বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে দেওয়া শুরু করেছে সরকার। কিন্তু শিক্ষকদের তথ্য সংশোধন, ডাটাবেজে এন্ট্রি না হওয়া, এন্ট্রির পরও অনুমোদনের অপেক্ষা এবং ইএফটির আদেশ না পাওয়ায় এ সেবার মাধ্যমে বেতন পাচ্ছেন না প্রাথমিকের ২ লাখ ২৮ হাজার ৮৪ জন শিক্ষক।
সম্প্রতি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব (প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ অ্যান্ড কো- অডিনেটর, এসপিএফএসএম প্রোগ্রাম) বিলকিস জাহান রিমির সই করা এক চিঠি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা চলতি বছরের মার্চ থেকে অনলাইনে দাখিল এবং নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে ইএইফটির মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। সরকার আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে সুসংহত করতে আইবাস প্লাস প্লাস (iBAS ++) এর অধীনে দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন দেওয়া শুরু করেছে।
ইএফটির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন পাওয়া নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ মার্চ আইবাস প্লাস প্লাস থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬৫ জন। এর মধ্যে ৮১ হাজার ৯৪৬ জন শিক্ষক নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের বিপরীতে বেতন নির্ধারণ না করায় সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিসের সহায়তায় তাদের তথ্য সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে। অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১ থেকে গত ৭ মার্চ চিঠি দিয়ে হিসাব মহানিয়ন্ত্রককে এ বিষয়ে সহায়তা করার অনুরোধ করা হয়েছে।
বাকি ৩ লাখ ৬২ হাজার ৪১৯ শিক্ষকের মধ্যে আইবাসের এমপ্লয়ি ডাটাবেজে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৭ শিক্ষকের তথ্য এন্ট্রি হয়েছে, যাদের মধ্যে ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৪৪ জন শিক্ষকের তথ্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা-থানা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে অনুমোদন করা হয়েছে এবং এন্ট্রি করা ৬৭ হাজার ৮৫৩ জন শিক্ষকের তথ্য অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বাকি ৮ হাজার ৪২২ জন শিক্ষকের তথ্য এখন পর্যন্ত ডাটাবেজে এন্ট্রি হয়নি। অনুমোদন পাওয়া ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৪৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৫২ জন শিক্ষকের ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা ইএফটির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে এবং ৬৯ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষকের বেতন-ভাতার ইএফটি আদেশ এখনও অপেক্ষমান রয়েছে।
আর ৩ হাজার ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো গেজেট-প্রজ্ঞাপন-বিজ্ঞপ্তি না থাকায় এসব বিদ্যালয়ের নাম আইবাস প্লাস প্লাসে অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি। ফলে, এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন ভাতা পেতে জটিলতার সম্মুখীন হবেন।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ইএফটির মাধ্যমে পাঠানোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি অনুরোধপত্র পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, ৮১ হাজার ৮১৭ জন শিক্ষক যাদের বেতন নির্ধারণ নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের বিপরীতে না হয়ে ‘বিদ্যালয়সমূহ’ গ্রুপে এন্ট্রি হয়েছে, সেখানে সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিসের সহায়তায় তাদের তথ্য সংশোধন করে নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ভিত্তিক এন্ট্রি করা প্রয়োজন। এমপ্লয়ি ডাটাবেজে অনুমোদনের অপেক্ষমান ৬৭ হাজার ৮৫৩ জন শিক্ষকের তথ্য অনুমোদনের ব্যবস্থা করা, ৮ হাজার ৪২২ জন শিক্ষক যাদের তথ্য এখন পর্যন্ত ডাটাবেজে এন্ট্রি হয়নি, সংশ্লিষ্ট উপজেলা-থানা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে তাদের তথ্য এন্ট্রির ব্যবস্থা করা। ৬৯ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষক যারা ইএফটি ট্রান্সমিটের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে সেসব শিক্ষকের ইএফটির ব্যবস্থা করা।
এছাড়াও যেসব বিদ্যালয়ের নাম আইবাস প্লাস প্লাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি তাদের সেসব নামের তালিকা গেজেট-প্রজ্ঞাপন-বিজ্ঞপ্তিসহ পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে ইএফটির মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিতে কর্মপরিকল্পনা শুরু করে সরকার। এ লক্ষ্যে গত বছর ৭ ডিসেম্বর উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারদের তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেয়। এরপর গত ৭ জানুয়ারি অধিদফতরের সকল পরিচালক, সকল আঞ্চলিক পরিচালক, উপপরিচালক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, সকল অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। চার দফায় ইএফটির মাধ্যমে বেতন দেওয়া শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। ইএফটিতে বেতন দিতে গিয়ে প্রায় তিন হাজার শিক্ষকের নামের বানান জটিলতার কারণে বেতন আটকে যায়। সেগুলো সংশোধনের কাজ চলছে।
চলমান কার্যক্রমের আওতায় সব শিক্ষককে ইএফটির আওতায় আনতে নামের বানান, এনআইডির সঙ্গে নামের মিল না থাকা এবং আগে ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ের গেজেট/প্রজ্ঞাপন খুঁজে না পাওয়ায় আইবাস প্লাস প্লাসে শিক্ষকদের তথ্য এন্ট্রিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে যেসব উপজেলায় ইএফটি হয়নি তাদের বেতন আটকায়নি, কিন্তু ইএফটি হয়ে গেলে বেতন আটকে যাবে।