে। তাদের মধ্যে ৭ শিক্ষক-কর্মকর্তা সোমবার সকালে প্রশাসনিক ভবনের পেছন গেট দিয়ে বের হয়ে যান। ’
অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন স্থগিত করার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান আবু জাফর। একই সঙ্গে মহাসড়ক অবরোধকালে ছাত্রলীগ নেতা শাহীনের অতর্কিতে চড়াও হওয়ার ঘটনারও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মারুফ হোসেন সুনাম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে চড়াও হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা দলের কোনো সিদ্ধান্ত না। শাহীন ব্যক্তিগতভাগে এ কাজ করে থাকতে পারেন। অচিরেই দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।’