গেরুয়া এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। আজ শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এ সময় ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারসহ তিন দফা দাবিতে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
সেখানে তারা হল খুলে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। কিন্তু তাদের আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো সাড়া না পাওয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলের ফটকের তালা ভেঙে হলের ভেতর প্রবেশ করছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি মিছিল আল-বেরুনী হল ও ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে পৌঁছায়। এরপর শিক্ষার্থীরা হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এরপর বেগম খালেদা জিয়া হল, জাহানারা ইমাম হল, শেখ হাসিনা হল, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়, এখণ থেকে তারা হলেই থাকবেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বাকি হলগুলোর সামনে অবস্থান নিয়ে হলে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, উপাচার্যের নিরাপত্তা জোরদার করতে তার বাসভবনের গেটের সামনে অবস্থানে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও পুলিশ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে হওয়া মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করতে শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে হলগুলো না খোলা হলে তারা কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
শুক্রবার ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় ও শিক্ষার্থীদের বেশকিছু দোকান ভাঙচুর করে।
খবর পেয়ে আশপাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বেশকিছু দোকান ভাঙচুর করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক মাহবুব বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৪০-৪৫ জন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের অধিকাংশেরই মাথা, হাত, পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১০ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ঘটনার সময় ‘ক্যাম্পাসের বাইরের শিক্ষার্থীর দায়িত্ব আমি নেব না’ বলে জানিয়ে দেন। একই সুরে কথা বলেন উপচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে আমার প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মীদের কিছু করার নেই।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নয়।