ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানে নির্মাণ হবে ৯৭ ভবন

প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা মূলত মাস্টারপ্ল্যান হিসেবে পরিচিতি, যার মধ্যে সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। দেশের সর্বোচ্চ ও স্বায়ত্তশাসিত সরকারি বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উন্নয়নের বিভিন্ন পরিকল্পনা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছিল না।

যে কারণে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অবকাঠামো। তাই শতবর্ষ সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নেওয়া হয়েছে মাস্টারপ্ল্যান। যা বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক চিত্র।

মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে প্রতিবেদনের এ পর্বে থাকছে অবকাঠামোগত উন্নয়নের সামগ্রিক পরিকল্পনা। মাস্টারপ্ল্যানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী এটির চূড়ান্ত মতামত দিলে বাস্তবায়ন শুরু হবে।

মাস্টারপ্ল্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিন ধাপে ৯৭টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একাডেমিক ভবন থাকবে ১৭টি, ছাত্রী হল ৮টি, ছাত্রদের ১৬টি, ২২ টি হাউজ টিউটর ভবন, শিক্ষক ও অফিসারদের জন্য ১২টি, স্টাফদের জন্য ৯টি। অন্য ক্যাটগরিতে থাকছে ১৩টি ভবন।

একাডেমিক ভবন:
প্রথম ধাপে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির হেরিটেজ অংশ সংরক্ষণ করে ১২ ও ৬ তলা ভবন, আইএসআরটি ও ফার্মেসি বিভাগের স্থলে ১০ তলা ভবন, বোটানি ডিপার্টমেন্টের জন্য তিনতলা ভবন, চারুকলায় ভাস্কর্য বিভাগ, সিরামিকস, গ্রাফিক ডিজাইন, ইতিহাস ভবন ও টিচার্স লাউঞ্জ ভেঙে ৫ তলা ভবন, বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে দশতলা শহীদ খাজা নিজামুদ্দীন ভূইয়া এমবিএ টাওয়ার, নীলক্ষেতের প্রেস ভবন ও পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে ১১ তলা একাডেমিক ভবন ও ৫ তলা প্রেস ভবন করা হবে।

দ্বিতীয় ধাপে কাজী মোতাহার হোসেন ভবন ভেঙে ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন (ব্লক ১, ২ ও ৩) ও ২ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন (ব্লক ৪) করা হবে। বর্তমানে ২ তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান লাইব্রেরি ভেঙে ৬ তলা বিশিষ্ট লাইব্রেরি ভবন ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন ভেঙে ৩ তলা ভবন।

তৃতীয় ধাপে সোশ্যাল ওয়েলফোর ইনিস্টিটিউটে ১০ তলা একাডেমিক ভবন, বর্তমান আইবিএ ভবন ভেঙে ১২ তলা ভবন, গ্রীণরোড়ের টিনশেড স্কোয়াড ভেঙে ১০ তলা (ব্লক ১)ও ৫ তলা (ব্লক ২) ভবন করা হবে এবং আইবিএ হোস্টেল ভেঙে ১০ তলা (ব্লক ১) ও ৬ তলা (ব্লক ২) একাডেমিক ভবন। পরমাণু কমিশনে ১৫ তলা (ব্লক ১) ও ৩ তলা (ব্লক ২) বঙ্গবন্ধু পিস অ্যিান্ড লিবার্টি ইনস্টিটিউট করা হবে। হাজারীবাগে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩ তলা ভবন ভেঙে ১০, ৪ ও ৬ তলা একাডেমিক ভবন।

ছাত্রীদের জন্য
প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হবে নিউমার্কেট এলাকায় শাহনেওয়াজ হোস্টেলের জায়গায় ১৫ তলা জয়বাংলা হল, ১১ তলা হাউজটিউটর ভবন, শামসুন নাহার হলে হাউজ টিউটর ও গ্যারেজ ভেঙে ১০ তলা ও ৬ তলা ভবন এবং ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন (২০ ইউনিট), শহীদ অ্যাথলেট সুলতানা কামাল হোস্টেলের এক্সটেনশন হিসেবে ১১ ও ৮ তলা ভবন এবং ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে প্রভোস্ট, হাউজ টিউটর ও সিকদার মনোয়ার ভবন ভেঙে ১০ তলা ভবন এবং ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন।

দ্বিতীয় ধাপে নবাব ফৈজুন্নেসা ছাত্রী নিবাসে ১০ তলা বিশিষ্ট এক্সটেনশন ভবন করা হবে ইশা খান আবাসিক এলাকার ৮৭ নম্বর ভবন ভেঙে। ইশা খান আবাসিক এলাকার ৩১ নম্বর ভবন ভেঙে দুই তলা বিশিষ্ট ছাত্রীদের জিমনেসিয়াম করা হবে।

তৃতীয় ধাপে ছাত্রীদের জন্য গ্রিনরোড়ে টিনশেড ভেঙে ১২ তলা (ব্লক ১), ৬ তলা (ব্লক ২), ৪ তলা (ব্লক ৩) ও ৩ তলা (ব্লক ৪) হল করা হবে। একই সঙ্গে ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন করা হবে। রোকেয়া হলের চামেলী ভবন, প্রভোস্ট বাংলো, টিচার্স কোয়ার্টার ভেঙে ১০ তলা (ব্লক ১) ও ৮ তলা (ব্লক-২) ভবন, ১ তলা বিশিষ্ট লাইব্রেরি ভবন ভেঙে ১১ তলা হিাউজ টিউটর ভবন, কবি সুফিয়া কামাল হলের এক্সটেনশন হিসেবে রেলওয়ের নিকটে দশতলা বিশিষ্ট ভবন, ৬ তলা হাউজ টিউটর ভবন (১০ ইউনিট)।

ছাত্রদের জন্য
প্রথম ধাপে নির্মাণ করা হবে শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হল হলে ১২ ও ৮ তলা ভবন এবং ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন, সূর্য সেন হলের উত্তর ব্লক ভেঙে ১১ তলা ভবন, হাউজ টিউটর ভবন ভেঙে ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন নির্মাণ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে শহীদ আতাউর রহমান খাদিম ভবন ও ক্যাফেটেরিয়া ভেঙে ১৫ তলা ও ৬ তলা ভবন এবং প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন।

দ্বিতীয় ধাপে ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে ১২ তলা ভবন, ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলে বর্তমান মেইন বিল্ডিং এ ১৫ তলা ভবন (ব্লক ১,২) ও চার তলা ভবন (ব্লক ৩) এবং হল অডিটোরিয়াম ভবন ভেঙে ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন করা হবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের টিনশেড ভেঙে ১২ তলা (ব্লক ১) ও ১ তলা ভবন ভেঙে ৬ তলা (ব্লক ২) ভবন করা হবে এবং বর্তমান হাউজ টিউটর ভবন ভেঙে ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন করা হবে।

স্যার এ এফ রহমান হলের ক্যান্টিন ও প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে ১২ তলা (ব্লক ১) ও ৬ তলা (ব্লক-২) ভবন করা হবে। বর্তমান হাউজ টিউটর ভবন ভেঙ্গ ১১ তলা করা হবে। সূর্য সেন হলের মেইন বিল্ডিং ভেঙে ৬ ও ৪ তলা ভবন এবং ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন করা হবে। পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল ১০ তলা (ব্লক ১) ও ৪ তলা (ব্লক ২) ভবন নির্মাণ করা হবে।

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য হাজারীবাগে ড. কুদরত ই খোদ হলে ১০ তলা (ব্লক ১), ৮ তলা (ব্লক ২) ও ৫ তলা (ব্লক৩) ভবন নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে কেয়া ভবন ভেঙে ১১ তলা হাউজ টিউটর ভবন করা হবে।

তৃতীয় ধাপে কবি জসীম উদ্‌দীন হলের মেইন বিল্ডিং ভেঙে ১১ তলা (ব্লক ১), ৫ তলা (ব্লক ২), ৪ তলা (ব্লক ৩) ও ৩ তলা (ব্লক ৪)ভবন এবং ১১ তলাবিশিষ্ট হাউজ টিউটর ভবন করা হবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৬ তলা (ব্লক ১) ও ৪ তলা (ব্লক) এবং ৬ তলা বিশিষ্ট হাউজ টিউটর ভবন করা হবে। গ্রিন রোড়ে ৮ তলা (ব্লক ১) ও ৩ তলা (ব্লক ২) বিশিষ্ট ছাত্রদের ভবন, শহীদুল্লাহ হলে ৬ তলা বিশিষ্ট হাউজ টিউটর ভবন

শিক্ষকদের জন্য:
সূর্য সেন হল ও মুহসীন হল প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে দুই তলা বিশিষ্ট প্রো-ভিসি বাংলো নির্মাণ করা হবে। দক্ষিণ ফুলার রোড়ের শিক্ষকদের ১২ ও ১৩ নং ভবন ভেঙে ১৫ তলা (১১২ ইউনিট) রেসিডেন্সিয়াল টাওয়ার ও ধানমন্ডিতে ৭ তলা (২৪ ফ্ল্যাট) ব্যাচেলর টিচারদের জন্য ভবন।

দ্বিতীয় ধাপে বর্তমান প্রভোস্ট কমপ্লেক্সে ১০ তলা ভবন ও ইন্টারন্যাশনাল হলের পাশে রশিদুল হাসান ভবন ভেঙে দশ তলা প্রভোস্ট কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে। দক্ষিণ ফুলার রোডের ১১, ৫৮ ও ১৫, ১৬, ১৭ নম্বর ভবন ভেঙে ১৫ তলা বিশিষ্ট(প্রতি ভবন ১১২ ইউনিটের) দুটি ভবন শিক্ষকদের রেসিডেন্সিয়াল টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।

স্টাফদের জন্য:
মাস্টারপ্ল্যানের দ্বিতীয় ধাপে বর্তমান আজিমপুরে বটতলায় অবস্থিত ৪, ৫ ও ৭ নং ভবন ভেঙে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা (১৫২ ইউনিট) ভবন করা হবে। একই এলাকার ৪২ ও ৪৩ নম্বর ভবন ভেঙে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা (১৫২ ইউনিটের) ভবন করা হবে।

নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ২২, ২৬, ও ২৭ এবং ২৪, ২৫ নম্বর ভবন ভেঙে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ১২ তলা করে (৮৮ ইউনিটের) দু’টি ভবন নির্মাণ করা হবে। দক্ষিণ নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ৫৪ ও ৭৫ নং ভবন ভেঙে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ১২ তলা (৮৮ ইউনিটের) ভবন করা হবে।

তৃতীয় ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য হাজারীবাগে দু’টি (দশতলা) সর্বমোট ৭২ ইউনিটের ভবন করা হবে। দক্ষিণ নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ৪০, ৪১ ও ৮৪ নম্বর ভবন ভেঙে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর জন্য ১২ তলা ৮৮ ইউনিটের ভবন করা হবে। একই এলাকার ৬০, ৬৮, ৭১,৭২ ও ৭৩ নম্বর ভবন ভেঙে চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারীদের জন্য অনুরূপ ভবন করা হবে। গ্রিনরোডে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ১০ তলা ৩৬ ইউনিটের ভবন করা হবে।

এছাড়া প্রথম ধাপে বর্তমান মেডিক্যাল সেন্টারটি পাশে খালি জায়গায় (উত্তর-পূর্ব) ৬ তলা মেডিক্যাল সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ ভেঙে চারতলা বিশিষ্ট মসজিদুল জামিয়া কমপ্লেক্স, ডাকসু ভবন ভেঙে ১২ তলা আধুনিক বিল্ডিং, বর্তমান প্রশাসনিক ভবনের উত্তর-পশ্চিম ব্লক ভেঙে ২০ তলা বিশিষ্ট ভবন এবং দক্ষিণ অংশ ভেঙে ভিসি-প্রোভিসি দ্বয় ও কোষাধ্যক্ষের অফিস করা হবে। জিমনেসিয়াম ভবন।

দ্বিতীয় ধাপে নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ২৪ নম্বর ভবন ভেঙে ৪ তলা বিশিষ্ট অফিসার ক্লাব করা হবে। জগন্নাথ হলের অক্টোবর স্মৃতি ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব কর্নারে ২ তলা বিশিষ্ট জাদুঘর করা হবে।

তৃতীয় ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্লাব ভেঙে দশ তলা (ব্লক ১) ও তিন তলা (ব্লক ২) ভবন নির্মাণ করা হবে। গ্রিন সুপার মার্কেটে দশতলা বাণিজ্যিক ভবন, গ্রিন রোড়ে দুই তলা মসজিদ, দক্ষিণ নীলক্ষেত আবাসিক এলাকায় তিন তলা মসজিদ, শহদি সার্জেন্টে জহরুল হক হল ও দক্ষিণ নীলক্ষেত আবাসিক এলাকার ৪৫ নম্বর ভবন ভেঙে চার তলা বিশিষ্ট পার্কিং ভবন করা হবে। যেখানে তিনশ গাড়ি পার্ক করা যাবে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর (শিক্ষা) ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলমান। বর্তমানে এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায়। এটি বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও অবকাঠামোগত পরিবর্তন আসবে। শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।

Scroll to Top