ভয়ঙ্কর সুইসাইড গেম ব্লু হোয়েলের বিভিন্ন ধাপে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আরও চার শিক্ষার্থীর খোঁজ মিলেছে। এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিলেও আসক্ত শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নন চবি কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ। এ প্রসঙ্গে চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্টার ড. কামরুল হুদা বলেন, ব্লু-হোয়েল সুসাইড গেম। ন্যাক্কারজনক এ গেমে জড়িতদের নাম প্রকাশে সহপাঠিও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে পারে। শুধু তাই নয়, এই সুসাইড গেম সম্পর্কে জানতে অজানা শিক্ষার্থীরাও কৌতুহলী হয়ে আসক্ত শিক্ষার্থীদের কাছে যাবে।
তিনি জানান, ব্লু-হোয়েল গেমে আসক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৪ শিক্ষার্থীর সন্ধান মিলেছে। তাদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ পুলিশকে অবগত করেছে। তবে তাদের নাম কোনোভাবেই প্রকাশ করা যাবে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ব্লু-হোয়েল গেমে আসক্ত হওয়ার বিষয়টি গত বুধবার সাংবাদিকদের জানান চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মসিউদ্দৌলা রেজা। তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর এ বিষয়ে কোন শিক্ষার্থীও মুখ খুলছে না।
তবে এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মুখ চাওয়া-চাওয়ি (সন্দেহ) বেড়ে গেছে বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী আলাপকালে জানান।
আজ বৃহস্পতিবার সরজমিনে দেখা যায়, চবি ক্যাম্পাসে ঘুরাফেরার সময় এক শিক্ষার্থী আরেক শিক্ষার্থীকে বলছে-এই তুই কত ধাপে আছিস’। আবার কোন কোন শিক্ষার্থী তার দিকে তাকানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন- এই আমার দিকে তাকালি কেন?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী ফাহিম জানান, ব্লু-হোয়েলে আসক্ত ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার আগে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মুখে এ বিষয়ে শুনেছি। এরা তখন কে কত ধাপে ছিল তা বলাবলি করত। তবে তাদের কেউ এখনো বিপদজ্জনক পরিস্থিতিতে যায়নি বলে মনে হয়।
তিনি আরও বলেন, যে শিক্ষার্থী ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীর বিষয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছে, সে নিজেও এ খেলা খেলেছে। আমি তাকে চিনি। তবে সে এলার্ট। সে ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠিও। একই অনুষদে পড়েন তারা। বন্ধুর বিপদ দেখে তিনি পুলিশকে খবর দেন।
ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর ব্লু-হোয়েল আসক্তরা এখন নিজেদের আড়াল করছেন বলে জানান ফাহিম। এ ব্যাপারে কথা হয় চবি’র শাহ আমানত হলের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন বাবরের সাথে। তিনি বলেন, এ গেম আমিও চার ধাপ পর্যন্ত খেলেছি। তবে সতর্কভাবে। গেমের এডমিনরা আমাকে যা করতে বলেছে তা না করে উত্তর দেওয়ায় আমাকে নট এলাউড করেছে।
সোহরাওয়ার্দী হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এ গেমের ১৩ ধাপ পর্যন্ত আমি খেলেছি। এতে ৫০ ধাপ পর্যন্ত আছে। প্রতিটি ধাপে অনুভুতি যাচাই করে সঠিক উত্তর পেলেই পরবর্তী ধাপ খেলা যায়। এ গেমের প্রতিটি ধাপই বিপদজ্জনক। এই গেমের শেষ ধাপে আত্মহত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়।
গেম খেলা কয়েকজন শিক্ষার্থী অনুভুতি প্রকাশ করে বলেন, এ গেমে যারা আসক্ত তারা অন্যমনস্ক। ধাপগুলোতে হাত পা কাটার মতো বিপজ্জনক কাজও আছে। শুধু কাজ করলেই হয় না। উপযুক্ত প্রমাণ হিসাবে ছবিও তুলতে হয়। তবেই চ্যালেঞ্জ পূর্ণ হয়েছে বলে ধরা হবে। এ থেকে গেমে আসক্তিদের সহজে শনাক্ত করা সম্ভব। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আখতারুজ্জামান বলেন, ব্লু-হোয়েলে আসক্ত খবর পেয়ে চবির এক শিক্ষার্থীকে আমরা কাউন্সেলিং করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধমে আরও চার শিক্ষার্থী এ গেমে আসক্তির খবর পেয়েছি। তাদের প্রতি আমাদের নজরদারি রয়েছে। সূত্র- মানবজমিন
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, ১২ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ